মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ কিশোর-কিশোরী মারা যাচ্ছে -হু’র প্রতিবেদন

১৬ মে, সিএনএন : বিশ্বে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ৩ হাজার কিশোর-কিশোরী। এ হিসেবে প্রতিবছর ১ কোটি ২০ লাখের অধিক কিশোর-কিশোরী মারা যাচ্ছে। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
এই অকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। তার সঙ্গে আছে শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা,  পানিতে ডুবে মরা,  অযতœ-অবহেলা ও নানারকম রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে,  এই অকাল মৃত্যুর বেশির ভাগই প্রতিরোধ সম্ভব।
এই মৃতুর হার  সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অকাল মৃত্যু হয় দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকায়। বয়স,  লিঙ্গ আর ধর্মীয় পরিচয় অনুসারে এই মৃত্যুর হারে তারতম্য আছে।
১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরী মারা যায় সড়ক দুর্ঘটনায়,  পানিতে ডুবে এবং নানারকম রোগে। তবে বয়স বাড়তে থাকলে ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে তার সাথে যুক্ত হয় নিজের সাথে অবহেলা। পরিবার থেকে কোনো সহযোগিতা না পেয়ে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলায় অনেকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে,  শিক্ষা,  পারিবারিক আর সামাজিক যতœ ও সেবার পরিমাণ বাড়িয়ে এই অকাল মৃত্যুর হার অনেক কমানো সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. ফ্ল্যাভিয়া বুস্ট্রিও জানিয়েছেন,  কয়েক দশক ধরে কিছু দেশে কিশোর-কিশোরীদের যতœ সম্পর্কে একেবারেই কোনো সচেতন পরিকল্পনা নেই। তাদের সেবার জন্য খুব অল্প পরিমাণ অর্থই বরাদ্দ থাকে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটা খুবই ক্ষতিকর হবে।
এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না পাওয়া,  শারীরিক অনুশীলন না করা এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ তাদের অকাল মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এমন কি,  শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিশোর-কিশোরীদের উপর যৌন নির্যাতনও হয়। কিশোরীদের উপর যৌন নির্যাতনের হার আশংকাজনক হারে বাড়ছে। তাতে তাদের অনেকে গর্ভবতীও হয়ে যাচ্ছে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক কিশোরীকে বাল্যবিবাহের শিকার হতে হচ্ছে। অল্প বয়সে মা হয়ে যাওয়ার কারণে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী অনেক কিশোরী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে মা ও শিশু মারা যাচ্ছে।
আফ্রিকার দেশগুলোর আরো এক ভয়াবহ চিত্র উপস্থাপন করছে প্রতিবেদনটি। অফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অনেক কিশোরী যৌনকর্মী। হয় তারা অভাব-অনটনে পড়ে এ কাজে এসেছে অথবা তাদের জোর করে ধরে আনা হয়েছে। এবং তাদের কোনো স্বাস্থ্যের যতœ নেই। ফলে তারা অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছে মারাত্মক সব রোগে। শুধু তারা নিজেরাই যে আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়,  তাদের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ছে পুরুষদের মাঝেও। আফ্রিকার দেশগুলোতে ভয়াবহ এইডস রোগ ছড়াচ্ছে এ কারণে। এসব দেশে কিশোর-কিশোরীদের পর্যাপ্ত শিক্ষা নেই। অনেকেই প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। নিজের শক্তি-সামর্থের চেয়ে অধিক পরিশ্রমের কাজ করে। খুব অল্প বয়সেই তারা কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয় আর বাধ্য হয় অকাল মৃত্যুবরণ করতে।
প্রতিবেদনটিতে প্রকাশিত হয়েছে অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো উন্নত দেশগুলোতেও অনেক কিশোর-কিশোরী নানা মানসিক নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি কিশোর-কিশোরীদের উপর শারীরিক নির্যাতন বাড়ছে। বাবা-মা বিচ্ছেদও কিশোরী-কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। পারিবারিক অশান্তির কারণে অনেক কিশোর-কিশোরী বাধ্য হচ্ছে ভুল পথে যেতে। তারা নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং লিপ্ত হচ্ছে অনেক অসামাজিক কাজে।
নানারকম সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও কিশোর-কিশোরীদের মৃত্যুর হার বাড়ার অন্যতম কারণ। সেভ দ্য চিলড্রেনের সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়,  সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধপরিস্থির কারণে গত বছরগুলোতে কিশোর-কিশোরীর মৃত্যুর হার বেড়েছে আশংকাজনক হারে। শুধু মৃত্যুর হার নয়,  কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বাড়ছে মানসিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকির হার। যার ফলে তাদের ভবিষ্যত হয়ে পড়ছে অনিশ্চিত।
লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক ড . সোনিয়া সেক্সেনা,  কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে যিনি একজন অন্যতম গবেষক,  তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটির সঙ্গে যুক্ত নেই,  নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সিএনএনকে জানিয়েছেন,  বর্তমান পৃথিবীতে  বেশির  কিশোরী-কিশোরী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য কোনোকিছুই ভালো নেই। তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নেই।  তারাই পৃথিবীর সম্পদ। আমরা যদি এখনই তাদের যতœ নিতে না পারি তাহলে ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য তা খুব ক্ষতিকর হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ