শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যমুনা তীরে ভ্রমণ পিপাসুদের ঈদ মিলন মেলা

এনায়েতপুর যমুনা স্পার বাঁধে ভ্রমণ পিপাসুদের ঈদ মিলনমেলা

চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য পরিকল্পিতভাবে কোন পার্ক কিংবা দর্শনীয় স্থাপনা গড়ে না ওঠায় ঈদ উপলক্ষে হাজার হাজার বিনোদন পিপাসু মানুষের ঢল নেমেছে যমুনা ভাঙন মোকাবিলায় পাউবোর তত্ত্বাবধানে নির্মীত এনায়েতপুর ও বেতিল স্পার বাঁধে। বিশেষ করে যমুনা তীরে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অত্যাধুনিক নির্মাণ শৈলীদ্বারা নির্মিত খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তজাতিক মানের মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, নার্সিং ইন্সটিটিউশন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং যমুনার পাশেই দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ খচিত খাজা এনায়েতপুরীর মাজার দেখতে সারা বছরই ভক্তবৃন্দসহ দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের ঢল নামলেও ঈদ-পূজাসহ অন্যান্য পার্বণে এসব দেখতে ভ্রমণ পিয়াসুদের পদচারনায় মুখরিত হয় পুরো এলাকা। এবার ঈদের লম্বা ছুটি পেয়ে অনেকেই এসেছেন এনায়েতপুর যমুনা স্পাঁরে বেড়াতে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচে পড়া ভিড়ে কোথাও দাড়ানো যায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে যমুনায় ছোট ছোট নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়ছেন। আবার অনেকেই বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে যমুনা তীরে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত মানুষের কোলাহল দেখা যায়। সিরাজগঞ্জ জেলার দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে এনায়েতপুর, চৌহালী ও বেলকুচি উপজেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় সব বয়সের মানুষের কাছেই যমুনা তীরে বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহ থেকেই যায়। বিভিন্ন উপজেলাসহ বাহিরের জেলা থেকে সড়ক পথে মাইক্রোবাস, পিকআপ ও সিএনজি এবং নৌ পথে ট্রলারে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ঢং সেজে সব বয়সের মানুষদের আসতে দেখা যায়। তাছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে নৌকা যোগে পিকনিক করতে এনায়েতপুরের যমুনা তীরে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ পেশাজীবিদেরকেও দেখা যায়। স্বঘোষিত পিকনিক স্পটে পরিনত হয়েছে স্পার বাঁধ ও হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। অন্যদিকে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও স্পার বাঁধে বিনোদন প্রিয় মানুষদের জন্য এলাকাবাসিকে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া দিতে দেখা গেছে। একারনে চটপটিসহ মৌসুমী ফল ও ভাজা বাদাম বিক্রেতাদের ব্যবসা জমে উঠেছে। মাঝগ্রমের নৌকা মালিক ইছাহাক মিয়া বলেন, আমার স্কুল পড়–য়া ছেলে রাসেল ঈদের দিন থেকে স্পারে নৌকা ভাড়া দিয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা আয় করেছে। আগামী বছর নতুন ডিজাইনের নৌকা তৈরি করে ভ্রমণ বিলাসীদের আনন্দ দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। এনায়েতপুর যমুনা স্পার বাঁধে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে আসা গোপিনাথপুরের তাঁত শ্রমিক ইউসুফ, কালা চাঁন ও শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তাঁত শ্রমিক, ঈদের সময় অতিরিক্ত কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে ছেলে মেয়েদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারলেও তাদের নিয়ে কক্সবাজার কিংবা সিলেট গিয়ে প্রকৃতি দেখানোর আর্থিক সক্ষমতা আমাদের নেই। তাই পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে এসে যমুনা তীরের এই বাঁধে একটু প্রকৃতির ছোয়া নিতে এসেছি। এখানে এসে অনেক ভাল লাগছে। স্পার বাঁধে যমুনার স্বচ্ছ জলরাশি আমাদের পা ছুয়ে যাচ্ছে, যমুনা তীর গরিবের কক্সবাজার। এটা আমাদের জন্য ভাললাগা ও ভালবাসার জায়গাও বলতে পারি।
এদিকে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা সুপ্রীম কোর্টোর আইনজীবি ও মানবাধিকার কার্মী গোলাম কিবরিয়া , এ্যাড. আনোয়ার হোসেন ও অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জক জানান, আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতে সৃষ্টি প্রকৃতিকে যথাযথ উপভোগ করতে হলে যমুনা তীরে আসতেই হবে। যমুনা নদী তীরে দাড়িয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, না দেখলে বোঝানো যাবে না।
খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইয়াকুব শরীফ বলেন, খাজা এনায়েতপুরী (রহ:) মাজার, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ-হাসপাতাল, স্পার বাঁধ যমুনা তীরের সৌন্দর্য্য বহু গুনবৃদ্ধি করেছে। বছরের প্রায় প্রতিটি দিনই দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ দেখতে আসে। ঈদসহ বিশেষ কোন পার্বনে সবশ্রেনী পেশার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ তৈরী হয়। আর যমুনার নির্মল বাতাস ও পরিকল্পিত সবুজায়ন ভ্রমণ পিপাসুদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ