শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অবিলম্বে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল করুন

স্টাফ রিপোর্টার : অবিলম্বে আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া এসোসিয়েশনের (সাফমা)। প্রয়োজনে এই আইন বাতিলের দাবিতে মহাসমাবেশ করবে সাংবাদিক সমাজ।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘সংবাদপত্রের স্বাধীনতা : আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭ ধারা’ প্রত্যাহারের দাবিতে সাফমা আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান। 

 সাফমা’র সভাপতি জাহিদুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন- মিডিয়া কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী ড. মিজানুর রহমান শেলী, নিউজ টু ডে’র সম্পাদক ও সাফমা’র সাবেক সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমদ, বিএফইউজে’র (একাংশ) সভাপতি ও একুশে টিভি’র সিইও মন্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বিএফইউজে’র (একাংশ) মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজে’র (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, ডিইউজে’র (একাংশ) সাবেক সভাপতি আবদুস শহিদ, বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাফমা’র সহ-সভাপতি রাশেদা আমিন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাফমা’র মহাসচিব নূরুল হুদা।

এই ধারার ব্যাপক অপপ্রয়োগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতান্ত্রিক চেতনা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্বকারী এই ধারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে – এতে অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অধিকারও বাধাগ্রস্ত হবে।

ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার। আমলাতন্ত্র হচ্ছে আলাদীনের দৈত্যের মত- চেরাগ যার হাতে থাকে, আমলাতন্ত্রও তার। ৫৭ ধারার মত কালো আইন থাকলে শুধু মিডিয়া জগতই নয়, সমাজের সব অংশেরই সুস্থতা ও বিকাশ বিঘিœত হবে। সরকারকে এটাই ভাবতে হবে যে তারা যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এ কালো আইন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হবে।

রিয়াজউদ্দিন আহমদ বলেন, ৫৭ ধারার মত কালো আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যেহেতু সূচিত হয়েছে, অবশ্যই তা সফল হবে। আন্দোলন আরো জোরদার করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিলকে দায়িত্ব দিলে তাদের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। ৫৭ ধারা বিশেষ ক্ষমতা আইনের চেয়েও বেশি দানবীয়।

তিনি আরও বলেন,সরকার কোন কারণে এখনও এই কালাকানুন ৫৭ ধারা বাতিল করছে না তা আমার বুঝে আসে না। সরকার নিজেও ঘোষণা দিয়েছে তারা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই ধারা বাতিল করবে। কিন্তু কি কারণে তা বিলম্ব করছে তা বুঝা কঠিন। তবে অন্যকোন নামে কিংবা ধারায় এই আইন যুক্ত করা হয় তাহলে আবারও দেশের সাংবাদিক সমাজ আন্দোলন করবে।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ৫৭ ধারার পক্ষে তথ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য। এমনিতেই সাংবাদিকরা সেলফ সেন্সরশিপের মধ্যে থাকেন- ৫৭ ধারা সেই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সংকট নিরসনে আমরা বিকল্প হিসাবে প্রেস কাউন্সিলকে শক্তিশালীকরণের দাবি তুলেছি। তিনি বলেন, ৫৭ ধারার অপসারণ চাই। এ পর্যন্ত এ আইনে দায়েরকৃত সব মামলা প্রেস কাউন্সিলের আওতায় নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন,এই ৫৭ ধারা বাতিলের জন্য আমরা সমাবেশ করেছি। সাংবাদিকরা আজ মামলার আসামী হয়ে রাজপথে নামবে। এটি কোনভাবে এই সরকারের কাছে কাম্য নয়। এটি যত দ্রুত সম্ভব বাতিল করতে হবে। এই ধারায় আসামী আছে তাদের কোনভাবেই হয়রানি করা যাবে না। এই আইনের অপব্যবহার হয়েছে অনেক বেশি।

 খন্দকার মুনীরুজ্জামান বলেন, সরকার এ আইন দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিয়েছে। ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিশোধমূলক স্পৃহা কিংবা ব্যক্তিস্বার্থে। সরকারকে বুঝতে হবে একটি মহল সাংবাদিক সমাজকে চাপে, নিয়ন্ত্রণে ও আতঙ্কে রাখতে চায়। 

সাংবাদিকতা পেশাকে ধ্বংস করার জন্যে যা যথেষ্ট। ৫৭ ধারা মেনে নেয়া হবে না। নতুন আইন প্রণয়নে স্টেকহোল্ডারদের মতামত অবশ্যই নিতে হবে। আইন চূড়ান্ত করার সময়ও তাদের মতামত নিয়েই করতে হবে। 

সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ৫৭ ধারা প্রতিবন্ধক -একটা জুজু। যদি সংশোধনই করতে হয় তবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে সেটা করতে হবে। মানহানি মামলা যা দায়ের করা হচ্ছে -তা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির পরিবর্তে অন্যরা করছেন। সাংবাদিকদের হয়রানি বন্ধ করে তাদের পেশাগত দায়িত্ব নির্বিঘœ ও নিশ্চিত করার পরিবেশ তৈরি করার জন্য তিনি আহবান জানান। 

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, এ পর্যন্ত ১৬ জন রিপোর্টারসহ অনেক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। এই ধারার ফলে মুক্ত স্বাধীন গণমাধ্যম আমরা পাচ্ছি না- বাড়ছে সেলফ সেন্সরশিপ। এই কালো আইন দ্রুত বাতিল করতে হবে। 

জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, ৫৭ ধারার অর্ধ শতাধিক সাংবাদিককে আসামী করা হয়েছে। পুলিশী হয়রানির কারণে সাহসী, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই কালাকানুনের প্রতিবাদ করতে হবে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। 

আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তারা গণমাধ্যমকে দমন করতে চায়। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বর্তমানের ৫৭ ধারা একই উদ্দেশ্যে প্রণীত। সাংবাদিক সমাজের বিভক্তির কারণে এটা নির্বিঘেœ অপব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ৫৭ ধারার বাতিলের আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক প্লাটফর্মে আনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য তিনি সাফমা নেতৃত্বের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

আব্দুস শহিদ বলেন, এই ৫৭ ধারা আইন সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রনের জন্য সরকার ব্রবহার করছে। সারা দেশে ইতোমধ্যে এই ধারায় শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও রয়েছেন। আমরা এই বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করেছি। আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। সরকার এই আইন বাতিলে টালবাহানা করছে। তথ্যমন্ত্রী বলছেন ,এই আইনে মাত্র ৫/৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি জাতীকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রন্তি করছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ