বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হজ্ব ফ্লাইটে জটিলতা আরও বাড়ার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার : বিমানের হজ্বযাত্রী সংকটের সমস্যার সমাধান দু’একদিনের মধ্যে না হলে হজ্ব ফ্লাইটে জটিলতা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এসব সমস্যা সমাধান করতে ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে আর শিডিউল ফ্লাইটেও হজ্বযাত্রীদের বহন করা হবে বলে তিনি জানান।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে হজ্বযাত্রী পরিবহন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা শেষে বিমানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

এতগুলো সমস্যার জন্য দায় কার- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনই দায় দিয়েন না, দায়িত্ব শেষ হোক এরপর দিয়েন।’

আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না মন্ত্রী কিংবা সচিব। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আপনাদের কাজের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে কি না’।

জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রেগুলার মিটিং করছি। সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তিনজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।’

সমস্যার সমাধানের বিষয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের বার্তা কী- এ বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের বার্তা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ উই শ্যাল ওভার কাম।’

যাত্রী সংকটে এখন পর্যন্ত বিমানের ১২টি এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের তিনটি হজ্বফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এতে বিমানের ক্যাপাসিটি লস হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮০ জন, সৌদিয়ার লস হয়েছে এক হাজার ২০০ জন। মন্ত্রীর দেয়া এমন তথ্য প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসে, এরপরও কি কোনো হজ্ব ফ্লাইট খালি যাবে। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ফ্লাইট খালি যাবে না এটা তো এখনই বলতে পারছি না, ফ্লাইট তারা প্রিপেয়ার (উপযোগী) করতে পারছে। আজকের পর ক্যানসেল হবে কি না- তাও বলতে পারছি না।’

বিমানমন্ত্রী বলেন, ‘দু-একদিনের মধ্যে এটি সমাধান করতেই হবে, পরিস্থিতি জটিল হোক আর যাই হোক, আমরা কাজ করছি। আমি এটা মনে করি।’

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবে চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স সমান অনুপাতে হজ্বযাত্রী পরিবহন করছে।

২৪ জুলাই থেকে হজ্ব ফ্লাইট শুরু হয়েছে। হজ্ব শেষে ফিরতি ফ্লাইট ৬ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ৫ অক্টোবর।

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে বিমানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিমান পরিকল্পনার সময় এ লস হতে পারে ধারণা করে অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ-কালকের মধ্যে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তখন এটা একটা সমস্যা হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।’

‘বাংলাদেশ হজ্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রশংসা অর্জন করেছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না হজ্ব ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের সমস্যা-সংকট সৃষ্টি হোক। কিন্তু এ বছর খুব দুর্ভাগ্যজনকভাবে কতগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। যেগুলো আমাদের হিসেবের মধ্যে ছিল না। যেখানে প্রতি বছর প্রথম ১০ দিনে আমাদের বড় একটি সংখ্যক হাজি চলে যায়, এবার তা সম্ভব হয়নি।

বিমানমন্ত্রী বলেন, যেখানে ভিসা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৯২ জনের, সেখানে হাজি (হজ্বযাত্রী) গেছেন ২৯ হাজার ৮৩৯ জন। ১৭ হাজার হাজি যাদের যাওয়ার কথা ছিল তারা যেতে পারেননি। এখন জেদ্দায় অবশিষ্ট ৪৭ হাজার ৭৬১ জন হাজিকে পরিবহন করা যাবে। বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স তাদের পরিবহন করবে। আমার চাই নির্বিঘ্নে এ পরিবহন সম্পন্ন হোক। ২৬ আগস্ট বিমান এবং ২৮ আগস্ট সৌদি এয়ালাইন্স সৌদি আরব যাওয়ার শেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বলেও জানান মন্ত্রী।

মন্ত্রী আরো বলেন, এবার সৌদি সরকার মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি করেছে। এতে ৯১টি এজেন্সির ১৮ থেকে ২০ হাজার হজ্বযাত্রীর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। যদিও সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্য হচ্ছে, বারকোড তারা পাচ্ছেন’। 

তিনি আরও বলেন, হজ্ব প্যাকেজ ঘোষণার বহু পরে সৌদি কর্তৃপক্ষ যারা ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজ্ব করেছেন তাদের কাছ থেকে দুই হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকার কিছু বেশি) বেশি দাবি করে। এ ধরনের হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ছয় থেকে সাত হাজারে দাঁড়াবে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য তারা এ ব্যবস্থা করেছে।

‘এ ব্যাপারে আমাদের হজ্ব কাউন্সিলর ও আমাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বাড়তি রিয়ালের বিষয়ে সব দেশের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ অর্থ যদি দিতেই হয় তবে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি তারা যেন এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।’

ই-ভিসার প্রিন্ট সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, কোনো গ্রুপে ১০০ জন থাকলে সেখানে ১৬ জনের ভিসা না হলে পুরো গ্রুপের ফ্লাইট ক্যানসেল হয়ে যায়। এ সমস্যা দেখা গেছে।

এ সমস্যা সমাধানে সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে মেনন বলেন, ‘হাজিদের বলা হচ্ছে, আপনারা যদি ভিসা না করে থাকেন তাহলে ভিসা করে নিন। আর ভিসা করে থাকলে ফ্লাইট নিন। যদি ফ্লাইট না নেন আপনার যাওয়া নিয়ে অসুবিধা হতে পারে। সবার কাছে টেক্সট মেসেজ পাঠানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এবার সৌদি সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে বিমানের স্লট বৃদ্ধির আবেদন করা হবে।

‘সিডিউল ফ্লাইটে অন্যযাত্রী বাদ দিয়ে হজ্ব যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত হয়েছে’ জানিয়ে মেনন বলেন, এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। এটি সৌদিয়া করছে এবং বিমানও করছে।

‘সৌদি হজ্ব সিস্টেমে এনরোলমেন্ট হয়েছে ৯২ হাজার পাসপোর্ট কিন্তু ভিসা হয়েছে ৪৬ হাজার। দ্রুত ভিসা ছাড় করতে হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অ্যাম্বাসির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। যে জটিলতা হয়েছে তা দূর করে নির্বিঘ্নে হজ্বযাত্রী পরিবহন করতে আমরা সক্ষম হব’- আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।

সভায় বিমান ও পর্যটন সচিব এস এম গোলাম ফারুক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ