হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশ ও আদালতে আসামীদের জবানবন্দী
শরীয়তপুর সংবাদদাতা : শরীয়তপুরের শিশু লিজা হত্যাকান্ডের গ্রেফতারকৃত আসামীদের তথ্যানুযায়ী ডাক্তারদের দেয়া তথ্যের সাথে ভিন্নমত পোষণ করলেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এহসান শাহ। সোমবার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, লিজার লাশের ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সাবরিনা খান ও এহসানুল ইসলাম সাংবাদিকদের দেয়া তথ্য আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সঠিক নয়। তদন্ত শেষ না হতে সংবাদকর্মীদের কাছে অসচেতনভাবে তথ্য প্রদান করে গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে আরও অধিকতর তদন্ত শেষে হত্যাকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এদিকে এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর গতকাল সোমবার গ্রেফতারকৃত দুই আসামীকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করার আবেদন করে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। আসামীরা আদালত ও পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন বলে জানান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান।
আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গত ১৫ জুলাই শনিবার সকাল অনুমান সাড়ে ৯ টায় বাড়ি থেকে ১০ টাকা নিয়ে ভাড়ায় সাইকেল চালাতে যায়। লিজা ওই দিন স্কুলে যায়নি। লিজার মা-বাবার দেয়া তথ্য মতে প্রতিবেশী ফরিদ শেখকে আটক করা হয়। রোববার রাতে পুলিশের কাছে ফরিদ শেখ স্বীকারোক্তি দেয় তার অপর সহযোগী জাকির শেখ এর প্ররোচণায় ২২ জুলাই ৩টার দিকে লিজাকে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জাকির শেখের মামা আলাউদ্দিন শেখের ঘরের ভেতর নিয়ে তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে লিজাকে জাকির দু’পায়ে জাপটে ধরে ও ফরিদ গলা টিপে হত্যা করে বলে পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দেয়। পরে দু’জনে মিলে লিজার লাশ কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে ভ্যানে করে ওইদিন রাত ৮টার দিকে সখিপুর থানার ছৈয়ালকান্দি গ্রামের বুলবুল সরদারের পাট ক্ষেতে ফেলে চলে যায়।
সখিপুর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, (১৫ জুলাই) শনিবার শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নরে সরদার কান্দি গ্রামের লেহাজ উদ্দিন শেখের মেয়ে ও সখিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী লিজা আক্তার স্কুল ছুটির পর বাইসাইকেল নিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় বের হয় লিজা আক্তার এরপর সে আর বাড়ি ফিরেনি। এর পর অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও লিজাকে না পেয়ে পরের দিন ১৬ জুলাই সখিপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। ৮ দিন পর গত শনিবার ২২ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টায় বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে ছৈয়ালকান্দি গ্রামের একটি পাট ক্ষেতে পানিতে লিজার লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। লিজার পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিজার পরনের পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেন। স্থানীয় লোকজন সখিপুর থানা পুলিশকে খবর দিলে পাট ক্ষেত থেকে লিজার গলিত লাশ উদ্ধার করে। পরে লাশের ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। লিজার ময়না তদন্ত করার সময় শরীরে কিডনি, লিভার, ফুসফুসসহ কোন অঙ্গ পাওয়া যায়নি বলে জানান ময়না তদন্ত কারী চিকিৎসকরা। পরে ডিএনএ পরিক্ষার জন্য ঢাকায় আলামত পাঠানো হয়। এ বিষয়ে পুলিশ ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও ফরেন্সিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কোন কথা বলতে রাজী হননি ময়না তদন্তকারী ডাঃ এহসানুল ইসলাম।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৩ জুলাই রোববার রাতে লিজার বাবা লেহাজ উদ্দিন শেখ বাদী হয়ে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। গতকাল সোমবার গ্রেফতারকৃত আসামী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করার আবেদন করে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুজাহিদুল ইসলাম আসামী ফরিদ শেখ ও জাকির শেখের জবানবন্দী রেকর্ড করেণ। পুলিশ জানায় দু’জনই আদালতের কাছে এবং আমাদের কাছে স্বীকারোক্তিমূল জবানবন্দী দিয়েছে।
শরীয়তপুরের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহণ করার আবেদন করে শরীয়তপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুজাহিদুল ইসলাম দুই আসামীর জবানবন্দী রেকর্ড করেছেন। এতে তারা হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে শরীয়তপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ এহসান শাহ শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের বরাত দিয়ে বলেন, লাশটি প্রায় সপ্তাহ ধরে কাদা-পানিতে থাকার কারণে পচন ধরে লিজার জরায়ু, লিভার, ফুসফুস, কিডনি ও হৃদপিন্ডসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ পচে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। তাই পূর্ণ তদন্ত ও ফরেন্সিক রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক পূর্ণ পরীক্ষা ও তদন্ত শেষ না হতে সংবাদকর্মীদের কাছে অসচেতনভাবে তথ্য প্রদান করে গোটা জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।