শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায় বারবার পড়তে হবে

জিবলু রহমান : [এগার]
ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার ৯ দিনের মাথায় ওই রায়ের প্রতিক্রিয়া ১০ আগস্ট ২০১৭ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করেন। সচিবালয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেছেন-
প্রথমেই আমি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং বঙ্গবন্ধুর ৪২তম শাহাদতবার্ষিকীর প্রাক্কালে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে সেই কালরাতে নিহত সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আমি ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নৃশংসভাবে হত্যাকৃত চার জাতীয় নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে আমি ৩০ লাখ শহীদ, যাঁদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখ মা-বোন, যাঁরা আমাদেরস্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তািন হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
আপনারা জানেন যে গত ৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেন, সেই রায়ের পরে আপনারা আমার প্র্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলেছিলাম, পূর্ণাঙ্গ রায় না পেয়ে কোনো অভিমত দেব না। একই সঙ্গে আমি এ-ও বলেছিলাম যে মার্শাল ল প্রমালগেশনের মারফত তৈরি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাদ দিয়ে ১৯৭২ সালের গণপরিষদ দ্বারা পাসকৃত ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করায় কোথায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হলো, আমি বুঝতেও পারি না।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি আমরা পেয়েছি। যেহেতু রায়টি ৭৯৯ পৃষ্ঠার, তাই এটি সম্পূর্ণ পড়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে আমার এটুকু সময় লেগেছে। প্রথমেই আমি আপনাদেরকে বলতে চাই যে বাংলাদেশ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে কী ছিল?
‘৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।
(২) প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব-সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।
(৪) কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’
ষোড়শ সংশোধনীর আগে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ নিম্নরূপ ছিল:
‘৯৬। (১) এই অনুচ্ছেদের অন্যান্য বিধানাবলি সাপেক্ষে কোনো বিচারক সাতষট্টি বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।
(২) এই অনুচ্ছেদের নিম্নরূপ বিধানাবলি অনুযায়ী ব্যতীত কোনো বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করা যাইবে না।
(৩) একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকিবে যাহা এই অনুচ্ছেদে “কাউন্সিল” বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকের মধ্যে পরবর্তী যে দুজন কর্মে প্রবীণ তাঁহাদের লইয়া গঠিত হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, কাউন্সিল যদি কোনো সময়ে কাউন্সিলের সদস্য এইরূপ কোনো বিচারকের সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করেন, অথবা কাউন্সিলের কোনো সদস্য যদি অনুপস্থিত থাকেন অথবা অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে কার্য করিতে অসমর্থ হন তাহা হইলে কাউন্সিলের যাঁহারা সদস্য আছেন তাঁহাদের পরবর্তী যে বিচারক কর্মে প্রবীণ তিনিই অনুরূপ সদস্য হিসাবে কার্য করিবেন।
(৪) কাউন্সিলের দায়িত্ব হইবে-
(ক) বিচারকগণের জন্য পালনীয় আচরণ বিধি নির্ধারণ করা; এবং
(খ) কোনো বিচারকের অথবা কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন সেইরূপ পদ্ধতি ব্যতীত তাঁহার পদ হইতে অপসারণযোগ্য নহেন এইরূপ অন্য কোনো পদে আসীন ব্যক্তির সামর্থ্য বা আচরণ সম্পর্কে তদন্ত করা।
(৫) যে ক্ষেত্রে কাউন্সিল অথবা অন্য কোনো সূত্র হইতে প্রাপ্ত তথ্যে রাষ্ট্রপতির এইরূপ বুঝিবার কারণ থাকে যে কোনো বিচারক-
(ক) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে তাঁহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিতে অযোগ্য হইয়া পড়িতে পারেন, অথবা
(খ) গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইতে পারেন, সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কাউন্সিলকে বিষয়টি সম্পর্কে তদন্ত করিতে ও উহার তদন্তফল জ্ঞাপন করিবার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।
(৬) কাউন্সিল তদন্ত করিবার পর রাষ্ট্রপতির নিকট যদি এইরূপ রিপোর্ট করেন যে, উহার মতে উক্ত বিচারক তাঁহার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হইয়া পড়িয়াছেন অথবা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হইয়াছেন তাহা হইলে রাষ্ট্রপতির আদেশের দ্বারা উক্ত বিচারককে তাঁহার পদ হইতে অপসারিত করিবেন।
(৭) এই অনুচ্ছেদের অধীনে তদন্তের উদ্দেশ্যে কাউন্সিল স্বীয় কার্য-পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করিবেন এবং পরওয়ানা জারী ও নির্বাহের ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টের ন্যায় উহার একই ক্ষমতা থাকিবে।
(৮) কোনো বিচারক রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করিয়া স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।’
ষোড়শ সংশোধনীর আগের ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৯৬ অনুচ্ছেদ হুবহু ষোড়শ সংশোধনীর মতোই ছিল। সংসদ পঞ্চদশ সংশোধনীতে অনেক বিষয় ১৯৭২ সালের গণপরিষদ দ্বারা জাতির পিতার অংশগ্রহণসহ যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, বহুলাংশে সেই সংবিধানে ফিরে গিয়েছিল। বিচার বিভাগের সম্মান, স্বাধীনতা এবং বিচারক অপসারণের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার অভিপ্রায় নিয়ে এই সংশোধনী আনা হয়েছিল এবং তা জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছিল।
আপনারা জানেন, এই সংশোধনী পাস করার অব্যবহিত পরে একটি জনস্বার্থ মামলা (পিআইএল) দ্বারা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয় এবং হাইকোর্ট বিভাগ ৫ মে ২০১৬ তারিখের রায়ে এটাকে সংবিধান পরিপন্থী রায় দেয়, তারপর আপিল বিভাগে আপিল করা হয়।
আপিল বিভাগ পরে মূলত ৩টি কারণে হাইকোর্টের রায় বলবৎ রাখেন যাহা-
১. ষোড়শ সংশোধনী যেহেতু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ব্যাঘাত ঘটাবে সেই কারণে ইহা সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারের পরিপন্থী। রায়ে আরও বলা হয় যে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী ইটিসি. ভার্সাস বাংলাদেশ অ্যান্ড আদার্স বিএলডি ১৯৮৯ (এসপি-১) ১ রায়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
২. সংসদের হাতে যদি বিচারপতিকে অপসারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে বিচারকগণ স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারবেন না কারণ তারা সব সময় ভয়ে থাকবেন যে সংসদ সদস্যদের বিপক্ষে রায় দিলেই তাদেরকে অপসারিত করা হবে।
৩. যেহেতু পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৯৬ অনুচ্ছেদকে ১৯৭৭ সালের মার্শাল ল প্রক্লেমেশন দ্বারা সংশোধিত অবস্থা বহাল রাখা হয়েছিল। সেই জন্য এটা সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারে স্থান পায়।
এটা দিবালোকের মতো সত্য যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সে রায়ের সাথে আমাদের দ্বিমত থাকলেও রায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে বলতে চাই যে শ্রদ্ধেয় আপিল বিভাগ যে যুক্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছেন, সেই সব যুক্তি আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার এবং জাতীয় সংসদের কোনো দিনই এই অভিপ্রায় ছিল না যে কোনো সংশোধনী দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন বা খর্ব করা হবে।
আমাদের বিবেচনায় ষোড়শ সংশোধনী দ্বারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুদৃঢ় এবং স্বচ্ছ হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার গণতন্ত্রের মৌলিক মন্ত্র চেক অ্যান্ড ব্যালান্স পদ্ধতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ষোড়শ সংশোধনী পাস করি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত গণপরিষদ দ্বারা পাসকৃত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারককে অপসারণ করা হয় নাই। কিন্তু ১৯৭৭ সালের সামরিক শাসন দ্বারা সংশোধিত ৯৬ অনুচ্ছেদ থাকা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারককে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে না নিয়েও চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।
আমি মনে করি, ১৯৭২ সালে গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত মূল সংবিধান যেটাকে বুকে ধারণ করে জন্ম নিয়েছে, সেটা অসাংবিধানিক হতে পারে না। সংসদের মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের বিধান ভারত, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ৩৮ শতাংশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশে বিদ্যমান রয়েছে। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংসদ নিজে তদন্ত করে না, তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমে তদন্ত প্রমাণের দায়িত্ব প্রদান করে থাকে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়। আমরাও অনুরূপ একটা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি বলতে চাই যে মূল সংবিধানের কোনো বিধানের জুডিশিয়াল রিভিউ হয় কি না, এ বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে।
আমাদের কাছে সুপ্রিম কোর্টে বিচারকগণকে স্বেচ্ছাচারিতার (আর্বিট্রারিলি) মাধ্যমে অপসারণ করাটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ব্যর্থতা বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
আমরা মনে করেছি যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বচ্ছ এবং নাজুক। তাই এর পরিবর্তনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের স্বাধীনতা এবং তাঁদের চাকরির নিশ্চয়তা রক্ষা করা হয়েছিল বলেই আমাদের বিশ্বাস।
আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে ষোড়শ সংশোধনী দ্বারা সংসদ বিচার বিভাগের সাথে কোনো পাওয়ার কনটেস্টে অবতীর্ণ হয় নাই। বরঞ্চ বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টাই করেছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৯৬ অনুচ্ছেদকে পরিবর্তন করা হয় নাই বলেই আর কখনো ৯৬ অনুচ্ছেদকে সংশোধন করা যাবে না, এ রকম কোনো সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা কোথাও নাই। রায়ে উল্লেখ আছে যে আমরা অনেক গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ দিয়েছিলাম যুক্তি হিসেবে এবং এটা কোনো যুক্তি নয়।
আমি বিনীতভাবে বলতে চাই যে সফল গণতন্ত্রে যেসব নীতি অনুসরণ করা হয়, সেগুলোকে যদি উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়, তাহলে পরে যুক্তি আরও শক্ত হয়। অন্যদিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে কনসেপ্ট, এটা শুধু মিলিটারি ডিক্টেটরদের বই থেকেই প্রাপ্ত (উদাহরণ ১৯৬২ সালের আইয়ুব খানের সংবিধান)। তাই এটা গণতন্ত্রের সাথে কিছুতেই খাপ খায় না।
আমরা যেহেতু এই রায়ে সংক্ষুব্ধ, তাই আমরা নিশ্চয়ই চিন্তাভাবনা করছি যে এই রায়ের রিভিউ করা হবে কি না? আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হই নাই। কারণ, রায়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এখনো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
এখন আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির রায়ে উল্লেখিত কিছু বক্তব্য সম্বন্ধে অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে কিছু বলতে চাই। মাননীয় প্রধান বিচারপতি তাঁর রায়ে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা, যেটা এই মামলার যে ফ্যাক্ট ইন ইস্যুর সাথে একদমই সম্পর্কিত না, সে রকম বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন। আমি মনে করি, ওই সকল রাজনৈতিক প্রশ্ন (পলিটিক্যাল কোয়েশ্চেন) আদালত কর্তৃক বিচার্য বিষয় হতে পারে না।
আমরা তাঁর এই বক্তব্যে দুঃখিত। তিনি রায়ের আরেক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো একক ব্যক্তির কারণে হয় নাই। আমি তাঁর এই বক্তব্যে মর্মাহত। আমরা স্মরণ করতে চাই যে ইতিহাস বলে, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, তারই ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু হয়তো পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন কিন্তু তাঁরই নেতৃত্বে তাঁরই আদর্শে স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ