বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসার জন্য লন্ডন জন্য গেলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ্যামিরেটরসের ৫৭৮ ফ্লাইটে খালেদা জিয়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ত্যাগ করেন। বিমান বন্দরে বেগম জিয়াকে বিদায় জানান হাজারো নেতাকর্মী। এই সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা আখতার। একই বিমানে লন্ডন গেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা থেকে এবং ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ব্যাংকক থেকে লন্ডন গেছেন। ২০০৬ সালের পর যুক্তরাজ্যে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় সফর। জানা গেছে, চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করাতে দীর্ঘ দুই মাস তাকে যুক্তরাজ্য অবস্থান করতে হবে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাও উদযাপন করবেন। এদিকে বেগম জিয়ার লন্ডন সফর চিকিৎসার জন্য বলা হলেও তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আগ্রহ রয়েছে। 

সূত্র মতে, লন্ডনে চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য প্রায় দুই মাসের মতো অবস্থান করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। পুরো সময়টা তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় অবস্থান করবেন। এছাড়া সফরে যুক্তরাজ্য বিএনপি, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির সঙ্গে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে তার। বেশ আগে থেকে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের জন্য প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু তার সফরসঙ্গী একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক হতে দেরি হওয়াতে এত দিন লন্ডন সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। সফর শেষে খালেদা জিয়া কবে দেশে ফিরবেন তা এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারেনি কেউ। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ঈদুল আজহার পরপরই তিনি তিনি দেশে ফিরবেন।

খালেদা জিয়ার লন্ডন সফর নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলাপ-আলোচনা চলছে। আগামী নির্বাচনের আগে চেয়ারপার্সনের এই সফরকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন দলের নেতাকর্মীরা। আগামী দিনের আন্দোলন, দল পরিচালনার কর্মপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয় সিদ্ধান্ত নেবেন বলে মনে করছেন তারা। যাওয়ার আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া, যেখানে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। খালেদা জিয়া কবে নাগাদ ফিরবেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা নির্ভর করবে তার চিকিৎসার উপর।

সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া লন্ডন গিয়েছিলেন। সেবার তারেক রহমানসহ পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করেই দেড় মাস পর ফিরেছিলেন তিনি। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী-সন্তানরা ছাড়াও ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই সন্তানও তখন লন্ডনে ছিলেন। এবার কোরবানির ঈদ হবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ঈদ করে এলে দেড় মাসের বেশি সময় দেশের বাইরে থাকবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। লন্ডনে বর্তমানে তারেক রহমান তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান ছাড়াও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি, তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানও রয়েছেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হোন দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। গতকাল বিকেল ৩টা থেকে দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে বিমানকন্দর এলাকায় আসতে তাকে নেতাকর্মীরা। সময় বাড়ার সাথে সাথে তা জনস্রোতে রূপ নেয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপি ও দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছেন। এর আগে গতকাল বিকেল পৌনে ৬টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে খালেদা জিয়া বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। খালেদা জিয়া বিমানবন্দর এলাকায় এসে পৌঁছলে অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীরা উচ্ছাসে ফেটে পড়েন। এসময় দলের নেতাকর্মীদের শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিমানবন্দরের সামনের সড়কটি। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে বেমানবন্দরে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ভিআইপি গেইট দিয়ে বিমান বন্দরের ঢোকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে বিমান বন্দরের প্রবেশমুখে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। এতে টার্মিনালে যেতে বিএনপি নেতা-কর্মীরা বাধার মুখে পড়েন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে বিদায় জানান।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, দুবাইয়ে দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতির পর রোববার সকালে লন্ডন পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ম্যাডামের চোখের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়ও ঠিক করা হয়ে গেছে।

ভিআইপি টার্মিনালের বাইরে সড়কের পাশে দাড়িয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, আবদুল মান্নান, আবদুস সালাম, শামসুজ্জামান দুদু, আমানউল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, কবির মুরাদ, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সানাউল্লাহ মিয়া, নাজিমউদ্দিন আলম, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ দলের প্রধানকে বিদায় জানান।

পুলিশ বিমানবন্দরের প্রবেশ পথে নেতা-কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়নি। খিলক্ষেতের হোটেল লা ম্যারিডিয়ান থেকে শুরু করে বিমান বন্দরের প্রবেশ পথ পর্যন্ত হাজার হাজার নেতা-কর্মী দলের নেত্রীকে হাত নেড়ে বিদায় জানান। বনানী থেকে নেতা-কর্মীদের ভিড় ডিঙিয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর এগিয়ে নিতে নিরাপত্তা কর্মীদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়।

নেতা-কর্মীদের সাথে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, ইয়াসীন আলী, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আহসান উল্লাহ হাসান, মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু, আব্দুল আলীম নকী, আতিকুল ইসলাম মতিন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, কাজী আবুল বাশার, জয়নাল আবেদীন রতন চেয়ারম্যান, কাজী হযরত আলী, একেএম মোয়াজ্জেম হোসেন, সাবেক কমিশনার মাসুদ খান, নবী সোলায়মান, রবিউল আউয়াল, শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদারসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছিলেন।

বিদায় জানাতে আসা স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের দলীয় প্রধান সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন। আমরা ভিআইপিতে গিয়ে বিদায় জানাতে এসেছি কিন্তু যেতে দেয়া হচ্ছে না আপনারা তা দেখতে পারছেন। তার ব্যক্তিগত সফর সম্পর্কে নানা জল্পনা-কল্পনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নেত্রীর সফর নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, তিনি শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। তারপরও তিনি একটি বৃহৎ দলের সভানেত্রী আমাদের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তার বাসায় থাকবেন তিনি। দুই নেতার মধ্যে দেশের রাজনীতির ব্যাপারে, সংগঠনের ব্যাপারে আলোচনা হবে। এখানে আমরা প্রত্যাশা করছি, অতি শিগগিরই চিকিৎসা শেষ করে তিনি দেশে ফিরে আসবেন। দেশে ফিরে তিনি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন।

এই রূপরেখা জনপ্রিয় করার জন্য, জনগণের থেকে সমর্থন আদায়ের জন্য আমাদের নেত্রী আসলে জনসংযোগমূলক কর্মসূচি দেবেন। বলেন খন্দকার মোশাররফ। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, চিকিৎসার জন্য উনি যাচ্ছেন। চিকিৎসা যতদিন প্রয়োজন হয়, এটা আমরাও বলতে পারবো না, আমাদের নেত্রীও বলতে পারবেন না। ডাক্তাররা সেটা বলবেন, সেই মোতাবেক নেত্রী দেশে ফিরবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ