বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

হজ্বের নিয়ম-কানুন

-মো: আবুল হোসাইন চৌধুরী

॥ পূর্বপ্রকাশিতের পর ॥
মুযদালিফা : ‘মুযদালিফা’ ইযদেলাফ শব্দ হতে নির্গত। যার অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা। আরেক অর্থ হলো অন্ধকার রাতে একত্রিত হওয়া। মুযদলিফা হলো মিনা এবং আরাফাহ’র মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি ময়দান। এ ময়দান মিনা থেকে তিন মাইল পূর্ব দিকে অবস্থিত। যেখানে হাজীগণ আরাফাতে অকুফ করার পর রাত যাপন করেন। আরাফাহ ময়দান থেকে ফিরে মুযদালিফায় খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন করতে হয়। ৯ তারিখ বাদ মাগরিব আরাফাহ’র ময়দান থেকে এসে রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করতে হয়। আরাফাহ ময়দান থেকে ফিরে মুজদালিফায় খোলা আকাশের নীচে রাত যাপন করতে হয়। এখানে ধনী-গরীব, রাজা-প্রজা সকলেই সমান। কাজেই মিসকীনের ন্যায় সবাই একই অবস্থায় রাত যাপনের মধ্য দিয়ে মূলত এ সত্যই প্রকাশ করা যে, আল্লাহর কাছে সবাই মিসকিন। সহায়-সম্বলহীন এবং প্রত্যেকেই তাঁর অনুগ্রহপ্রার্থী।
মুযদালিফা অভিমুখে রওয়ানা :
* সূর্যাস্তের পর আরাফাহ বা রাস্তার কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুযদালিফার দিকে চলুন।
দ্বিতীয় কাজ
৩। মুযদালিফায় অবস্থান : (ওয়াজিব)
* মুযদাফিলায় শেষ প্রান্তে মিনা প্রান্তরের কাছাকাছি অবস্থান নিতে পারলে ভাল।
মুযদালিফায় করণীয় :
* মুযদালিফায় এসে এক আজান ও দুই ইকামাতে এশার ওয়াক্তে প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরয নামাজ আদায় করুন এবং পরে এশার ৪ রাকাত ফরয ও তিন রাকাত বেতের নামাজ আলাদা আলাদা আদায় করুন।
* ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীফ পড়ুন।
* দুই নামাজের মাঝে কোন প্রকার সুন্নত, নফল পড়বেন না।
* নামাজের পর কেবলামুখী হয়ে বিনয় সহকারে মুনাজাত করা।
* রাতে মুযদালিফায় অবস্থান করুন।
* টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
* সকালে সূর্য উদয়ের পূর্বে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়া।
কংকর সংগ্রহ :* মিনা অথবা মুযদালিফা থেকেও কংকর সংগ্রহ করতে পারেন।
* ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে মীনায় অবস্থিত তিনটি শয়তানকে কঙ্কর মারার জন্য জন্য ৭০ টি কংকর (ছোলা বুটের সমান) সংগ্রহ করুন।
* মিনা অথবা মুযদালিফা থেকেও কংকর সংগ্রহ করতে পারেন।
মাসআলা : ক. মুযদালিফায় রাত যাপন ওয়াজিব। অন্যথায় দম দিতে হবে।
খ. মহিলা, শিশু, অসুস্থ এবং দুর্বল লোকদের জন্য রাতের শেষ ভাগে মীনায় যাওয়ার অনুমতি আছে।
গ. মুযদালিফায় অবস্থানকালে বেতের ব্যতীত কোন নফল নামাজ নেই।
ঘ. মুযদালিফায় সম্পূর্ণ এলাকা রাত যাপনের স্থান। এর জন্য বিশেষ স্থান নির্দিষ্ট নেই।
মুযদালিফার রাতের ফযিলত : কুরআন মজীদে বলা হয়েছে, তোমরা যখন আরাফাতে অবস্থান সম্পন্ন করবে, তখন মাশআরুল হারামের কাছে আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করবে। (সূরা আল বাকারা-১৯৮)
মাশআরুল হরাম মুযদালিফার একটি পাহাড়কে বলা হয়, যার অপর নাম হলো ক্বাযাহ। আল্লাহর নবী  আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে রাত যাপন করেছিলেন এবং তিনি এটাও বলেছিলেন আমি এখানে রাত যাপন করছি, তবে সমস্ত মুযদালিফার এলাকা রাত যাপনের স্থান।
হজ্জের মৌসুমে মুযদালিফায় রাতের ফযিলত ক্বদরের রাতের চেয়েও উত্তম। যত বেশী সম্ভব রাত্রি জাগরণ করে এবাদত বন্দেগী করবেন।
এখানে প্রাণ ভরে দোয়া করা উচিত।
১০ যিলহজ্জ ইয়াওমুন নাহার
স্থান : মুজদালিফা-মিনা, মিনা-মক্কা শরীফ, মক্কা শরীফ-মিনা
মুযদালিফা থেকে মীনা ফেরার পর এ দিনটি হাজীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বেশ পরিশ্রমের। এদিনের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত ধীরে-স্থিরভাবে, নিয়মমাফিক ও তারতিলের সাথে আঞ্জাম দিতে হবে। হাজীদের জন্য এদিনের করণীয় বিষয়গুলো এখানে উল্লেখ করা হলো-
* ১০ যিলহজ্জ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান।
* সুবহে সাদেকের পর অন্ধকার থাকতে প্রথম সময় ইমামের সাথে অথবা একাকী যেমন সুযোগ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করুন।
* ফজরের নামাজ পড়ে মাশআরে হারামের কাছে কেবলামুখী হয়ে লাব্বাইকা অথবা তসবীহ তাহলীল পড়বেন এবং হাত উপরে তুলে দোয়ায় লিপ্ত হবেন।
মিনা : হজ্জ এবং মক্কার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো মিনা। মক্কা মুয়াযযমা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পূর্বে অবস্থিত একটি মাঠের নাম। হজ্জের কার্যাদি সম্পাদনকালে বেশিরভাগ সময় মিনাতেই কাটাতে হয়। হাজীদের জন্য ৮ যিলহজ্জজ যোহর থেকে ৯ যিলহজ্জ ফজর পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ত নামায মিনায় আদায় করা সুন্নাত এবং সেখানে সেদিন রাত্রি যাপন করাও সুন্নাত। ৮ যিলহজ্জ  তারিখকে ‘ইয়াওমুত তারবিয়াহ’ বলে। ‘তারবিয়াহ’ মানে পানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে পানির স্বল্পতার কারণে এই দিবসে হাজীরা মিনা থেকে পানি সংগ্রহ করে আরাফাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেন। ৯ তারিখ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে পরের দিন সকালে পাথর নিক্ষেপ করা ও কুরবানী করা এবং পরবর্তী দুই বা তিন দিন মিনাতেই রাত্রি যাপন করতে হয়। মিনা হলো ‘মানহার’ বা কুরবানীর স্থান। মিনা এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত করা। মিনায় অধিক সংখ্যক কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা হয় বলে একে মিনা বলা হয়। কুরবানীর দিনসহ আইয়্যামে তাশরীক মিনায় থাকার পর হাজীরা মক্কায় ফিরে আসেন।
মিনা অভিমুখে রওয়ানা
* শেষ রাতে অন্ধকার থাকা অবস্থায় ফজর নামাজ পড়া।
* ১০ যিলহজ্জ  ফজরের নামাজান্তে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মিনার দিকে যাত্রা করবেন।
* মুজদালিফা থেকে সূর্যোদয়ের একটু আগে যাত্রা করা সুন্নত।
* এ অবস্থায় দরূদ, এস্তেগফার ও তালবিয়া পড়বেন এবং মন উজাড় করে দোয়া করতে থাকবেন।
* মিনায় আগমন।
জিমার বা জামরাত বা শয়তান : মিনায় তিনটি স্থানে মানুষ সমান উঁচু স্তম্ভ নির্মিত রয়েছে। সেখানে রমী বা কংকর নিক্ষেপ করা হয়। ৫ম-তলা জামারা ব্রীজ হচ্ছে অনবদ্য স্থাপত্য। এটি এক দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ২০০ কিলোমিটার। নীচতলা, প্রথমতলা, দ্বিতলা, ত্রি-তলা, ৪র্থ তলা ও ৫মতলা দিয়ে পাথর মারতে হয়। ফলে হাজী সাহেবদের কষ্ট কম হয়।
হাদীস : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ  আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তুমি জিমরায় রমি করলে তা তোমার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে। (কাশফুল আসতার-১১৪০)
কংকর নিক্ষেপ : মুযদালিফা থেকে ফিরে মিনায় গিয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়, এই পাথর নিক্ষেপ করাকেই জামরাহ বলা হয়। শয়তান ইব্রাহীম (আ:) কে এ তিনটি জায়গায় বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। ইব্রাহীম (আ:) শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারেন এবং তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করেন। সেই তিনটি স্থানে প্রতি বছর হাজীগণ পাথর নিক্ষেপ করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে বাঁধা দেয়ার শয়তানী তৎপরতা প্রতিরোধের প্রতীক হলো মিনার জামরায় পাথর মারা। উক্ত স্থানে শয়তান বর্তমান থাকে না তবুও পাথর নিক্ষেপ করে সৈনিকদের ন্যায় চাঁদমারী করতে হয়। আবরাহা বাদশাহর সৈন্য সামন্ত কা’বা ঘর ধ্বংস করার জন্য এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছিল। প্রত্যেকটি পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর সৈনিকগণ বলে ওঠে: ‘আল্লাহু আকবর’ “আল্লাহর মহান শয়তান ও তার অনুসারীদের মুখ ধূলায় মলিন হোক।” পাথর নিক্ষেপ করার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সৈনিক এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে যে, হে আল্লাহ! তোমার দীন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য কিংবা তোমার আওয়াজকে স্তব্দ করার জন্য যে-ই চেষ্টা করবে আমি তোমার বাণীকে উন্নত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার বিরুদ্ধে এমনি করেই লড়াই করব। ঠিক এভাবে হজ্জের প্রতিটি বিধান পালনের মাধ্যমে আল্লাহর বান্দা মূলত এ ঘোষণাই দিয়ে থাকে যে, আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আখিরাতে মুক্তি পাওয়া ও জান্নাত লাভ করা।
প্রথম কাজ
৪। বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ : (ওয়াজিব)
* যোহরের পূর্বে (তবে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়) ভিড় বা দুর্বলতার কারণে অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা রাতেও ৩টি জামরার মধ্যে ১ম টিতে অর্থাৎ জামরাতুল আক্বাবায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করুন। এটা মীনার শেষপ্রান্তে মক্কার নিকটে অবস্থিত। সেখানে চিহ্ন দেয়া আছে। প্রথম আসবে ছোট শয়তান, তারপর মধ্যম শয়তান এবং তার পর বড় শয়তান। আজ কেবল বড় শয়তানকেই লক্ষ্য করে কংকর মারবেন।
মাসআলা : ক. ১০ তারিখ সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় শয়তানকে কংকর মারার সময়।
খ. একটি করে কংকর মারবেন। এক সাথে সাতটি কংকর মারলে একটি গণ্য হবে।
গ. কংকর যেন চারপাশের গোলাকার বেষ্টনির ভিতরে পড়ে। এর বাইরে পড়লে আবার কংকর মারতে হবে। সেজন্য অতিরিক্ত কংকর সাথে রাখবেন।
ঘ. প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় অত্যন্ত আদবের সাথে “আল্লাহু আকবর” বলতে হবে।
ঙ. কংকর এতটুকু বড় হলে যেন ভিড়ের সময় দূর থেকে নিক্ষেপ করলে গোলাকার বেষ্টনির ভিতর পড়ে।
চ. কংকর ছাড়া অন্য কোন কিছু যেমন জুতা, স্যান্ডেল ও হাড় ইত্যাদি মারা নিষেধ।
ছ. আল্লাহর রাসূল  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সাবধান হজ্জ পালনের ব্যাপারে তোমরা বাড়াবাড়ি করোনা। দ্বিতীয় জামরাতে কংকর মারা ইবাদত। ইবাদতে যেন বিঘœ না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
জ. মহিলা, অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিরা কংকর মারতে না যাওয়া উত্তম। কারণ প্রচন্ড ভিড়ে তাদের যে কোন অঘটন ঘটার আশংকা থাকতে পারে। এমতাবস্থায় কোন লোককে দিয়ে রমঈর (কংকর মারা) কাজ সম্পন্ন করবেন। তবে যদি রমঈ করবেন, আগে নিজের রমঈ করে এরপর অপরের রমঈ করবেন।
ঝ. যদি কেউ নির্দিষ্ট সময়ে রমঈ করতে না পারেন, তাকে দম দিতে হবে। কারণ রমঈ ওয়াজিব।
ঞ. বড় শয়তানকে কংকর মারার সঙ্গে সঙ্গে তালবিয়া পড়া শেষ। এরপর শুধু তাকবিরাত (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লাইলাহা  ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবর, ওয়লিল্লাহিল হামদ) বলতে হবে।
ট. মহিলা বৃদ্ধা এবং দুর্বল ব্যক্তিগণ ইচ্ছে করলে সূর্যাস্তের পর রমঈ করতে পারবেন।
কুরবানী : কুরবানী হলো হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর সুন্নত। কুরবানীর মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি তাদের আনুগত্য, দাসত্ব আত্মসর্মপনের নজির স্থাপন করে। আল্লাহর নামে পশু কুরবানীর মাধ্যমে মূলত আল্লাহর কাছে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় যে, এখন তোমার সন্তুষ্টির জন্য যেরূপ পশু কুরবানী  দিলাম, তোমার দ্বীনের জন্য তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রয়োজনে আমার জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিধা করব না। আমার জীবন ও মৃত্যু তোমার জন্যই।
দ্বিতীয় কাজ
৫। কুরবানী করা : (ওয়াজিব)
* কংকর মারার পর কুরবানী করুন।
* ইফরাদ হজ্জ পালনকারীদের জন্য মাথা মুন্ডন অথবা চুল ছাটার পর ইহরাম খোলা। তবে ফরয তাওয়াফ আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস  নিষিদ্ধ।
* তামাত্তু  বা ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের জন্য তাদঈ (পশু) জবেহ করা।
* পশু খরিদ করার জন্য মিনার বাজারে আসুন।
মাসাআলা : ক. হাদঈ জবেহ করার সময় ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
খ. ছাগল, দুম্বা, ভেড়া এবং গরু বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ এ সময় হাদঈর অন্তর্ভুক্ত।
গ. মীনা অথবা মক্কার সীমানার ভিতরের যে কোন স্থানে হাদঈ জবেহ করতে হবে।
ঘ. হাদঈ জবেহ না করা পর্যন্ত মাথা মুন্ডন করা বা চুল কাটা যাবে না।
ঙ. হাদঈর গোশত নিজে খেতে পারবে। অন্যকে  খাওয়াতে পারবে।
চ. হাদঈ নিজ হাতে জবেহ করা যায়।
ছ. নিজে যবেহ করতে না পারলে পশুর কাছে হাজির থাকুন।
জ. ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করে কুরবানী করতে পারেন। তবে কুরবানীর সময় জেনে নিবেন।
ঞ. কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়ার ব্যবস্থা করুন।
ট. এছাড়া সচ্ছল হাজীগণ ইচ্ছে করলে নফল কুরবানী করতে পারেন।
ঠ. তামাত্তো এবং কেরান হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা শুকরিয়া স্বরূপ ওয়াজেব কুরবানী।
ঢ. ইফরাদ হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা মুস্তাহাব।
কুরবনীর ফযিলত
কুরআন : ১. কুরাআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন “সুতরাং আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন।  কুরআনের আয়াত অনুযায়ী কুরবানী করা আমাদের ওপর ওয়াজিব।
২. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না এর গোশত ও রক্ত, পৌঁছায় কেবলমাত্র তোমাদের তাকওয়া।”
৩. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ আরো বলেছেন, আল্লাহ অবশ্যই মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করে থাকেন।
হাদীস : ১. হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে। এ থেকে কুরবানীর গুরুত্ব সহজে অনুমান করা যায়।
২. হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল এ কুরবানী কি? তিনি উত্তরে বললেন, এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আ:) এর সুন্নাত। তারা আবার বললেন, এতে আমাদের কি কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী আছে। তাঁরা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এ বকরীর পশমেরও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী আছে। উপযুক্ত হাদীস দু’টি থেকে একথা পরিষ্কার বুঝা যায়, কুরবানীর কতখানি গুরুত্ব বহন করে। সামর্থ্যবানদের কুরবানী না করার কারণে। ঈদগাহে আসতে বারণ করা হয়েছে। তার মানে কুরবানী না করলে ঈদের জামাতে আসার প্রয়োজন নেই। অতএব এ থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর গুরুত্ব কতে বেশী দিয়েছেন।
৩. হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, উত্তম হজ্জ কী? তিনি বললেন, উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা ও পশু কুরবানী করা। (জামে তিরমিজি-৮২৭)
৪. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন......আর তুমি কুরবানী করলে তা তোমার প্রতিপালকের নিকট সঞ্চিত থাকবে। (বাযযার কাশফুল আসতার-১০৮২)
হলক বা কছর করা : তৃতীয় কাজ
৬। হলক বা কছর করা : (ওয়াজিব)
* কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডন বা চুল ছেঁটে ফেলুন।
হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল
* কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডানোর বা চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে আপনি এখন হজ্জের ইহ্রাম থেকে সম্পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন।
*  মহিলাদের সমগ্র চুলের অগ্রভাগ হাতের আঙ্গুলির এক কড়া পরিমাণ ছেঁটে হালাল হোন। চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে ইহ্রামের সমুদয় কাজ সমাপ্ত হল। এখন গোসল করে সিলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করুন।
* মাথার চুল সম্পূর্ণ কামিয়ে ফেলা উত্তম। আল্লাহর (রাসূল) সা: এমন ব্যক্তির জন্য তিনবার রহমতের দোয়া করেছেন এবং চুল ছাঁটাইকারীর জন্য একবার রহমতের দোয়া করেছেন।
* ফরয তাওয়াফ পর্যন্ত স্ত্রী সহবাস নিষিদ্ধ। এর আগে সহবাস করলে দম দিতে হবে। তাহলে হজ্জ শুদ্ধ হবে।
* খেয়াল রাখবেন : কংকর মারা কুরবানী করা ও চুল কাটার মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী ও ওয়াজিব; অন্যাথায় দম বা কাফ্ফারা দিয়ে হজ্জ শুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হচ্ছে ইফরাদ হজ্জ। যেখানে কুরবানী নেই হজ্জের পরে ওমরাহ করা যায়।
তাওয়াফ : চতুর্থ কাজ
৭। তাওয়াফ করা (ফরজ)
* এরপর মিনা থেকে মক্কায় এসে (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক সময়) তাওয়াফের যিয়ারত পূর্ণ করুন।
* মনে রাখবেন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে নিতে হবে। তা না হলে পরে তাওয়াফ করে দম বা কাফ্ফারা দিতে হবে।
* তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করেন।
মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হওয়া
* মক্কায় আসার পর শারীরিক ক্লান্তি বা ক্ষুধা থাকলে কিংবা অন্য কোন জরুরী কাজ থাকলে সব সেরে শান্ত হোন। অতঃপর গোসল অথবা ওজু করে মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হোন।
* মসজিদে হারামে প্রবেশের জন্য চতুর্দিকে দরজা রয়েছে। যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারেন। তবে ‘বাবুস সালাম’ নামক দরজা দিয়ে প্রবেশ করা উত্তম। তালবিয়া পড়তে পড়তে ডান পা রেখে এই দোয়া পড়ুন :
দোয়া : “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফ্ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক”।
তাওয়াফের নিয়মাবলী
* নিয়ত করা।
নিয়ত : (“আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারামি ফা-ইয়াস্সিরহু লী ওয়া-তাক্কাব্বালহু মিন্নী, সাব্আতা আশওয়াতিন লিল্লাহি তায়ালা আজ্জ ওয়া-জাল্লা”)।
* ক্বাবা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করুন। অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ বরাবর তাওয়াফের জায়গায় যে মোটা দাগ টানা আছে। সেটাকে আপনার ডান পার্শ্বে রাখুন।
* তারপর নামাজের মতো উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং বলবেন “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার” এবং অত্যধিক ভিড় বা ধাক্কা ধাক্কি না থাকলে সামনে এগিয়ে অতি ভক্তি ও বিনয়ের সাথে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করুন। এটা সম্ভব না হলে যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে উভয় হাতের তালু পাথরের দিকে ইঙ্গিত করে হাতে চুম্বন করে তাওয়াফ শুরু করুন।
* হাজরে আসওয়াদের ইস্তিলামের পর বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার দিকে অর্থাৎ নিজের ডান দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাওয়াফে হাতীমকেও শামিল করবেন।
* তাওয়াফের সময় সহজ দোয়া পাঠ।
দোয়া : (“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া-লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াস্সালাতু ওয়াস্সালামু আলা রাসূলিল্লাহি আরাফাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম”)।
দোয়া : (“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুও ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”)।
* তাওয়াফ আরম্ভ করার পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ রাখুন।
* যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম দক্ষিণ কোণে পৌঁছবেন, তখন তাতে শুধু উভয় হাত অথবা ডান হাত লাগাবেন, চুমু দিবেন না।
* যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহ্র পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়া : “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিন্না আযাবান্ না-রিওয়াদ খিলনাল জান্নাতা মা’আল আবরার ইয়া আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল আলামীন”।
* এই দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে (মোটা দাগ দেখে নিন) এক চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল।
* প্রত্যেক চক্কর শেষে কাল পাথরে (হাজরে আসওয়াদ) চুমু দেন অথবা স্পর্শ করুন অথবা দু’হাতের তালু দ্বারা ইশারা করে চমু খান।
* সম্ভব না হলে দাঁড়িয়েই কান পর্যন্ত দু’হাত উঁচু করে বলুন : (“বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হামদু ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহ্”)। এবার দুই হাতে চুমু খেয়ে হাত নামিয়ে তাওয়াফ করুন।
* এভাবে মোট সাত চক্কর পূর্ণ করে নিন।
* সাত চক্কর পূর্ণ করার পর অষ্টমবারে হাজরে আস্ওয়াদ চুম্বন করবেন এতে তাওয়াফ সমাপ্ত হয়ে গেল।
* ১ম তিন চক্করে ‘রমল করা’ অর্থাৎ বীরের মত হেলে-দুলে জোর কদমে চলুন।
* বাকি চার চক্কর সাধারণ গতিতে সম্পন্ন করুন।
* তাওয়াফ শেষে আবার তালবিয়া পাঠ শুরু করুন।
বি:দ্র: অনেক লোক মুর্খতাবশত “হাজরে আসওয়াদ” চুম্বন করার জন্য ঠেলা-ধাক্কা শুরু করে যা খুবই অন্যায়।
মনে রাখতে হবে, “হাজরে আসওয়াদ” চুম্বন করা সুন্নত কিন্তু মানুষকে কষ্ট দেয়া বড় গুনাহ।
তাওয়াফের সময় করণীয়
* তাওয়াফরত অবস্থায় বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করবেন না।
* নিজের বুক ও পিঠ বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে করবেন না।
* তবে হাজরে আসওয়াদ চুমু দেয়ার সময় বুক বায়তুল্লাহ শরীফের দিকে করা যাবে।
* যদি কারও কষ্ট না হয় তবে বায়তুল্লাহ শরীফের কাছ থেকে তাওয়াফ করা উত্তম।
* তাওয়াফ করার সময় পর্দা ও শালীনতার বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকুন।
* হাজরে আসওয়াদ চুমু খাওয়া অথবা হাতে স্পর্শ করা অথবা হাতের তালু দ্বারা ইশারা করে হাতে চুমু খাওয়া সুন্নত। কাজেই এই তিন পদ্ধতির যে কোন একটি অবলম্বন করলেই সুন্নতের উপর আমল হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআন হাদীসে যেসব দোয়া রয়েছে তাওয়াফের সময় বা অন্যান্য সময় সেগুলো পাঠ করা উত্তম। আর সব সময় মুখ দিয়ে  দোয়া পাঠ করতেই হবে এমন নয়। কারন নবী করিম (সা:) বলেছেন ‘মান ছামাতা নাজা’। অর্থ : যে চুপ থাকল সে মুক্তি পেয়ে গেল। (তিরমিযি)
মুলতাযামে আমল : মুলতাযাম হলো হাজরে আসওয়াদ ও ক্বাবা ঘরের দরজার মধ্যবর্তী স্থান। তাওয়াফ শেষ করার পর বেশী ভিড় ও ধাক্কাধাক্কি যদি না হয় তাহলে এই মোবারক স্থানটি (যদি খুশবু লাগানো না থাকে) আঁকড়ে ধরবেন। বুক এবং চেহারা দেয়ালের সাথে লাগাবেন, উভয় হাত উপরে উঠিয়ে দেয়ালে স্থাপন করবেন এবং খুব কাকুতি-মিনতি সহকারে দোয়া করবেন। রাসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘আমি এ স্থানে যে কোন দোয়া করেছি, তা কবুল হয়েছে’।
ক্বাবা শরীফের চৌকাঠ ধরে দোয়া : ক্বাবা শরীফের দরজা মোবারকের চৌকাঠ ধরে খুব দোয়া করুন, সম্ভব হলে গেলাফ মোবারক আঁকড়ে ধরে খুব কান্নাকাটি করুন। ভিড়ের কারণে যদি অন্যের কষ্ট পাওয়ার কিংবা মেয়েলোকের গায়ে লাগার আশংকা থাকে তবে এ সবই ছেড়ে দিন। শুধু হাজরে আসওয়াদ ও চৌকাঠে চুমু খাবেন।
হাজরে আসওয়াদ এবং চৌকাঠ ছাড়া বায়তুল্লাহ শরীফের অন্য কোন স্থানে চুমু খাওয়া নিষেধ।
হাতীমে ক্বাবায় আমল : সম্ভব হলে হাতীমে ক্বাবায় দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এখানে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
মীজানে রহমতের আমল : হাতীমে ক্বাবায় যেখানে ক্বাবা শরীফের ছাদের পানি পড়ে, সেখানে দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। এখানে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
রোকনে ইয়ামীনে দোয়া : যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহর পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়া : “রাব্বানা-আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতওঁ ওয়া কিনা আযা-বান্ না-র। ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার ইয়া -আজিজু ইয়া-গাফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল্ আলামীন”।
মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ : তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের (যা বায়তুল্লাহ্র পূর্বদিকে মাতাফের প্রান্তে অবস্থিত) দিকে (ওয়া ইয জা’আলনাল বাইতা মাছাবাতিল লিন্নাছি ওয়া আমানা; ওয়াত্তাখিজু মিম্ মাকামে ইব্রা-হীমা মুসাল্লা) স্মরণ কর, যখন আমি ক্বাবা গৃহকে মানুষের সম্মেলন স্থল, শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান হিসেবে তৈরী করেছি, তখন বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে নামাজের স্থান বানাও (সূরা আল বাকারা-১২৫) পড়তে পড়তে অগ্রসর হবেন এবং মাকামে ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহ্ ও নিজের মাঝখানে রেখে দুই রাকাত নামায পড়ুন।
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমে দু’রাকাত নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। ভিড়ের জন্য যদি সম্ভব না হয় তাহলে আশে পাশে বা দূরবর্তী যে কোন স্থানে সহজ সম্ভব হয় পড়ে নিন।
যমযমের কাছে করণীয়
* সালাতুত তাওয়াফ আদায় শেষে যমযম কুয়া পর্যন্ত পৌঁছে কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি সহকারে তিন তিন শ্বাসে যত ইচ্ছা পানি পান করুন।
* যমযমের পানি দাঁড়িয়ে এবং বিস্মিল্লাহ বলে পান করা উচিৎ।
* যমযমের পানি বেশী করে পান করেন, যাতে পাঁজর ডুবে যায়।
* যমযমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয়, তা খুবই ফলদায়ক।
* যমযমের পানি আরোগ্যের জন্য পান করলে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন।
* এই নিয়ত করতে পারেন কেয়ামতের ময়দানে যেন আপনার আর পিপাসা না থাকে।
যমযমের পানি পান করার সময় এই দোয়া পড়ুন
দোয়া : (“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়াম মিন কুল্লি দায়িন”)
বি: দ্র: বর্তমানে এই কূপ দেখার সিঁড়ি ও সুড়ঙ্গ পথের উপরাংশ ভরাট করে ক্বাবা চত্বরকে প্রশস্ত করা হয়েছে। তাই যমযম (কূপ) দেখার কোন সুযোগ নেই। তবে যমযমের পানি ক্বাবার  ভিতরে বা বাইরে যে কোন স্থানে খাওয়া যায়।
সাফা মারওয়ার সায়ী : ৫ম কাজ
৮। সায়ী করা : (ওয়াজিব)
* তাওয়াফ শেষে নামাজ পড়ে (যমযম থেকে) সায়ীর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
* সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) পাহাড়ের চিহ্নস্বরূপ উঁচু জায়গা রয়েছে। এখানে উঠলে আপনার নজরে ক্বাবা শরীফ আসবে।
* এখানে ক্বাবা শরীফের দিকে মুখ করে সায়ী-এর নিয়ত করে, দোয়ার মতো করে হাত তুলে তিনবার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে  দোয়া করুন।
* অতঃপর অন্তরের আবেগ অনুযায়ী দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
* সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করার সময় এ দোয়া পড়ুন-
১. (“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া- লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু, ওয়াহুয়া হাইয়ুন লা-ইয়ামুতু-আবাদান আবাদা, বে ইয়াদিহিল খাইরু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন কাদীর লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু আনজাযা ওয়াহদাহু, ওয়া নাছারা আব্দাহু ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ”।)
২. (“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লাহাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”)।
* এখানে সবুজ দু’টি স্তম্ভ আপনার নজরে পড়বে। এই স্তম্ভদ্বয়ের মাঝখানে কিছুটা দ্রুতগতিতে চলুন এবং এই দোয়া পড়ুন : “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়াআনতাল আ’যযুল আকরাম”।
* এর পর স্বাভাবিক গতিতে চলতে চলতে মারওয়া পাহাড়ের সামান্য উঁচুতে উঠে কিবলামুখী হয়ে উভয় হাত বুক পর্যন্ত উঠিয়ে তিন বার “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলুন।
* এতে সাফা থেকে মাওয়া পর্যন্ত এক চক্কর হয়ে গেল। আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে যাবেন, তাতে দ্বিতীয় চক্কর হয়ে যাবে। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করুন।
* সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাতবার যাওয়া আসা করার সময় অজু না থাকলেও সায়ী সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে অজু থাকা ভাল।
সাফা মারওয়ার হুঁশিয়ারী
* সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উঁচু জায়গার শেষপ্রান্তে পৌঁছা সুন্নতের খেলাফ।
* সায়ীর পর নফল নামাজ
* সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায় করুন।
* মক্কা শরীফ থেকে মিনায় আগমন করুন।
* সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করার সময় নি¤েœর দোয়া পাঠ করা যায়-“ইন্নাছছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শাআয়িরিল্লাহ। ফামান হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা কালা জুনাহা আলাইহি আই ইত্তাওয়াফা বিহিমা”।
সায়ীর পর নফল নামাজ : সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন।
মাসআলা : ক. তামাত্তু হাজীদেরকে তাওয়াফ করার পর সায়ী করতে হবে। ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীদের সায়ী করার দরকার নেই, যদি তারা তাওয়াফে কুদুম বা ওমরার তাওয়াফের সঙ্গে সায়ী করে থাকেন।
খ. ফরয তাওয়াফের পর সহবাস বৈধ।
গ. তাওয়াফ ও সায়ী শেষে মক্কায় অবস্থান না করে মীনায় চলে যেতে হবে। বিশেষ কারণবশত: সেখানে অবস্থান করায় ক্ষতি নেই।
ঘ. সেলাই করা পোষাক পরিধান এবং সুগন্ধী ব্যবহার করে তাওয়াফ ও সায়ী করবেন।
ঙ. ইহরামের কাপড় পরিধান করেও তাওয়াফ ও সায়ী করা যায়।
চ. আইয়্যামে তাশরিকের ৩ দিন ১০ থেকে ১৩ পর্যন্ত ফরয তাওয়াফ করা যাবে।
ছ. হায়েয-নিফাসের মহিলাগণ পাক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ