নরপশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক
শিশুরা ফুলের মতো সুন্দর। এদের নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকালে মানুষের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শিশুরা কেবল আপাত চোখজুড়ানো উপকরণই নয়, এরাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। এদের ঘিরেই আমাদের সবস্বপ্ন। তাইতো কবি বলেছেন, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সবশিশুরই অন্তরে’। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষের মুখোশ পরে একশ্রেণির নরপশু লুকিয়ে থেকে বারবার কলঙ্কিত করছে সমাজ ও জাতিকে। ধূলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে মানুষের সবসম্মান আর মর্যাদা। এই পশুদের জন্য শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পাঠশালা ও খেলাধূলোর ময়দানে যেতেও ভয় পাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। কিন্তু কেন? কারা দায়ী এজন্য? গত ১ জুলাই মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ২২৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। সারাদেশে অব্যাহত শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ৬ টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে। শ্লীলতাহানি ছাড়াও মোট ১৫৮ শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে ৩ শিশু। অন্যরা মারাত্মকভাবে আহত। নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে ৩২ জন নারীশিশু। ৬৯ জন পুরুষশিশু। প্রকাশিত তথ্যে বাকি ৫৭ শিশুর নাম ও লিঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া গ্রাম-গঞ্জে ঘটে যাওয়া শিশুর শ্লীলতাহানির সবঘটনা প্রকাশ করা হয় না বা চেপে যাওয়া হয় নানা পারিপার্শ্বিক কারণেও। তাই মাত্র ৬ টি দৈনিকে প্রকাশিত শিশুর শ্লীলতাহানির ঘটনাই শেষ নয়। আরও অনেক ঘটনা ধামাচাপা থেকে গেছে স্বাভাবিক কারণে।
বয়স্ক নারীধর্ষণের অনেক ঘটনা যেমন চেপে যাওয়া হয় বিপত্তি বা কেলেঙ্কারি এড়ানোর জন্য; তেমনই শিশুর শ্লীলতাহানির সব ঘটনা পত্রপত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে আসে না। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো: শিশুনির্যাতন বা শিশুর শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলা হলেও তার অগ্রগতি অনেক কম। অল্পসংখ্যক অপরাধী বিচারের আওতায় আসে। বাকিরা থেকে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তাই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শিশুনির্যাতনের বিচার হওয়া উচিত। এছাড়া বিশেষ উদ্যোগ ব্যতীত শিশুর শ্লীলতাহানির মতো অপরাধের উপযুক্ত বিচার হওয়া সম্ভব নয় বলে আমরা মনে করি। আন্তর্জাতিকভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও আমাদের দেশে এখনও অনেক শিশুই বাসাবাড়ি, কলকারখানায় শ্রম দেয়। এরা উপযুক্ত পারিশ্রমিকতো পায়ই না; এরপর শারীরিক নির্যাতন তাদের ওপরি পাওনা হিসেবে জোটে। বাসাবাড়ি ও কলকারখানায় কর্মরত শিশুরাই শ্লীলতাহানির শিকার হয় বেশি। এছাড়া একশ্রেণির প্রাইভেট টিউটর ও স্কুলশিক্ষকও নানা অপকৌশলে শিশুদের শ্লীলতাহানি করে। দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু কিছু পরিবারে ঘনিষ্ঠ জনদের কাছেও শিশুরা যৌননির্যাতনের শিকার হয়, যা প্রায়ই প্রকাশ হয় না।
যাই হোক, এমনিতেই শ্লীলতাহানি মারাত্মক অপরাধ। এরপর শিশুর শ্লীলতাহানি আরও জঘন্যতম অপরাধ। যারা শিশুর শ্লীলতা কেড়ে নেয় তারা পশুর চাইতেও অধম। এদের সমাজে বেঁচে থাকবার অধিকার নেই। মানুষ নামের এই পশুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে আমাদের সভ্যতাও দায়মুক্ত হতে পারে না। যারা ৩/৪ বছরের শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং এরপর তাদের হত্যা করে তারা যাই হোক মানুষ পদবাচ্য নয়। এই কুলাঙ্গারদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিয়ে শিশুদের বেঁচে থাকবার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি। আর এ উদ্যোগ নিতে হবে ক্ষমতাসীনদেরই।