শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এগার বছরে লক্ষাধিক কাশ্মীরী নিহত বাস্তুচ্যুত এক লাখ -মানবাধিকার গ্রুপ

১৩ আগস্ট, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস : স্বাধীনতাকামীদের মোকাবেলার কথা বলে জম্মু-কাশ্মীরে এবার সামরিক রোবট মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কাশ্মীরের জন্য চাওয়া ৫৪৪টি রোবটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রোবট সেনা জওয়ানদের মতো নিরাপত্তা নজরদারি এবং অভিযানের কাজ করবে। সশস্ত্র জঙ্গি হামলা, কিংবা পাথর নিক্ষেপে সেনাদের হতাহত হতে হয় বলে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে রোবটের কথা চিন্তা করা হয়েছে।
‘আফজাল গুরুর ফাঁসি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক’ শীর্ষক নিবন্ধে বিশ্বখ্যাত বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতী রায় কাশ্মীর সম্পর্কে সেই ২০১৩ সালে বলেছিলেন, ‘আবু গারিবের আদলে এখানকার আর্মি ক্যাম্প ও টর্চার কেন্দ্রগুলোই কাশ্মীরিদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বার্তাবাহক। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রামরত কাশ্মীরিদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মুক্তিকামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ হাজারকে গুম করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে আরও অন্তত এক লাখ লোক।’
এখন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, যেভাবে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি চলছে তা ঠিক নয়। ওই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও রাষ্ট্রীয় রাইফেলস রয়েছে যারা জঙ্গিদের মুখোমুখি হচ্ছে। এরকম অবস্থায় রোবট রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের খুব সহায়ক হবে।
৮ মাস ধরে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা-ডিআরডিও’র (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন)তত্ত্বাবধানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবট উন্নয়ন কেন্দ্র-সিআইআইআর (সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স অ্যান্ড রোবটিকস) ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য রোবট তৈরীর ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বছরের শুরুর দিকে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিল, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে সক্ষম কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তাসম্পন্ন সামরিক রোবট তৈরী করছে ভারত।
মানবাধিকার সংস্থা, ইতিহাসবিদ আর রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর ক্রমেই ভারত-পাকিস্তানের সমরাস্ত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর তাতে প্রাণ হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। মানবাধিকারকর্মীদের দাবি অনুযায়ী, ’৪৭-এর পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন আরও দশ লাখের মতো।
 খোদ ভারতের সরকারি হিসাবে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক রিপোর্টে জানাচ্ছে, ১৯৯০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে কেবল ১১ বছরেই ৪৩,৪৬০ জন কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক কাশ্মীরী। আর মানবাধিকার কর্মীদের দাবি অনুযায়ী ওই ১১ বছরে নিহতের সংখ্যা ১ লক্ষাধিক এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা আরও ১ লাখ।
এই মুর্হর্তে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে ‘স্বাধীনতাকামীদের’ নির্মূল করতে সেখানে ‘অপারেশন অল আউট’ পরিচালনা করছে ভারতীয় বাহিনী। চলতি বছর এ পর্যন্ত তাদের হাতে হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে অন্তত ১৩০ জন।
এবার নতুন করে সামরিক রোবট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জানা গেল।
এদিকে জম্মু-কাশ্মীরে দু’টি স্থানে আলাদা সংঘর্ষে তিন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ানে স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই সেনা এবং পুঞ্চে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে গুলীবর্ষণের ঘটনায় এক সেনা নিহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার গণমাধ্যমে প্রকাশ, সোপিয়ানের অবনীরা গ্রামে গেরিলাদের লুকিয়ে থাকার খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে তল্লাশি অভিযান শুরু করলে গেরিলারা গুলীবর্ষণ শুরু করে। এ সময় দুই সেনা জওয়ান নিহত এবং এক ক্যাপ্টেনসহ অন্য তিনজন আহত হন।
অন্যদিকে, বিকেলে কৃষ্ণা ঘাঁটিতে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পাক বাহিনী ভারতীয় সেনা চৌকি লক্ষ্য করে গুলীবর্ষণ করলে এক সেনা জওয়ান নিহত হন। সুবেদার জগরাম সিং তোমর (৪২) নামে নিহত ওই জওয়ানের বাড়ি মধ্যপ্রদেশে।
গত শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ভারতীয় সেনা চৌকি লক্ষ্য করে গুলী চালাতে শুরু করে পাক বাহিনী। ভারতীয় সেনাও পাল্টা গুলী চালিয়ে জবাব দেয়।
এদিকে, গতকাল রোববার সকালে বান্দিপোরার জেলার হাজিন এলাকায় স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পুলিশ এবং এক সেনা আহত হয়েছেন। ওয়াহাব পাররে মহল্লাতে ১৩ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানরা তল্লাশি চালানোর সময় গেরিলারা হামলা চালালে রাজ কুমার নামে এক সেনা জওয়ান এবং মুখতার আহমেদ ও মুহাম্মদ আশরাফ নামে দুই পুলিশ আহত হন। নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। পাক বাহিনীর গোলাগুলীতে গতকালই ৪০ বছর বয়সী এক বেসামরিক নারী নিহত হয়েছিলেন।
কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য ‘অপারেশন অলআউট’-কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ ২৫০ জনের বেশি সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে গত ৭ মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ১২৫ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ