হোসাইনী দালানে শিয়া সমাবেশে বোমা হামলা ১০ জঙ্গির বিচার শুরু
স্টাফ রিপোর্টার : দেড় বছর আগে ঢাকার হোসাইনী দালানে শিয়া সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দশ সদস্যের বিচার শুরু করেছে আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা গতকাল বুধবার এ মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর নির্দেশ দেন। এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি তাপস পাল জানান, আগামী ১৫ জুন এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ঠিক করে দিয়েছেন বিচারক।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এ মামলার ১০ আসামীর মধ্যে মাসুদ রানা সুমন, মো. কবির হোসাইন রাশেদ, আবু সাঈদ সালমান, মো. আরমান মনির, জাহিদ হাসান রানা ও রুবেল ইসলাম সুমনকে কারাগার থেকে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আদালতে হাজির করা হয়। আর জামিনে থাকা চান মিয়া, ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ ও শাহজালাল মিয়াও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শুনিয়ে বিচারক জানতে চান- তারা দোষী না নির্দোষ। আসামীরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সুবিচার চাইলে বিচারক অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে আশুরা উপলক্ষে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলায় দুজন নিহত হন, আহত হন শতাধিক। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস- আইইডি) উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চকবাজার থানায় মামলা করা হলে তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ।
মামলার নথিতে বলা হয়, ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জেএমবির আলবানি ওরফে শাহাদত ওরফে মাহফুজ ওরফে হোজ্জা, আবদুল্লাহ বাকি ওরফে আলাউদ্দিন ওরফে নোমান, সাঈদ ওরফে হিরণ ওরফে কামাল। হামলার আগে ১০ অক্টোবর তারা বৈঠক করেছিলেন। পরে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। হামলার আগে জাহিদ ও কবির ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন এবং হামলার সময় তাদের সঙ্গে আরমানও উপস্থিত ছিলেন। আরমান ও রুবেল হামলার বেশ আগে কামরাঙ্গীরচরে বাসা ভাড়া নেন। চান মিয়া, ওমর ফারুক, আহসানউল্লাহ, শাহজালাল ও আবু সাঈদ ভিডিও ধারণসহ বোমা হামলায় উদ্বুদ্ধ করেন ও সহায়তা করেন। শুধু আরমান হামলায় অংশ নিয়ে হোসাইনী দালানে পরপর পাঁচটি বোমা ছুড়েন। ওই হামলায় মাসুদ রানার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন গাবতলীতে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে এএসআই ইব্রাহীম মোল্লাকে হত্যা করে ঘটনাস্থলেই গ্রেপ্তার হন বলে পুলিশের ভাষ্য।
সন্ত্রাসবিরেধী আইনের মামলা হওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই দশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিচারক তা আমলে নেন।
সন্ত্রাসবিরেধী আইনের ৬ ধারায় এ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরণ ঘটানো, জননিরাপত্তায় বিঘœ ঘটানোসহ সন্স্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড হতে পারে।