শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের শরণার্থীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের পাচার হওয়া শরণার্থীদের জরুরি ভিত্তিতে সুরক্ষা দিতে থাইল্যান্ড সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একই সঙ্গে থাইল্যান্ডে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেলসহ ৬২ জনকে শান্তি দেয়ার ঘটনার প্রশংসা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে থাইল্যান্ডের এটা একটি বড় পদক্ষেপ। এই বিচারের মাধ্যমে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত গ্যাংদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া উচিত সরকারের।

নিউ ইয়র্ক থেকে গতকাল সোমবার দেয়া এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে থাইল্যান্ডের এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় মানব পাচার বিষয়ক বিচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই এ মামলায় ১০২ অভিযুক্তের মধ্যে ৬২ জনকে অভিযুক্ত করে ব্যাংককের ফৌজদারি আদালত। যারা অভিযুক্ত হয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মানাস কোংপান। তাকে ২৭ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। আছেন নারাথিওয়াট প্রদেশের পাডাং বেসার জেলার সাবেক মেয়ার বান্নাজং পোংফোল। তাকে দেয়া হয়েছে ৭৮ বছরের জেল। একই এলাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র প্রাসিত লেমলেহকে দেয়া হয়েছে ৭৮ বছরের জেল। এ ছাড়া সাতুন প্রদেশের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা অংছোটিফানকে দেয়া হয়েছে ৭৫ বছরের জেল। 

এ ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, থাইল্যান্ডের মানব পাচারকারীদের কাছে এর মাধ্যমে একটি পরিষ্কার বার্তা পৌঁছে যাওয়া উচিত। সেটা হলো পদ বা পদবী বা মর্যাদা যা-ই হোক না কেন এ অপরাধে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডের সঙ্গখোলা প্রদেশের দক্ষিণে জঙ্গলে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে পাওয়া যায় ৩৬টি মৃতদেহ। পুলিশ বলে এসব মৃতদেহ বাংলাদেশী অথবা মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের। পাচার করার সময় হয়তো অনাহারে, না হয় রোগে ভুগে মারা গেছেন এসব মানুষ। অথবা মুক্তিপণ না পেয়ে তাদেরকে হত্যা করেছে পাচারকারীরা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নির্যাতনের ফলে পালাতে বাধ্য হয়েছে রোহিঙ্গারা। এক্ষেত্রে তাদের অনেকে পড়েছে পাচারকারীদের কবলে। একই পরিণতি হয়েছে বাংলাদেশের অনেক মানুষের। কিন্তু তাদেরকে ন্যূনতম সুরক্ষা দেয় নি থাইল্যান্ড।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মিয়ানমারে নিষ্পেষণের অভিযোগ তুললেও আইনগত কাগজপত্র ছাড়া যেসব রোহিঙ্গা থাইল্যান্ডে ধরা পড়ে তাদেরকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে দেখে থাইল্যান্ড। আটক রোহিঙ্গাদের রাখা হয় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে নাজুক সব বন্দিশিবিরে। এসব বন্দিশিবির মাত্রাতিরিক্ত বন্দিতে ঠাসা। সেখানে বাতাস প্রবেশ বা বের হওয়া কঠিন। রয়েছে অপর্যাপ্ত খাবার। সেখানে চিকিৎসা সেবা পায় না রোহিঙ্গারা। পায় না অন্যান্য সুবিধা। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বসার জায়গা পর্যন্ত পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আর তো ঘুমানো পরের কথা। এ জন্য নিরাপত্তা হেফাজতে অনেকে মারা গেছেন। তাই পাচারের শিকার মানুষদের পুলিশের অধীনে বা অভিবাসন বিষয়ক বন্দি শিবিরে না রাখার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাঠানো হয়েছে সমাজকল্যাণ ও মানবিক নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সরকার পরিচালিত এসব কেন্দ্রে তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত নয়। পাচারকারীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। বন্দিদের সেখান থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেয় তারা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাই রোহিঙ্গাদেরকে অভিবাসী শ্রমিকের মর্যাদা দেয়ার জন্য থাই সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে, তাদেরকে কাজ করারও অনুমতি দেয়া উচিত। যেহেতু মিয়ানমার সরকার বৈষম্যমুলকভাবে এসব রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পর্যন্ত দেয় না তাই থাইল্যান্ডের উচিত তাদেরকে শরণার্থী বিষয়ক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ