শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চোরাচালানিরা নিরাপদ রুট হিসেবে বেনাপোল বন্দরকে বেছে নিয়েছে

আব্দুর রাজ্জাক রানা, বেনাপোল বন্দর থেকে ফিরে : ভারতে সোনার দাম বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালানিরা বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে তা পাচার করে। তাছাড়া বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার হওয়ায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় সোনা চোরাচালানীরা এই রুটটি নিরাপদ মনে করে। এ কারণে বেনাপোল সোনা পাচারকারীদের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ৭ দিনে সন্দেহভাজন চার যাত্রীকে তল্লাশি করে কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দারা সাড়ে ৬ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এক নারী যাত্রী রয়েছে।
আগে অবৈধ পথে ভারত যাতায়াত ঝুঁকিমুক্ত থাকায় বেনাপোল সীমান্তের বিভিন্ন পথ দিয়ে ভারতে সোনা পাচার করা হতো। এ কারণে আগে বেনাপোলের সাদিপুর গ্রামকে অনেকেই ‘সোনাপুর’ বলে ডাকতো। ৮০’র দশকে এই গ্রামের শতাধিক ব্যক্তি সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। পরে সোনা চোরাচালানিরা পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে বেছে নেয় দৌলতপুর সীমান্তের ভারতীয় করিডোর ১৩ ঘর’কে। ২০০০ সাল পর্যন্ত এই রুটে সোনা চোরাচালনি ছিল ওপেন-সিক্রেট। পরে সোনার বিনিময়ে গরু আসা শুরু হলে চোরাচালানিরা দৌলতপুর সীমান্ত ছেড়ে চলে যায় পুটখালী সীমান্তে। এক নাগাড়ে পনের বছর এই সীমান্ত দিয়ে চলে  সোনা চোরাচালানির ব্যবসা।
সর্বশেষ শনিবার সকালে তিন কেজি সোনার বারসহ রুখসানা বেগম নামের এক যাত্রীকে গ্রেফতার করে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যারা। রুখসানা ঢাকার ওয়ারি এলাকার বাসিন্দা। এখন পাসপোর্টধারীরাও বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে সোনা চোরাচালান করছে।
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা বড় আচড়া গ্রামের বজলুর রহমানকে (৫৫) ১৪টি স্বর্ণের বারসহ গ্রেফতার করে। ৪ মার্চ দৌলতপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা গাতীপাড়া গ্রামের টিটু বিশ্বাসকে (৩৫) ২০ পিস সোনার বারসহ গ্রেফতার করে। বেনাপোল বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা ১ এপ্রিল শামীম হোসেন (২১) এবং হোসেন আলী (২৫) নামে ২ সোনা চোরাচালানিকে ১৫টি সোনার বারসহ গ্রেফতার করে। ২৭ মে বেনাপোল সিমান্তের দৌলতপুর ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ২ কেজি ৩শ’ গ্রাম ওজনের ২০টি স্বর্ণের বিস্কুটসহ বড়আচড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানকে (৩৮) গ্রেফতার করে। পুটখালী ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ৩০ মে মনির হোসেনকে (২৫) ১০ পিস সোনার বারসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে। ৫ জুন পুটখালী বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা বাবুল হোসেনকে(২৩) ১০টি সোনার বারসহ গ্রেফতার করে।
বিজিবি এবং পুলিশ এ সময় অনেকগুলো সোনার পণ্যের চালান আটক করে। তবুও থেমে থাকেনি সোনা চোরাচালান। ভারতে যাচ্ছে সোনা, আসছে মাদক এ রকম একটি কথা সীমান্ত এলাকায় মানুষের মুখে মুখে। ২ বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকলেও চোরাচালানিরা সোনা পাচারের  বৈধ রুট হিসাবে বেছে নিয়েছে বেনাপোল চেকপোস্টকে। গত দু’বছরে  বিজিবি, বিএসএফ ও এবং কাস্টমস ২০ কেজি সোনাসহ ২৫ জনকে আটক করেছে। তবে এসময় কোনও রাঘব বোয়াল ধরা পড়েনি। ২-৬ মাস জেল খেটে অনেকেই আবারও পুরনো ব্যবসায় নেমে পড়ে।
বেনাপোল কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুস সাদিক জানান, তার কাছে তথ্য আছে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের একটি সংঘবদ্ধ দল দীর্ঘদিন ধরে ভারতে সোনার বিস্কুট পাচার করে আসছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে তাদের সনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে সোর্স ও বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে গত সাত দিনে ৫ জন পাসপোর্টধারী যাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২৩ পিস সোনার বিস্কুট উদ্ধার করা হয়েছে  যার ওজন প্রায় ৬ কেজি। এ ছাড়া ভারতীয় কাস্টমস ২০টি সোনার বিস্কুটসহ একজন পাসপোর্টধারী যাত্রীকে গ্রেফতার করেছে।
৪৯ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে.কর্নেল  আরিফুল হক বলেন, ‘বেনাপোল সীমান্তের চোরাচালানি ঘাটগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এ কারণে  চোরাচালানিরা পাসপোর্ট ব্যবহার করে সোনা পাচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি’র সদস্যারা নোম্যান্সল্যান্ডে সন্দেহভাজনদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার শওকাত হোসেন জানান, প্রতিদিন বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রায় ৫ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে যায়। যাত্রীদের ল্যাগেজ স্কানিং করা হয়। ঢালাওভাবে সব যাত্রীর দেহ তল্লাশি করা সম্ভব নয়। শুধু সন্দেহভাজন যাত্রীদের কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ