বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে ইস্তাম্বুলে ৩০ মুসলিম দেশের তরুণদের জমায়েত

৯ জুলাই, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, মিডিলিস্ট মনিটর : দীর্ঘদিনের ইসরায়েলি আগ্রাসন আর দমনপীড়নে পিষ্ট ফিলিস্তিনি জনতার প্রতি সংহতি জানাতে একাত্ম হয়েছে বিশ্বের মুসলিম-অধ্যুষিত ৩০টিরও বেশি দেশের তরুণ প্রজন্ম। শনিবার তুরস্কের বাণিজ্যিক রাজধানী ইস্তাম্বুলে জড়ো হয়েছেন ওইসব দেশের তরুণ সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইউনিয়নের সদস্যরা। নিজস্ব ভূখ-ের সুরক্ষায় ফিলিস্তিনি জনগণ যে প্রতিরোধ জারি রেখেছে, তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতেই দুইদিনের এক সম্মেলনে জমায়েত হয়েছেন তারা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার দাবিকে বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম নাগরিকের মনে জিইয়ে রাখতেই এই সমাবেশ। সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশি তরুণেরাও।
গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনটি আয়োজক তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব ইয়ুথ এবং স্টুডেন্ট ইউনিয়নস টু সাপোর্ট প্যালেস্টাইন। উদ্বোধনী ভাষণে আনাদোলু অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সালিহ তুরান বলেন, ‘ফিলিস্তিন, আল-কুদস (জেরুজালেম) এবং আল-আকসা মসজিদকে আলোচ্যসূচির শীর্ষে রেখে আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এ সম্মেলনের আয়োজন করছি। গোটা মুসলিম বিশ্বের তরুণ; যাদের ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি একইরকমের অনুভূতি রয়েছে তাদেরকে প্রতিনিধিত্ব করছি আমরা।’
উল্লেখ্য, আরববিশ্বের মার্কিনপন্থী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর একাংশ কখনও ফিলিস্তিনী স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। মার্কিনপন্থী এইসব দেশই গত ৫ জুন জঙ্গিবাদে সমর্থন এবং মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। পরে সৌদি নেতৃত্বাধীন ৪ দেশের জোট সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের শর্ত হিসেবে কাতারকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে অর্থ সহায়তা বন্ধ করতে বলা হয়। রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনকে দমন করা কাতারবিরোধী সৌদি জোটের পদক্ষেপের প্রধানতম উদ্দেশ্যগুলোর একটি। এই প্রেক্ষাপটে জুনের শেষ সপ্তাহে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে মুসলিম বিশ্বের প্রধান ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পার্সটুডের এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জিহাদকে প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সর্বোচ্চ নেতা বলেন, ফিলিস্তিনি হচ্ছে মুসলমানদের জন্য প্রধান ইস্যু, কিন্তু কিছু মুসলিম দেশের কর্মকা-ে মনে হচ্ছে,তারা ফিলিস্তিন ইস্যুকে উপেক্ষা করছে এবং ভুলে গেছে। তার প্রশ্ন, ‘ইহুদিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা এখন সব মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে কিন্তু কেন অনেকেই তা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে?’
ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব ইয়ুথ এন্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নস টু সাপোর্ট প্যালেস্টাইন-এর প্রধান ইহাব নাফি জানান, মুসলিম বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে ফিলিস্তিনি দাবিগুলোকে জিইয়ে রাখতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।  'বিশ্বের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে আমরা এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন করে থাকি। বার্তাটি হলো-আমাদের দৈনন্দিন এজেন্ডা থেকে ফিলিস্তিন ইস্যুকে সরিয়ে দেওয়া যাবে না। আরব এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণ ফিলিস্তিনে তাদের অধিকার খর্ব হতে দেবে না।’ ফিলিস্তিনের জনগণের স্বাধীনতার দাবির প্রতি তুরস্কের সমর্থনের কারণে এবারের সম্মেলন আয়োজনে ইস্তাম্বুলকে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানান নাফি।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী জনতার স্বাধীনতার প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জারি রয়েছে। সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য নীতির বদল হলেও এই নীতি থেকে বাংলাদেশ কখনও সরে আসেনি। সম্মেলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে সেই বাংলাদেশের তরুণরাও। সেখানে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থী আম্মার হোসেন জানান, ‘ফিলিস্তিনি ইস্যুতে সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে অবহিত হতে এবং এ ব্যাপারে জানাশোনা বাড়ানোটাই এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার মূল কারণ। ফিলিস্তিনি ইস্যু এবং আমাদের সহায়তা ও সমর্থনের অপেক্ষায় থাকা অন্য প্রতিবেশী মুসলিম দেশ নিয়ে মুসলিম তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ ধরনের সম্মেলন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন আমিনা ব্রেদা। সে দেশের ইয়ুথ ফর আল-কুদস এর নারী শাখার শিক্ষার্থী তিনি। ইস্তাম্বুলে আসার কারণ হিসেবে আনাদোলু এজেন্সিকে আমিনা বলেন, ‘মুসলিম হিসেবে আমাদের হৃদয়ে ফিলিস্তিনিরা গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে রেখেছে। ফিলিস্তিন ইস্যু সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে এবং আরও ভালোভাবে এর প্রেক্ষাপট বুঝতে আমি ইস্তাম্বুলে এসেছি। এ ব্যাপারে জানার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের এ ব্যাপারে জানাব।’
সাম্প্রতিক সময়ে ইস্তাম্বুলে ফিলিস্তিনি ইস্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি সম্মেলন আয়োজন করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন দেশে থাকা ৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি ইস্তাম্বুলে প্রথমবারের মতো তাদের সম্মেলন আয়োজন করে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম দখলে নেয় ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি আলোচনা চালানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনও সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। মুসলিমদের দৃষ্টিতে আল-আকসা বিশ্বের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। অন্যদিকে ইহুদিরা এ এলাকাকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে থাকেন। তাদের দাবি, প্রাচীনকালে এ এলাকায় দুটি ইহুদি মন্দির ছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ