শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নিধন তৎপরতার বাইরে থেকে যাচ্ছে এডিস মশা

খুলনা অফিস : রাজধানী ঢাকার পর যশোরে চিকুনগুনিয়া রোগী সনাক্ত হওয়ায় বিভাগীয় শহর খুলনাও রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে। এ বিষয়ে এখনই তৎপর না হলে খুলনায় রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলমের অভিমত, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশনে মশক নিধনের যে তৎপরতা চলছে তার আওতার বাইরেই রয়ে যাচ্ছে এ রোগের জীবানু বহনকারী এডিস মশা। যারা অবস্থান ও বংশ বৃদ্ধি করে ফুলের টব, ছাদের উপর ভাঙ্গা-চোরা টিন বা প্লাস্টিকের পাত্র অথবা ভবনের কার্ণিশ বা বাড়ির আঙিনায় দৃষ্টিগোচর নয় এরূপ স্থানে জমে থাকা পানিতে। ফলে কেবল ড্রেনের মশা নিধন করলে চিকুনগুনিয়া সংক্রমন রোধ করা যাবে না। প্রত্যেক নাগরিককে তার বাগান, ছাদ ও অঙিনার প্রতি তীক্ষè দৃষ্টি রাখতে হবে। যেন এসব স্থানে পানি জমে না থাকে। সঙ্গত কারণেই চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কর্পোরেশনের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্ব নাগরিকদের।

রাজধানী ঢাকায় চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তথা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসি গৃহীত কার্যক্রম শীর্ষক এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা এ কথা জানান।

এদিকে, প্রচন্ড জ্বর ও গায়ে ব্যথা নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাধন গাংগুলি (৪৩) চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগীর রক্তের নমুনা রাজধানীর আইসিডিডিআরবিতে পরীক্ষা শেষে যশোর হাসপাতালে তার রিপোর্ট আসলে চিকিৎসকরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সাধন গাংগুলি যশোর বেজপাড়ার তালতলা মোড় এলাকার তারাপদ গাংগুলির ছেলে। রাজধানী ঢাকার পর যশোর চিকুনগুনিয়া রোগী সনাক্ত হওয়ায় বিভাগীয় শহর খুলনাও উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। জ্বরের লক্ষণ ও সার্বিক বিষয় দেখে হাসপাতালে দায়িত্বরত ডাক্তাররা মনে করছেন এসব চিকুনগুনিয়া রোগ। তবে খুলনায় এ রোগ শনাক্তের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। অপরদিকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত খুলনায় এ রোগের খবর মেলেনি। ফলে সবকিছু মিলে এ রোগ নিয়ে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. এস এম কামাল হোসেন বলেন, অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তার কাছে এসেছেন। জ্বরের লক্ষণ ও সার্বিক বিষয় দেখে তার কাছে মনে হয়েছে চিকুনগুনিয়া হতে পারে। তবে খুলনায় এ রোগ শনাক্তের কোন ব্যবস্থা না থাকায় পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

তবে এ রোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এডিস মশা যেহেতু চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বাহক, সেহেতু দুই রোগ এক সঙ্গেও দেখা দিতে পারে। এডিস মশা যদি কাউকে কামড় দেয় তাহলে তার চিকুনগুনিয়া হবে। আবার চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত কোন রোগীকে মশা কামড়ালে তার মধ্যেও এ ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে। সেটি যদি আবার কোনও সুস্থ মানুষকে কামড়ায় তাহলে তারও চিকুনগুনিয়া হবে।’

রোগের লক্ষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া জ্বরের লক্ষণগুলো অন্যান্য সকল ভাইরাস জ্বরের মতোই। তবে একমাত্র স্বতন্ত্র উপসর্গ হলো হাড়ের জোড়ায় তীব্র ব্যথা। কখনও কখনও এ ব্যথা দীর্ঘদিন থাকে। সঙ্গে মাথা ব্যথা, চোখ জ্বালাপোড়া, বমিভাব, শারীরিক দুর্বলতা, সর্দি-কাশি ইত্যাদিতো আছেই। স্বাভাবিক হাঁটা চলা করতে পারে না। প্রচন্ড দুর্বল শরীরে হাতের মুঠি ধরতেও কষ্ট হয় রোগীদের। সাধারণ অবস্থায় সপ্তাহ খানেক এর মধ্যে এ রোগ সেরে গেলেও ব্যথা সারতে বেশ সময় লাগে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এখন পর্যন্ত খুলনায় এ রোগের খবর মেলেনি। তবে এ রোগ প্রতিরোধে তার কার্যালয় থেকে সর্বত্র লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি অফিসার মো. আনিসুর রহমান বলেন, এ রোগ প্রতিরোধে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আগে ভাগেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১০টি ফগার দিয়ে ক্যাশ প্রোগ্রাম শেষ করা হয়েছে। লার্ভিসাইড, লাইট ডিজেল ও ফগার স্প্রে-সহ রুটির ওয়ার্ক চলছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লিফলেট ও কেবল টিভিতে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়াচ্ছে। আর এডিস মশা সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন কিংবা ময়লার ডাস্টবিনে জন্মায় না। এ মশা জন্মায় বাসাবাড়িতে, পরিষ্কার পানিতে, নির্মাণ সামগ্রী, এসি, ফুলের টব, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার ও ডাবের খোসায়। বিশেষ করে শহরে নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকার সুযোগ রয়েছে। তাই ওই সব জায়গায় জমে থাকা পানি পরিষ্কারে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে সতেচন থাকতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ