বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কেশবপুরে প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা প্লাবিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ

কেশবপুর (যশোর) : (১) বিশুদ্ধ পানির কলসি নিয়ে আসছে বানভাসিরা (২) রাস্তার পাশে টংঘর বাধায় ব্যস্ত বন্যার্তরা (৩) বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে বানভাসিরা ও (৪) অঘোষিতভাবে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মোল্যা আব্দুস সাত্তার, কেশবপুর (যশোর) : কেশবপুরে হরিহর ও বড়িভদ্রা নদীর উজানের পানি কেশবপুর শহরে ওঠা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শহরের পানি। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয়নি। প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কেশবপুর পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এক লাখে দাঁড়িয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত ১০টির স্থলে ১৬ টিতে হয়েছে।  ১৪ টি সরকারি প্রাথমিক ও ১৮ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিত বন্ধ রয়েছে। গত ১৯ জুলাই থেকে কেশবপুরে বন্যা পরিস্থিতি শুরু হলেও বানভাসিদের জন্য  একদিন ত্রাণ সামগ্রী জুটেছে। সরকারিভাবে প্লাবিত পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার দেখানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত  সরকারিভাবে ১ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।  বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোর দাবি, ত্রাণ চাই না পানি সরাও মানুষ বাঁচাও। এদিকে, শুকনা মাটির অভাবে উপজেলার মধ্যেকুল গ্রামের আলী আকবরের স্ত্রী জামেলা বিবি গত ২৫ জুলাই বাগের হাট জেলার শাবকাটি গ্রামে তার জামাই বাড়িতে বেড়াতে যায় ওই সময় হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। সংবাদ পেয়ে আকবর আলী পরিবার ওই লাশ মধ্যেকুল গ্রামে আনেন। পানিতে ডুবে যাওয় ওই গ্রামে শুকনা মাটি না থকায় মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি গ্রামের জামেলা বিবির পিতার বাড়িতে তার লাশ দাফন করা হয়।এছাড়া দোরমুটিয়া গ্রামের সখিনা বেগমকে অন্যতও দাফন করা হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক পরিবার শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেশবপুর শহরে কোন বাসা বাড়িতে স্থান না পেয়ে অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে।  

বুধবার স্থানীয় এমপি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের পক্ষে মন্ত্রীর সহকারী সচিব মঞ্জুরুল হাফিজ ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮শ পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন। মুষল ধারার বৃষ্টিতে কেশবপুর পৌরসভা ও উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের প্রায়  ২০ হাজার পরিবারের এক লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।  কেশবপুর কলেজ, কেশবপুর পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আলীয়া মাদ্রাসা, মধু শিক্ষা নিকেতন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালিয়াডাঙ্গা ব্রীজ, গণসাহায্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসী পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়াও যশোর সাতক্ষীরা সড়কের মধ্যকুল নামকস্থানে দুই পাশে প্রায় ২ শতাধিক পরিবার টংঘর তৈরী করে আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে ১০ জন ট্যাগ অফিসার নিযুক্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা নিরুপনে কাজ শুরু করেছে। কেশবপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর পাঁজিয়া সড়ক, কেশবপুর সাগরদাঁড়ি সড়ক প্লাবিত হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল, ভবানিপুর, হাবাসপোল, সাহা পাড়া, বালিয়াডাঙ্গা আলতাপোল, সাবদিয়া, বাজিতপুর, ব্রম্মকাটি, রামচন্দ্রপুর, রাজনগরবাঁবাবর্শি, সাগরদত্তকাটি, বেলোকাটি, পাঁজিয়া, মান্দারডাঙ্গা, নারায়নপুর, কৃষ্ণনগর, সারুটিয়া, মঙ্গলকোট, রেজাকাটি, বগা, নেহালপুর, আওয়ালগাতিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ৪০ গ্রাম সম্পূর্ণ ও আংশিক প্লাবিত হয়েছে। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন (ভারপ্রাপ্ত) সাংবাদিকদের জানান, প্রবল বৃষ্টিতে ২হাজার ৫শ মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত হওয়ায় অবকাঠামোসহ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্র ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি।  উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ আবু শাহীন জানান, প্লাবিত এলাকায় ১০ টি মেডিকেল টীম কাজ করে চলেছে। ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক শিশু ও রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে জরুরি মেডিকেল টীমের মাধ্যমে। কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম জানান, হরিহর নদীর উপচে পড়া পানিতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে চার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।  

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। যে সকল প্লাবিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে সেখানে ক্লাস নেয়া যাবে না বিধায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয়। তবে শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির রয়েছেন। এদিকে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র  নিয়ে যারা সংবাদ লেখেন  সে সকল সাংবাদিকদের মধ্যে অন্ততঃ ১০  সাংবাদিক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়ি ছেড়ে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। অনেকে নিজ বাড়িতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ