বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ভারতীয় পোশাকের দাপটে কোণঠাসা দেশী পোশাক

 

কবির আহমদ, সিলেট : গত বুধবার ইফতারের পর থেকে বিভাগীয় নগরী সিলেটে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটে এক মুহুর্তের জন্যও বৃষ্টি থামেনি। কখনও ভারি বৃষ্টি আবার কখনও হালকা বৃষ্টি। সিলেটের ঈদ বাজারের ক্রেতাদের কাছে আষাঢ়ের দাপট যেন হার মানিয়েছে। বৃষ্টিকে অপেক্ষা করে নি¤œ ও মধ্যবিত্তের ক্রেতারা ছুটছেন সিলেটের হকার মার্কেট ও হাসান মার্কেটে। এই দুটি মার্কেটে তিল ধারণের ঠাই নেই। যারা দিনে আনে দিনে খায়, তাদের ভীড় প্রাচীনতম এই দুই মার্কেটে। প্রিয়জনের মুখে ঈদের আনন্দ ফুটাতে ঈদে ব্যস্ত কেনাকাটা। ২৩ বা ২৪ রোজা থেকে শেষ মুহুর্তে সিলেটের ঈদ বাজার জমে উঠেছে। অভিজাত বিপণী নামে খ্যাত নগরীর আল হামলা শপিং সিটি, ব্লু-ওয়ার্টার, কাকলি শপিং মল, নয়াসড়কের পাপাই, মাম্মি, মাহা, অপরূপ, আড়ং এবং কুমার পাড়ার অভিজাত বিপণীগুলোতে উচ্চবিত্তের উপচে পড়া ভীড়। প্রবাসী অধ্যুষিত ২য় লন্ডন নামে খ্যাত সিলেটের ক্রেতারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসেও এসব বিপণীতে বাজার করছেন। এছাড়া সিলেটের মধুবন, শুকরিয়া মার্কেট, লন্ডন ম্যানশন, আহমদ ম্যানশন সহ অনেক বিপণী বিতানে ক্রেতাদের পছন্দের পোশাক কেনা চলছেই। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আদালতের নির্দেশে ফুটপাত হকার মুক্ত করলে নি¤œবিত্তরা হকার মার্কেটে গিয়ে ভীড় করছেন। কোন কোন হকাররা ভ্যান গাড়ী দিয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় থ্রীপিছ, প্যান্ট, পাঞ্জাবী ও ছোটমনিদের জামা বিক্রি করছেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের বিভিন্ন ঈদ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দামের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে বাচ্চাদের জামা। তরুণীদের পছন্দের থ্রী পিছ, বাহুবলী টু ও সুলতান সুলেমান। ভারতীয় পোশাকে সয়লাব সিলেটের ঈদ বাজার। বাচ্চাদের জামা ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় বাহুবলী টু ও সুলতান সুলেমান ২ হাজার টাকা থেকে ৭/৮ হাজার টাকাও বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবী ৫ ’শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে আড়ংগের পাঞ্জাবী, থ্রী পিছ ও শাড়ীতে অনেক দাম। নি¤েœ ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা এবং উপরে ৭ থকে ৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সিলেট সদর উপজেলার শিক্ষার্থী নাদিয়া। সে তার বড় ভাই নূর আহমদকে সাথে নিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন নগরীর শুকরিয়া মার্কেটে। নাদিয়া জানালেন এবারের ঈদে তার পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বাহুবলী টু’ নামের পোশাক। বড় ভাই সালেহ আহমদের সাথে একই বাড়ী থেকে এসেছেন নাদিয়ার চাচাতো ভাই মাদরাসা পড়–য়া ৫ম শ্রেণীর ছাত্র জুবায়ের। জুবায়ের জানালো পছন্দের সার্ট ও প্যান্ট কাজী ম্যানশন থেকে কিনেছে। জুতা কেনার জন্য লন্ডন ম্যানশনে যাচ্ছে। তবে সালেহ আহমদ দামের ব্যাপারে খুবই হতাশ। সৌদী প্রবাসী আউসা গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে সালেহ আহমদ দৈনিক সংগ্রামকে জানালেন সিলেটের বাজার ভারতীয় পোশাকে সয়লাব। দেশীয় পোশাকের প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী সালেহর দুর্বলতা প্রচুর। তবে ভারতীয় পোশাকের দাপটে কোণঠাসা দেশী পোশাক।

মা আর ফুফুর সাথে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন দক্ষিণ সুরমার স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া জান্নাত। কথা বললে সুমাইয়াও জানান তার পছন্দে রয়েছে বাহুবলী টু অথবা সুলতান সুলেমান। অনেকগুলো দোকান ঘুরে তারপর পছন্দমত ড্রেস কিনবেন সুমাইয়া। ঘনিয়ে আসছে ঈদ উল ফিতর। ঈদের আনন্দে সব বয়সের মানুষের চাই-ই নতুন পোশাক। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের ন্যায় সিলেটের প্রায় সবগুলো শপিং মল ও বিপনী বিতানে নতুন নতুন ডিজাইন আর বাহারী রঙের মনমাতানো পোষাকের সমারোহ এসেছে। বিশেষ করে এ বছরও ভারতীয় পোশাকে সিলেটের বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে। তরুণীদের পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারতের জনপ্রিয় বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও সিরিয়ালের মূল চরিত্রের সাথে মিল রেখে নিয়ে আসা হয়েছে আকর্ষণীয় পোশাক। এবার বাজারে পছন্দের শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্র বাহুবলী টু সিনেমায় ব্যবহৃত পোষাকের অনুকরণে কাতান কাপড়ের লেহেঙ্গা। যা বাহুবলী টু ড্রেস নামে পরিচিতি পাচ্ছে। এছাড়া বিদেশী সিরিয়াল সুলতান সুলেমান নাম অনুকরণে এক ধরনের গাউন পোষাক এসেছে বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন ব্যতিক্রমী ডিজাইনের এ ধরনের পোষাকগুলোই তরুণীদের পছন্দ। সিলেটের বিভিন্ন শপিং মল ও বিপনী বিতান ঘুরে দেখা যায়, ফ্যাশন সচেতন তরুণীদের কথা মাথায় রেখে এবারের ঈদে ব্যবসায়ীরা তাদের কালেকশনে এনেছেন নতুনত্ব। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে এসকল পোষাকের নামেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার মেয়েদের পোষাকের দাম তুলনামুলকভাবে কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুকরিয়া মার্কেটের নাজ কালেকশনের রুমন খান জানান, দুই হাজার থেকে দশ হাজার টাকায়ও ড্রেস বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে বাহুবলী টু আড়াই হাজার থেকে চার হাজারের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো তুলনামূলকভাবে খুবই উন্নতমানের পোশাক। ব্লু-ওয়াটার মার্কেটের ত্রিপীছের দোকান ‘আপেল’ এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, শুধুমাত্র ভারতীয় পোশাক নয়, দেশী পোষাকেরও বিপুল সমাহার রয়েছে তার শপে। তিনি মনে করেন ভারতীয় পোষাকের চেয়ে দেশে তৈরী পোশাকগুলো খুবই উন্নতমানের এবং আরামদায়ক। কিন্তু তরুণীরা সাধারণত: ভারতীয়, পাকিস্তানীসহ বিদেশী পোষাকগুলো পছন্দ করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ