শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সীতাকুন্ডে শিশুদের মৃত্যু ‘হামে’॥ ত্রিপুরা পাড়া কয়েক দশক ধরে টিকা কর্মসূচির বাইরে

স্টাফ রিপোর্টার : আলোচিত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্য সোনাইছড়ি পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়ার নয় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘হাম’কে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে দুর্গম ওই এলাকার ত্রিপুরা পাড়াটি সরকারের সার্বজনীন টিকা কর্মসূচির বাইরে ছিল বলেও উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুসন্ধানে। যে কারনে সেখানকার শিশুরা কখনোই টিকার আওতায় আসেনি।
অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে শিশুমৃত্যুর কারণ উদঘাটনে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করে এসব তথ্য জানান। তবে সারা দেশে হাম ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর) এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে অন্যান্যের মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক  (রোগ নিয়ন্ত্রণ) সানিয়া তাহমিনা, পরিচালক (প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরিচর্যা) এ বি এম জাহাঙ্গীর আলম, আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দীকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত মাসের শেষ দিক থেকে বারআউলিয়ার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার শিশুদের মধ্যে জ্বর, ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট ও  খিঁচুনির মত উপসর্গ দেখা দেয়া শুরু করে। কিন্তু অভিভাবকরা হাসপাতালে না যাওয়ায় চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি জানতে পারে গত বুধবার পর্যন্ত নয় শিশুর মৃত্যুর পর। গত ৮ থেকে ১২ জুলাই মারা যাওয়া এসব শিশুর বয়স ৩ থেকে ১২ বছর।  ত্রিপুরা পাড়ার মোট ৬৫ শিশু অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
‘অজ্ঞাত’ রোগে শিশুদের আক্রান্ত খবর পেয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) গবেষকদল ওই এলাকায় যায়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ‘শিশুরা দীর্ঘদিনের অপুষ্টির কারণে এক ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে’ বলে জানান আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর মৃত ও হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে এসব শিশু হামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত। তবে, অপুষ্টিতে ভুগছিল বলে দাবি করেন মহাপরিচালক। তিনি জানান, ওই পাড়াতে ৮৫টি পরিবার আছে এবং ৩৮৮ বাসিন্দা আছে। এদের কেউ হামের টিকা পায়নি। ওই পরিবারগুলোর কাছে কয়েক দশকেও টিকা পৌঁছে দিতে না পারায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে দুঃখও প্রকাশ করেন মহাপরিচালক। 
সীতাকুন্ডের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে হামের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। এটি (ত্রিপুরা পাড়া) একটি ছোট বিচ্ছিন্ন এলাকা এবং তারা কখনোই আধুনিক চিকিৎসা নেয়নি। আধুনিক চিকিৎসা নিলে হয়ত এ প্রাণহানি ঠেকানো যেত বলে মনে করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে মহাপরিচালক ঘটনার পর নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে বলেন, ত্রিপুরাপাড়ার ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং তার অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) চমৎকার দায়িত্ব পালন করেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ