শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দরপত্র জমা দিতে পারেনি সাধারণ ঠিকাদাররা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বাঁধার মুখে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ছয়টি কাজের দরপত্র দাখিল করতে পারেনি সাধারণ ঠিকাদাররা। অভিযোগ রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার ৬টি কাজ ৫৬ লাখ টাকায় সমঝোতার মাধ্যমে ভাগ-ভাটোয়ারা করে দেওয়া হয়। গতকাল রোববার ছিল দরপত্র জমাদানের শেষ দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের জন্য ওষুধপত্র, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, লিলেন সামগ্রী, গজ-ব্যান্ডেজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রাসায়নিক সামগ্রী, এমএসআর আসবাব সামগ্রী এবং এমএসআর যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য গত ২০ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে  এই দরপত্র আহবান করা হয়।
দরপত্র আহ্বানের পর প্রায় অর্ধশতাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছয়টি কাজের বিপরীতে ২২৫টি দরপত্র কেনে। কিন্তু গতকাল রোববার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে ছয়টি কাজের জন্য তিনটি করে মোট ১৮টি দরপত্র জমা পড়ে। নেতা-কর্মীদের বাঁধার মুখে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র দাখিল করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা মহিলা যুবলীগের এক নেত্রী বলেন, আমি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ছয়টি দরপত্র কিনেছিলাম।  গত শনিবার রাতে দলের কয়েকজন নেতা কাজগুলো সমঝোতা করা হবে বলে স্থানীয় সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে ঠিকাদারদের নিয়ে সমঝোতায় বসেন। রাত ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত  চলে সমঝোতা বৈঠক। বৈঠকে ৫৬ লাখ টাকা সমঝোতায় দলের নেতারা কাজগুলো ভাগ-ভাটোয়ারা করে দেয়। আমি তাদের কথা মতো আমার দরপত্রগুলো তাদেরকে দেইনি। গতকাল রবিবার বাঁধার মুখে আমি দরপত্র দাখিল করতে পারিনি।
ঢাকার ঠিকাদার মোঃ মহসিন উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার ঢাকার বন্ধু সাজ্জাদ মুন্সি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল এন্টারপ্রাইজ ও আহমেদ এন্টারপ্রাইজের নামে ১২টি দরপত্র কিনি। গত শনিবার রাতে কাজগুলো সমঝোতা হবে বলে আমাদেরকে জানালে আমরা আমাদের প্রতিনিধি পাঠাই। পরে শনিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে কয়েকজন ঠিকাদারদেরকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে নেতারা বসেন। তারা আমাদের দরপত্রগুলো জমা নিয়ে নেয়।
তিনি বলেন, পরে প্রায় দেড় কোটি টাকার ৬টি কাজ সেখানে ৫৬ লাখ টাকায় ছয়টি কাজ সমঝোতা হয়। বৈঠকে কথা হয়, দরপত্র কেনার পর যেসব ঠিকাদার কাজ পাবেন না তাদের মাঝে ৪০ লাখ টাকা ভাগ ভাটোয়রা করে  দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে দরপত্রগুলো রেখে দেওয়ায় আমরা গতকাল রোববার দরপত্র জমা দিতে পারিনি। সকালে নেতা-কর্মীদের ভয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগও দিতে পারিনি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করব। জেলা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়কের ই-মেইলে অভিযোগ পাঠাব। তিনি পুনরায় দরপত্র আহবানের দাবি জানান। তিনি বলেন, কাজ সমাঝোতার কথা বলে আমাদের মতো অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকেই দরপত্র রেখে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ ঠিকাদাররা যাতে দরপত্র দাখিল করতে না পারে সেজন্য গতকাল রোববার সকালে  হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের বাইরে রাখা দরপত্র জমা বাক্সের সামনে পাহারা বসানো হয়। দরপত্র দাখিলের দিনে হাসপাতাল এলাকার কোনো পুলিশ মোতায়েন করা হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ছয়টি কাজের বিপরীতে ১৮টি দরপত্র জমা পড়েছে।  দরপত্র জমাদানে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই, কেউ আমার কাছে অভিযোগও করেনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ