শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী

স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এমিকাস কিউরি হিসেবে ষোড়শ সংশোদনী বাতিলের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে বলেছেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে থাকা উচিত। ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী বলে মত দিয়েছেন এই বিশিষ্ট আইনজীবী। এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তার মতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু মৌলিক কাঠামোর মধ্যে সমীবদ্ধ নয়, এটা মৌলিক অধিকারও। 

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী কার্যকর সংশোধনী এবং একইসঙ্গে এটি বৈধ আইন হিসেবে বিবেচিত। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া বলেছেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদে ন্যস্ত করা হলে ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হবে। 

গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ড.কামাল হোসেন এই মন্তব্য করেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এই দিন নবম দিনের মত শুনানি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দশম দিনের শুনানি হবে।

এরআগে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এডভোকেট এম আই ফারুকী এমিকাস কিউরির মত দিয়েছেন। 

ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের পরিপন্থি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, পরিপন্থি হয়েছে। আমি এই সাবমিশন হাইকোর্টে রেখেছিলাম, সেইগুলো হাইকোর্ট মেনে নিয়েছে। আপির বিভাগেও সেইগুলো বললাম। ষোড়শ সংশোধনী অবশ্যই পরিপন্থি।

৭২ সালে বিচারপতি অপসারণে ক্ষমতা কী কারণে সংসদের হাতে দিয়েছিলেন তখন কি চিন্তা করেছিলেন, আর এখন কী চিন্তা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘তখন আমরা ইন্ডিয়া, যুক্তরাজ্যের সংবিধান দেখে আমরা ভেবেছিলাম, যে এটা আমরা করতে পারি। ওরা যেহেতু করেছে। তখন আমরা ভেবেছিলাম, ক্ষমতাটা এখানে দেয়া যায়। এরাও বিচারক হিসেবে নিরপেক্ষ হবে। কোনো রকমে রাজনৈতিক অথবা দলীয় বিবেচনায় না গিয়ে তারা এই বিচারটা করতে পারে।

ড.কামাল হোসেন বলেন, কোনো বিচার করতে গিয়ে কোনো প্রভাব বিচারকের উপর গিয়ে পরে। বিচারক আদেশিত হচ্ছে, এটাতো আর বিচার হবে না। সেই কারণে তারা বলেছে যে, আমরা ভেবেছিলাম যে সিনেটও যা করবে তা রাজনৈতিক প্রভাব থেকে করবে না, কোনোভাবে আদেশিত হয়ে করবে না। এখন রাজনৈতিক প্রভাব এখানে দেখা যাচ্ছে।

বিচারক অপসারণে কী বিধান থাকা উচিৎ বলে আপনারা মনে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেটা ছিল সেটাই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। ষোড়শ সংশোধনী না থাকলে আমাদের যেটা ছিল সেটাই থাকবে। সেটার উপর সর্বোচ্চ আদালতে রায়ও আছে।

বিচার বিভাগ যদি কখনো বিপথে চলে যায় তখন কী হবে- জানতে চাইলে প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, সংবিধানতো আছেই। সংবিধানের পরিপন্থি যদি তারা কিছু করে তাহলে কয়েকটা জিনিস আছে, তারা যদি অগ্রহণযোগ্য যদি কিছু করে তাহলে সামাজিক একটা বিষয় আছে। তারা কোর্টে আসবে।

স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপ : এ এফ হাসান আরিফ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ও সাবেক এটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। 

আদালতের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হাসান আরিফ বলেন, আমি যেটা আগে বললাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতাটা বিচারকদের প্রয়োজনে নয় জনগণের অধিকার সুরক্ষার জন্য এটা প্রয়োজন।

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, শুনানিতে আমি নতুন একটা বিষয় বলেছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু মৌলিক কাঠামো নয়, এটা মৌলিক অধিকারও বটে। জনগণের মৌলিক অধিকার যেন বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে পারে। কেউ যদি আদালতের সামনে উপস্থিত হয় আদালত যেন স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারে। সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের চাপে পওে যেন জনগনের অধিকার ক্ষুন্ন না হয়, সে ভাবে যেন বিচার করতে পারে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি একটা মৌলিক অধিকার।

সাবেক এই এটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি বলেছি, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যেটা সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদের ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছিল, চতুর্থ সংশোধনীতে ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনা হয়েছিল। অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আসল সেটা পার্লামেন্টের ক্ষমতা সেটিকে সরিয়ে দিয়ে নয়, রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল চতুর্থ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনা হয়। এটা একটা ভূল ধারণা, যে পার্লামেন্টের ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা মার্শাল ল’ এসে সরিয়ে দিয়েছে, এটা ঠিক না। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিলো বিচারক অপসারণের। মার্শাল ল এসে সেই ক্ষমতাটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দিয়েছে। পরবর্তীকালে অষ্টম সংশোধনী মামলায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়।

হাসান আরিফ বলেন, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটা পার্লামেন্ট নিজে এনেছে এবং যেটা দুই বার আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সেইটাকে সংশোধন করার কোন এখতিয়ার তাদের নেই।

অপসারণের ক্ষমতা সংসদে থাক : আজমালুল হোসেন কিউসি

জ্যেষ্ঠ ব্যারিস্টার আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দিয়েছেন। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এটি কার্যকর সংশোধনী এবং একইসঙ্গে এটি বৈধ আইন হিসেবে বিবেচিত। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অবশ্যই আইনত বৈধ। কানাডায় এ ধরণের পদ্ধতিতে বিচারক অপসারণ করা হয়।

শুনানিতে আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিচার বিভাগকে উপলব্ধি করতে হবে এর সঙ্গে তাদের স্বার্থের বিষয়টি সরাসরি জড়িত।

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ কখনও বিচারকদের স্বার্থে রায় দেয় না। রায় দেয়া হয় জনগণ ও বিচার বিভাগের স্বার্থে। সংবিধান ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতেই রায় দেয়া হয়। এখানে বিচারকদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। তবে এই মামলার রায় কী হবে আমরা জানি না। এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, পিতামাতা ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে কি? আমি বলবো অবশ্যই আছে। কারণ পিতামাতা তার সন্তানকে নিঃশর্তভাবে ভালবাসে।

আজমালুল হোসেন কিউসি মতামত দিতে গিয়ে বলেন, কীভাবে বিচারক অপসারণ করা হবে সে বিষয়টি এই মামলার সঙ্গে জড়িত। যা একটি মৌলিক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বিচারক অপসারণের পদ্ধতি কে নির্ধারণ করবে? তার উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সংসদ। পববর্তী প্রশ্ন হচ্ছে কে এই পদ্ধতির আইনগত বৈধতা দেবে? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, একজন বিচারক নিজের মামলার বিচার কি নিজেই করবে? অথচ এই মামলায় বিচার বিভাগের স্বার্থ জড়িত। তাই এ মামলায় সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।

আজমালুল গোসেন বলেন, বিচারক অপসারণটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ কিন্তু অপসারণের পদ্ধতিটা মৌলিক কাঠামোর অংশ না। সংসদের হাতে বিচারক আপসারণের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার পরিবর্তনের দরকার নেই।

এদিকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওয়াদুদ ভূঁইয়া সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পক্ষে মত দিছেন। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে থাকতে হবে। যদি এটা সংসদের হাতে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হবে।

এর আগে গত ৮, ৯ এবং ২১, ২২ ও ২৩ ও ২৪,২৫ ও ২৮ মে এ মামলার শুনানি হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ জন আইনজীবীকে এমিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়ে তাদের লিখিত বক্তব্য আদালতে জমা দিতে বলেন আপিল বিভাগ। ১২ জন এমিকাস কিউরি হলেন-প্রবীণ আইনজীবী বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া ও এম আই ফারুকী।

গত বছর ৫ মে ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের নিষ্পত্তি করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির রায় হওয়ায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যায়।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয় বলাতে দ্বিধা নেই ষোড়শ সংশোধনী একটি একটি মেকি আইন (কালারেবল লেজিসলেশন) এবং এটা রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের (নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগ) ক্ষমতার পৃথকীকরণের লঙ্ঘন। সংবিধানের ৯৪ (৪) এবং ১৪৭(২) অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এই দুটি অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ। এই সংশোধনী সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের (খ) দফাকে আঘাত করেছে। কেননা সংবিধানের ৭-এর ‘খ’ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মৌলিক স্তম্ভ পরিবর্তন করার কোনো বিধান নেই এ কারণে রুলের সারবত্তা রয়েছে এবং রুলটি সফল। রুল যথাযথ ঘোষনা করা হলো কোন ব্যয় ছাড়া। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন ২০১৪ (এ্যক্ট নম্বর ১৩, ২০১৪) মেকি, বাতিল এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষনা করা হলো।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ (১৬তম) সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর হাইকোর্টে ৯ জন আইনজীবী এই রিট করেন। তারা হলেন-এডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী, এডভোকেট একলাস উদ্দিন ভুঁইয়া, এডভোকেট ইমরান কাউসার, এডভোকেট মাসুম আলীম, এডভোকেট মো.সারওয়ার আহাদ চৌধুরী, এডভোকেট মাহবুবুল ইসলাম, এডভোকেট নুরুল ইনাম বাবুল, এডভোকেট শাহীন আরা লাইলী, এডভোকেট রিপন বাড়ৈ। রিটে দাবি করা হয়, ষোড়শ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অন্যতম অংশ। তাই ওই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ