বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ভারতে কসাইয়ের জন্য গরু কেনাবেচা নিষিদ্ধ ॥ সিদ্ধান্ত সভ্যতা ভব্যতাহীন -কেরালার মুখ্যমন্ত্রী

২৭ মে, পার্স টুডে : ভারতের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে বলেছে জবাই করার জন্য গরু, মহিষ, ষাঁড়, বলদ, বা বাছুরের মতো পশু বাজারে বিক্রি করা যাবে না। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে পশুমেলায় গবাদিপশু কেনাবেচা হয়ে থাকে। সেই সব পশুর ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করতেই কেন্দ্রীয় সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে সিপিএম নেতা ও কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ওই সিদ্ধান্তকে ‘সভ্যতা-ভব্যতাহীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এরফলে কার্যত গরুর গোশত ও মহিষের গোশত নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এরপর মাছও নিষিদ্ধ হবে। সঙ্ঘ পরিবারের (আরএসএস) গোরাক্ষক দুর্বৃত্তদের আক্রমণ বন্ধ করার পরিবর্তে তাদেরই কর্মসূচি রূপায়ণে এগিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।’
তিনি বলেন, ‘খাদ্যাভ্যাসে হাত দেয়ার অধিকার কারো নেই। দরিদ্র মানুষের পুষ্টির বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। ২৫ লাখেরও বেশি মানুষ চামড়া ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে কাজ করেন। তাদের উপায় কী হবে? পশুপ্রেমের নামে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে আঘাত করার পরিকল্পনা নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
সিপিএমের কৃষক সংগঠন ‘সারা ভারত কৃষকসভা’ শুক্রবার ওই নির্দেশিকার বিরোধিতা করে বলেছে, ‘পশুদের প্রতি মমতা দেখানোর নামে কৃষকের প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখানো হলো। বহুকাল ধরেই ভারতে কৃষকরা আর্থিক সঙ্কটের সময়ে গবাদি পশু বিক্রি করে দেয়। কিন্তু এখন এমন শর্ত চাপানো হয়েছে যাতে তা অসম্ভব হয়ে উঠবে। কিন্তু সরকারও ওইসব কৃষকদের বোঝা কমাতে সেই পশু নিজেরা কিনবে না।’ 
সরকারি ওই সিদ্ধান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানে টান পড়বে বলে সর্বভারতীয় গোশত ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
ভারত থেকে বিদেশে প্রচুর পরিমাণ মহিষের গোশত রপ্তানি করা হয়। কার্যত ভারত ওই বাণিজ্যে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এরফলে বার্ষিক ২৬ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যে সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।
সরকারি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বাজার থেকে গোশতের জন্য গবাদিপশু কেনা যাবে না। এছাড়া ছাড়া আন্তর্জাতিক সীমান্তের ৫০ কিলোমিটার এবং রাজ্য সীমান্তের ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে পশুবাজার করা যাবে না। রাজ্যের বাইরে পশু নিয়ে যেতে গেলে রাজ্য সরকারি কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমোদন লাগবে।
এ ধরণের বিধিনিষেধে অর্ধেক পশু বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি বিধিতে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র ‘কৃষিজীবীর’ কাছেই গবাদি পশু বিক্রি করা যাবে। কিন্তু ওই কৃষিজীবীর কাছে ‘প্রামাণ্য নথি’ থাকা প্রয়োজন। গবাদি পশুকে বাজারে আনতে হলে পশুর মালিকের সচিত্র পরিচয়পত্রের নথি, পশুর বিশদ বিবরণ, ৬ মাসের আগে ক্রীত পশুকে বিক্রি করা হবে না এই মর্মে অঙ্গীকার থাকতে হবে।
এছাড়া জেলাস্তরের পশুবাজার কমিটির অনুমতি ছাড়া কোনো পশুবাজার চালানো যাবে না। একবার কোনো পশু কেনার পরে পরের ৬ মাসের মধ্যে তা বিক্রি করা যাবে না। পশু কেনার পরে রাজস্ব দপ্তর, প্রাণীপালন দপ্তরসহ অন্তত তিনটি জায়গা থেকে প্রশংসাপত্র আনতে হবে। সাধারণত এতসব নথি জোগাড় করা কৃষক পরিবারের পক্ষে বেশ দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। ফলে এ ধরণের কঠোরতায় উন্মুক্ত করে দেয়া গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়ে তা ফসলের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ