বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে বাংলাদেশ?

-মাহাথির মোহাম্মদ কৌশিক
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল এখন ধারাবাহিকতা ধরে রাখছে। সে কারণে র‌্যাংকিংয়ে খুব বেশি উঠানামাও হয়নি। এই না হওয়াতেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ‘আমরা যদি সামনের ম্যাচগুলো খুব খারাপ না করি, তাহলে সেরা আটের মধ্যে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারব।’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। আয়ারল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ যদি ভাল করতে পারে এবং সেই ধারাবাহিকতা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও থাকে তাহলেই বাংলাদেশ দল সরাসরি বিশ্বকাপে খেলবে। সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বলই আছে বাংলাদেশের।
সম্প্রতি আইসিসি নতুন র‌্যাঙ্কিং ঘোষণা করেছে। যে র‌্যাঙ্কিকংয়ে বাংলাদেশের ভা-ার থেকে ১ পয়েন্ট কমেছে। তবে তাতে সাত নম্বর র‌্যাঙ্কিং থেকে পেছনে পড়ে যায়নি বাংলাদেশ। সাত নম্বরেই আছে। ২০১৪ সালের ১ মে থেকে ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দলগুলো যে ম্যাচ খেলেছে তার ওপর ভিত্তি করে এবং ২০১৬ সালের ১ মে থেকে এখন পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোর ওপর ভিত্তি করে র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট করা হয়েছে। তাতে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোর ৫০ ভাগ ও এরপর থেকে এখন পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোর ১০০ ভাগ সাফল্য-ব্যর্থতা ধরা হয়েছে। তাতে করে বাংলাদেশ ৯২ থেকে ৯১ পয়েন্টে আছে। র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বরেও আছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে অবশ্য খুব বেশি পার্থক্য কোন দলেরই হয়নি। তবে র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট এদিক ওদিক হয়েছে। পয়েন্টের এমন ওলট-পালটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচের দিকের দলগুলোই।
বিশেষ করে আটে থাকা পাকিস্তান ও নয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষতি হয়েছে। পাকিস্তানের দুই পয়েন্ট কমে ৮৮ পয়েন্ট হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪ পয়েন্ট করে ৭৯ পয়েন্ট হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট পার্থক্য ১২ পয়েন্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে আটটি দল র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে থাকবে তারাই সরাসরি ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলবে। সংশোধনী র‌্যাঙ্কিংয়ে আবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও রেটিং পয়েন্ট কমেছে। বাংলাদেশ থেকে ২ পয়েন্ট বেশি শ্রীলঙ্কার। তার মানে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে ওঠার সুযোগও বাংলাদেশের সামনে আছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ অবিস্মরণীয় সাফল্য পেয়েছিল ওয়ানডেতে। সেই সাফল্য এখনও ভাল অবস্থান ধরে রাখায় কাজে দিচ্ছে। বিসিবি’র সিইও বলেন, ‘আয়ারল্যান্ড ও পাকিস্তান সিরিজ (যদিও বাতিল হয়ে গেছে) নির্ধারিত আছে। ওই সিরিজের ম্যাচগুলো আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই ত্রিদেশীয় সিরিজে নিচের দিকের দল আয়ারল্যান্ড আছে। আর পাকিস্তানও আমাদের পেছনে রয়েছে। তাদের সঙ্গে ম্যাচ হারলে রেটিং পয়েন্ট অনেক কমে যাবে। সে হিসেবে এই দু’টি সিরিজে ভাল করতে হবে। আর পাকিস্তানকে ২-১ দিনের মধ্যে আমাদের প্রস্তাবিত সূচী পাঠাব। যেখানে টেস্ট, ওয়ানডে ও টোয়েন্টি-২০ থাকবে। তাদের উত্তরের জন্য আমরা অপেক্ষা করব। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের পরে পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে বাংলাদেশের ১২ পয়েন্টের মতো ব্যবধান আছে। তাই আমরা আশাবাদী (বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা নিয়ে)।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাই সেরা। অন্তত সাকিব আল হাসান তাই মনে করেন। তার দৃষ্টিতে এই দলটিই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা। কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে আইপিএলে খেলার সময় বাংলাদেশ টোয়েন্টি-২০ দলের অধিনায়ক সাকিব। কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ক্ষুদে ফরম্যাটে নিজেদের খেলার ধার বাড়ানোর সময় এসেছে এখন। সাকিবের কথায়, ‘আমাদের কয়েকজন ভালো ব্যাটসম্যান, পেসার এবং স্পিনার রয়েছে। আমি মনে করি, আমাদের এই দলটাই সেরা।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের ক্রিকেট সঠিক পথেই রয়েছে। গত দু’বছরে আমাদের পারফরম্যান্সই তার প্রমাণ।’ সদ্য টোয়েন্টি-২০ দলের নেতৃত্ব পাওয়া সাকিব নতুন দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘যে কোনো দায়িত্বই চ্যালেঞ্জের। এটা নির্ভর করে কিভাবে আপনি তা গ্রহণ করেন তার ওপর। এটা ঠিক যে, আমরা ভালো করছি। তবে আমাদের টোয়েন্টি-২০ রেকর্ড ভালো নয়। এই জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমি যখন ওয়ানডে কিংবা টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলাম, তখন আমাদের এ ধরনের অবস্থা ছিল।’ সাকিব বলেন, ‘আগে আমরা জিততে পারতাম না। এরপর ধীরে ধীরে জিততে শুরু করলাম। আর এখন তো নিয়মিতই জিতি। টোয়েন্টি-২০-তেও আমাদের লক্ষ্য সেই পর্যায়ে পৌঁছা।’ আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রুফি নিয়েও কথা বলেছেন সাকিব। জানিয়েছেন, কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। আট জাতির এই টুর্নামেন্টে এ- গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ‘আমার তো মনে হয়, আমাদের গ্রুপটা কঠিন। সব দলই ভালো। তবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড কঠিন প্রতিপক্ষ। দক্ষিণ আফ্রিকা সবসময় ভালো করে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো করার ব্যাপারে আমরা আত্মপ্রত্যয়ী। যাতে লোকে আমাদের খেলা মনে রাখে’, একটানা বলে যান সাকিব। আইপিএলে এবার কলকাতা নাইটরাইডার্সের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছেন এই অলরাউন্ডার। এ নিয়ে অবশ্য কোনো অনুযোগ নেই তার। আছেন সুযোগের অপেক্ষায়। সাকিবের মতে, ‘আমরা পেশাদার ক্রিকেটার। প্রত্যেক দলে সমন্বয়ের একটা ব্যাপার থাকে। প্রতিপক্ষের কথা মাথায় রেখে একাদশ সাজানো হয়। যারা একাদশে সুযোগ পায় না, তারা অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলে তা কাজে লাগাতে চায়। আমি সুযোগের অপেক্ষায় আছি।’
বাংলাদেশ যখন ভাল খেলে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার অপেক্ষায় রয়েছে তখন টালমাটাল ভারতের ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) দেশটির ক্ষমতা এখন শুধুই কমছে। দুবাইয়ে আইসিসি’র কার্যনির্বাহী সভায় পুরনো পরিকাঠামোকে ছুড়ে ফেলে সমতার ভিত্তিতে রাজস্ব বণ্টনের বিষয়ে যে নতুন অর্থনৈতিক মডেল উত্থাপন করা হয়েছিল, তা পাস হয়ে গেছে। রাহুমুক্ত হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি! বাতিল হয়ে গেল আইসিসি পরিচালনার বিষয়ে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের তৈরি করা ‘তিন মোড়ল’ তত্ত্ব। সংবিধান সংশোধন এবং নতুন অর্থনৈতিক মডেল নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। অবশেষে দুবাইয়ে আইসিসির কার্যনির্বাহী সভায় পুরনো পরিকাঠামোকে ছুড়ে ফেলে সমতার ভিত্তিতে রাজস্ব বণ্টনের বিষয়ে যে নতুন অর্থনৈতিক মডেল উত্থাপন করা হয়েছিল, তা পাস হয়ে গেছে। সভায় নতুন ফাইন্যান্সিয়াল মডেল পাস হয়েছে ৯-১ ভোটের ব্যবধানে। ভারতই শুধু একমাত্র দেশ, যারা এর বিরোধিতা করেছে। তাদের শত আপত্তির মুখেও শেষ পর্যন্ত নতুন প্রস্তাব পাস হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, সংবিধান সংশোধন করার যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল সেটাও পাস হয়ে গেছে ৮-২ ভোটের ব্যবধানে। এই প্রস্তাবে কেবল শ্রীলংকাকেই পাশে পেয়েছে ভারত। তবে ভোটাভোটির মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলো পাস হয়ে গেলেও এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত হবে জুনে আইসিসি’র বার্ষিক সাধারণ সভায়।
আইসিসির নতুন ফাইন্যান্সিয়াল মডেল অনুযায়ী প্রতিটি সদস্য দেশ সমতার ভিত্তিতে রাজস্বের ভাগ পাবে। সেটা হবে ২৯০ মিলিয়ন ডলার করে; কিন্তু ভারত এর বিরোধিতা করে রাজস্ব চেয়েছিল ৫৭০ মিলিয়ন ডলার।  যেটা তিন মোড়ল’ প্রস্তাবনায় ছিল। পরবর্তীতে ৪০০ মিলিয়ন ডলারে আইসিসি বিষয়টি দফারফা করতে চাইলেও তাতেও বেঁকে বসে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। নতুন প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়ায় এখন আর সেটাও পাচ্ছে না তারা, ২৯০ মিলিয়ন ডলার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আইসিসি’র নতুন গঠনতন্ত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে পূর্ণ সদস্য দেশের সহযোগী সদস্যের অবনমনের বিষয়টি।
প্রথম থেকেই বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলংকা এর বিরোধিতা করে আসছিল। তাদের আপত্তিতেই নতুন পরিচালনা কাঠামো থেকে এই ধারাটিকে বাদ দিয়েছে আইসিসি। এছাড়া ভোট বাড়ানোর প্রস্তাবের অনুমোদর দিয়েছে আইসিসি। আগে শুধুমাত্র ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ ভোট দিতে পারলেও এখন থেকে মোট ভোটের সংখ্যা হবে ১৫টি। নতুন আইনে ভোট দিতে পারবেন ৩টি সহযোগী দেশ, একজন স্বাধীন মহিলা পরিচালক এবং আইসিসির চেয়ারম্যান।
বর্তমানে ভারতীয় বোর্ডের কোনো সভাপতি না থাকায় আইসিসি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সেক্রেটারি অমিতাভ চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরী। তারা সভায় কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি। পূর্ণ সদস্য দেশগুলোকে নিজেদের পক্ষে টানার জোর চেষ্টা-তদবির চালিয়েছেন তারা। কিন্তু ভোটাভুটিতে গিয়ে দেখা গেল, তাদের সব চেষ্টা বৃথা। উল্টো ভোটাভুটিতে হেরে এখন আইসিসি’র সিদ্ধান্তকেই মেনে নিতে হচ্ছে বিসিসিআইকে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ