বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আদালতের বিরুদ্ধে আ’লীগ যা বলবে সবই যেন মাফ

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: ‘তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা (ফুফাত ভাইয়ের ছেলে), তিনি ব্যারিস্টার, তিনি সরকার দলীয় সংসদ সদস্য, তিনি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহবায়ক। তাই তিনারা যদি বলেন "একটি ইংরেজী পত্রিকার সম্পাদক এই রায় (বাতিল করা ষোড়শ সংশোধনী) লিখে দিয়েছেন। আর সিনহা বাবু সেটা পেনড্রাইভে করে এনে কোর্টে পড়ে শুনালেন কেবল" এই কথায় এখন আর আদালত অবমাননা হয় না। এখন আদালতের বিরুদ্ধে যা বলবেন সবই যেন সাত খুন মাফ। যদি তাই হয় জনাব ব্যারিস্টারের কথার রেশ ধরেই ছোট্ট একটি প্রশ্ন- মি. সিনহা বাবুর হাত ধরে মানবতা বিরোধী অপরাধে যেসব নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেসব রায় কে বা কারা লিখে দিয়েছিলেন? কেই বা পেনড্রাইভে করে নিয়ে এসেছিলেন?’ এটি ষোড় সংশোধনীর রায় বাতিল নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের জের ধরে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ ফেসবুকে’ দেয়া একজনের কমেন্টস। 

বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিতে সংবিধানে আনা ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেয়, ১ অগাস্ট পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। ৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের বেশিরভাগ অংশজুড়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ রয়েছে। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করা হয়েছে অভিযোগ তুলে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীনরা প্রধান বিচারপতিকে পাগল, রাজাকার, শান্তিবাহিনীর সদস্যসহ নানাভাবে বক্তব্যের মাধ্যমে হেনস্থা করে চলেছেন। অনেকে হুমকিও দিয়ে যাচ্ছেন। বলছেন, অবসরে যাবার পরে তা কি হবে তা নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে এখনই ভাবা দরকার। 

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতির কড়া সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, সিনহা সাহেব, আবোল-তাবোল বলার একটা লিমিট আছে। হেমায়েতপুরে একটা পাগলা গারদ আছে, এটা তো এমনিতে বানানো হয়নি। আপনার যখন এদেশে কিছুই পছন্দ না, তাহলে দেশ থেকে চলে যান; না হলে চিকিৎসা নিন। হেমায়েতপুরের পাগলা গারদে গিয়ে চিকিৎসা নিন। গতকাল রোববার দুপুরে রায়ের পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। মতিয়া বলেন, আপনার মতলবের সীমা নাই, এজন্যই ধরা পড়ে গেছেন। রায়ে বহু অবান্তর কথা বলেছেন। মতলবি কথা কি! জাতির পিতা সমূহ, তাই না? তিনি বলেন, নারীর সন্তানের পরিচয় একজন পিতার মাধ্যমেই। কোন মহিলা পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী হতে পারে, সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক অবসানে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে নিজেই বিতর্কের সূচনা করছেন, সরকার করেনি। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে পদত্যাগ করে বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়ে পদত্যাগ করে এই বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে পারেন এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি পুনঃস্থাপনে সাহায্য করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই ষোড়শ সংশোধনী বিষয়ক রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের উদ্দেশ্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নয়; এটি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বকে বিতর্কিত করা ও সামরিক শাসনের জঞ্জালকে পুনরায় টেনে আনার অপপ্রয়াসমূলক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও বিদ্বেষমূলক। ইনু বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলও ত্রুটিমুক্ত নয়। আমরা বিচারপতি অপসারণে তিন স্তরের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বিচারপতিদের বিষয়ে অভিযোগের সব তদন্ত অন্য কেউ নয়, বিচারপতিদের কমিটিই করবেন। সংসদ সেই তদন্তে পর্যবেক্ষণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু রায়ে এক স্তর অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলই বহাল রাখা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘দেশের বিরুদ্ধে’ যে কথা বলা হয়েছে তা এক্সপাঞ্জ (বাতিল) না করলে দেশের মানুষ এগিয়ে আসবে। ‘সংসদের বিরুদ্ধে’ কথা বলার আগে আপনার ভাবা উচিৎ ছিল। এই সংসদের রাষ্ট্রপতিই আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে। আজকে সে দিকে চিন্তা রেখে ভবিষ্যতে কথা বলবেন। আমির হোসেন আমু বলেন, এ ‘দেশের বিরুদ্ধে’ যে কথা বলেছেন তা প্রত্যাখ্যান করতে হবে, এক্সপাঞ্জ করতে হবে, যদি না হয় তাহলে দেশের মানুষ এগিয়ে আসবে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, অন্য বিচারপতিদের মনে রাখা দরকার উনি (প্রধান বিচারপতি) যা চান তা হলো- তিনিই বিচারকদের একমাত্র দেবতা। তিনি (প্রধান বিচারপতি) যা বলবেন সেটাই মানতে হবে। সব ক্ষমতা তার হাতে থাকবে, এর বাইরে কিছু থাকবে না। আজকে সেই ব্যবস্থা আমরা বিচার বিভাগে হতে দিতে পারি না। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ে নিতে চান। এসব ফাইজলামির একটা সীমা আছে। এসব ঔদ্ধত্য দেখানোর একটা সীমা আছে। তিনি আরও বলেন, প্রধান বিচারপতি পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন তা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। 

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধু এবং সাংসদদের নিয়ে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য দেওয়ায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এই দাবি জানান। একই সঙ্গে সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, পর্যবেক্ষণে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হিসেবে তিনি এ নিয়ে মামলা করতেও আগ্রহী। তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের সমালোচনা করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘ভূতে পেয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন বিচারপতি থেকে রাষ্ট্রপতি হয়ে বঙ্গভবনে বসেই ভগবান থেকে ভূতে পরিণত হয়েছিলেন। একইভাবে প্রধান বিচারপতি হয়েই তিনি (বিচারপতি সিনহা) ভগবান থেকে ভূতে পরিণত হয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। এ রায় বিএনপিকে উল্লসিত করেছে। কিন্তু তাদের উল্লসিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অতীতেও এমন অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনও হচ্ছে। সব বাধা, ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে আমরা আমাদের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবো।

নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। এর মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে যে সংবিধান রচনা করা হয়েছে, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যারা এই প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে, তারা একটি অর্বাচিনের মতো কাজ করেছে। মাদারীপুরে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তাতে গোটা জাতিকে অপমান করা হয়েছে। 

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় আইনগনভাবে মোকাবেলার কথা বলেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দল এই রায়কে আইনগতর পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও মোকাবেলার ঘোষণাও দিয়েছেন। এই রায়ের পর্যবেক্ষণকে অপ্রাসঙ্গিক, অগ্রহণযোগ্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছেন তারা। আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই অবস্থান জানান হয়। ১৪ দলের বৈঠক শেষে সমন্বয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বৈধ সংসদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ রয়েছে তা চৌদ্দ দল প্রত্যাখ্যান করছি। সেই সঙ্গে এই রায় বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। বাতিল করতে হবে। আমরা এটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ বলেন, এই রায়ে জনগণের অধিকারকে হরণ করা হয়েছে। সংবিধানে আছে সব কিছুর মালিক জনগণ সুতরাং জনগণের প্রতিনিধিদের হাতেই ক্ষমতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বলা যায় রায় সংবিধান পরিপন্থী। আর ইতিহাসের মীমাংসিত বিষয় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে যে বক্তব্য দেয়া হয়েছে এতে করে স্বাধীনতা বিরোধীদের উসকানি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু অমীমাংসিত অবস্থানে নিতে চাইছে। সুতরাং এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার অভিযোগের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, সময়ে এদেরও বিচার হবে। শেখ সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইতিহাস বিকৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। আজকে অনেকেই অনেক রকমভাবে আকারে ইঙ্গিতে ইতিহাস বিকৃতি করতে চায়। এরাও একই গ্রুপের লোক, তা বলতে আমার দ্বিধা নেই। ‘সময়ে এদেরও বিচার হবে’-এমন মন্তব্য করে সেলিম বলেন, ক্ষমতার কোনো চেয়ারে বসে যা খুশি তাই করবেন-তা করা যায় না। এ দেশের জনগণ সময় মত সঠিক উত্তর দেবে।

শুধু সরকারের মন্ত্রী বা সিনিয়র নেতারাই নয়, খোদ প্রধানমন্ত্রীও প্রধানবিচারপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন। উচ্চ আদালতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করার তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কেউ অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা চালালে তার বিচার করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ সে অপচেষ্টা চালায় তাকে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করায় জনতার আদালতে তার বিচার চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেন বাংলাদেশকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করা হবে? তিনি বলেন, ‘আমাকে এ ধরনের হুমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। তিনি বলেন, আমি বলব সবকিছুই সহ্য করা যেতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার উদ্দেশ্যে বলেন, উনি সরে গেলেই পারেন। উনার তো পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন। তারা নির্বাচন করেন রাষ্ট্রপতিকে। সেই রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতিকে। সংসদের বিষয়ে অশালীন মন্তব্যের আগে উনাকে (এস কে সিনহা) এসব ভেবে দেখা দরকার ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের আদালতের উদাহরণ দিচ্ছেন। পাকিস্তানের আদালতের উদাহরণ উলেখ করে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, আমরা ইয়াহিয়া, আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান, এরশাদের ক্ষমতা দেখেছি। ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। পাকিস্তানের আদালতের সঙ্গে উদাহরণ দেয়ার বিচার আমি দেশবাসীর কাছে দিলাম।

এদিকে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গণসহ সবমহলে যখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে ঠিক তখনই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার আয়-ব্যয়ের তদন্ত শুরু করেছে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক। আয়-ব্যয়ের এ তদন্তকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা বলে মনে করছেন অনেকে। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির পরিবারের আর্থিক বিষয়াদি খতিয়ে দেখছে জাতী রাজস্ব বোর্ড (এনবি আর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। বিচারপতি সিনহা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে যথাযথ ভাবে আয়কর দিয়েছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং তাঁর শ্যালকের বার্ষিক আয়কর বিবরণী নিরীক্ষা করছে তারা। বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দুই কন্যা। একজন ভারতে থাকেন, অন্যজন থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। তারা কীভাবে চলেন, বাংলাদেশ থেকে বৈধ অবৈধ পথে তাঁদের কোনো টাকা পয়সা পাঠানো হয়েছে কিনা। সে ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর আগে কখনও কোন প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয় খতিয়ে দেখেনি এনবিআর। এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বির্তক থাকলেও তার সম্পদের হিসাব চায়নি এনবিআর। চলতি কোন প্রধান বিচারপতির সম্পদের হিসাব চাওয়ার নজির আর নেই। এতে বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় তাকে হেন¯া’ করতে এই হিসাব চাচ্ছে এনবিআর এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তাদের এই হিসাব চাওয়ার ইখতিয়ার আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মূলত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের অংশ হিসেবেই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যবহার করছে সরকার। যা বিচার বিভাগের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হয়ে থাকবে। এ নিয়ে বুদ্ধা মহলে বেশ আলোচনাও হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের বিপক্ষে যাওয়ায় প্রধান বিচারপতির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার এখন তাকে হেনস্তা করতেই তার আয়-ব্যয়ের তদন্ত করছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ