শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কিশোরগঞ্জের উৎপাদিত কফির বাণিজ্যিক অনুমোদন মিলছে না

 

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা : নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস ব্যক্তিগত উদ্যোগে কফি চাষ করে সফল হয়েছেন। আশানুরূপ ফলন পেলেও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করণে বিএসটিআই অনুমোদন না দেয়ায় হতাশায় ভুগছেন। কফি চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদন ও বিপননে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। কফি উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণে সরকারী সহায়তা পেলে অর্থকারী ফসল হিসেবে কফি চাষ এ অঞ্চলের কৃষিক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে। দেশে কফির চাহিদা মেটায়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখবে।

জানা যায়, ২০০৯ সালে কৃষক আবদুল কুদ্দুস ঢাকায় নার্সারি সমিতির মিটিংয়ে গিয়ে প্রথম কফি চারার সংবাদ পায়। ২০১৪ সালে কক্সবাজারের জাহানারা এগ্রো থেকে ১৫৪টি গাছ এনে তার নার্সারির পাশে দুই শতক জমির মধ্যে তিন ফুট পর পর চারা রোপণ করে। কফির গাছ বাড়তে থাকে। দুই বছর পর ফলন শুরু হয়েছে। কফির গাছগুলো জাল দিয়ে ওপর থেকে ঘিরে রাখে। যাতে পাখিরা খেয়ে ফেলতে না পারে। শুকনো কফি আপাতত আটার মিলে মাড়াই করে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করছে। এ কফির স্বাদ ও গন্ধ দুটোই ভিন্ন। খুব সুস্বাধু ও মনকাড়া।

কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত বছর আমি ৬৭ কেজি কফি উৎপাদন করেছি। যা গড়ে দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ঘরে তুলেছি। কফির গাছগুলো পরিচর্যা এবং মাড়াইয়ে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এবারেও ভালো ফলন হয়েছে। আমার বাগানে উৎপাদিত কফি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে চেষ্টা করছি। এ জন্য বিএসটিআইএর লাইসেন্সের জন্য রাজশাহী যাই। কিন্তু সেখানে থেকে লাইসেন্স এর অনমোদন দেয়া হয়নি। ফলে কফির প্রকৃত মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়েছি। তবে আমার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু চারা উত্তর বাঁশখানা গ্রামের আফজাল হোসেনসহ অনেকেই নিয়েছেন। তারাও কফি চাষ শুরু করছেন। শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলে কফি চাষ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সরকার ও কৃষি বিভাগের কার্যকরী উদ্যোগ। তাহলে এ অঞ্চলে কফি চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু হবে। তখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে কফি আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ করা যাবে। এতে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে।

কফি গাছ দেখতে অনেকটা বেলি ফুলের গাছের মতো। তবে উচ্চতা ও ঘেরের দিক থেকে বেশ বড়। ভূূগোলের পরিচয়ে কফি একটি পানীয় অর্থকরী ও বাগিচা ফসল। উদ্ভিদ বিদ্যার ভাষায় এক ধরনের চিরহরিৎ বৃক্ষের ফলের বীজ। ফল পাকলে তা শুকিয়ে কিংবা পুড়িয়ে গুঁড়ো করা হয়। সেই গুঁড়ো উপাদান চিনি ও ঘন দুধের সাথে মিশিয়ে এক ঊষ্ণ পানীয়দ্রব্যে পরিণত করা হয়। কফিতে ক্যাফেইন নামে এক ধরনের উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। কফি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি পান করা পানীয়ের মধ্যে অন্যতম।

বর্তমানে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে কফির চাষ হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশেও কফির চাষ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের জাহানারা অ্যাগ্রো ফার্মের পরিচালক জাহানারা ইসলাম ৯বছর আগে ভারতের দার্জিলিং থেকে অ্যারাবিয়ান জাতের দুটি কফির চারা নিয়ে এসেছিলেন। পরীক্ষামূলকভাবে তিনি কফি চাষ শুরু করেন। তার সফল্যর সংবাদ পেয়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস সেখান থেকে চারা এনে দুই শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু করে সফলতা পান।

এব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, এ অঞ্চলের ভূমি কফি চাষের উপযোগী। ভূমি সামান্য ঢালু হলে কফি চাষের জন্য ভালো হয়। এ অঞ্চলে বান্যিজিক ভাবে কফি উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু কফি চাষী আব্দুল কুদ্দুস তার উৎপাদিত কফি বাজারজাত করণে রাজশাহী গিয়ে বিএসটিআই’র অনুমোদন না পাওয়ায় আমার কাছে এসে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ