শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

‘শিক্ষার্থীদের মানবসেতুতে হাঁটা চেয়ারম্যানের জামিন বেআইনি’

স্টাফ রিপোর্টার : স্কুল শিক্ষার্থীদের পিঠের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন পাটোয়ারীর জামিনের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, শিশু আদালতের বিচারক বেআইনিভাবে তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। জামিন মঞ্জুর করে শিশু আদালতের বিচারক শিশু আইনের গুরুতর ভুল প্রয়োগ করেছেন।
হাইকোর্ট বলেন, শিশু আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু কোনো মামলায় জড়িত থাকিলে, যে কোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, উক্ত মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু আদালতের থাকিবে। অর্থাৎ শিশু আদালতের বিচারক আইনের এই ধারাটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
উপজেলা চেয়ারম্যানের জামিন বাতিলের রায়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেছেন। এর আগে গত ১৭ জুলাই হাইকোর্টের একই বেঞ্চ নুর হোসেন পাটোয়ারীকে স্কুলের শিক্ষার্থীদের তৈরি মানবসেতুতে হাঁটার ঘটনায় নির্যাতনের মামলায় শিশু আদালতের দেয়া জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে চাঁদপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালত আরও বলেন, শিশু আইনের ২৯ ধারায় জামিনে মুক্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। অতএব আমাদের বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে শিশু আদালতের বিচারক বেআইনিভাবে ওই চেয়ারম্যানের জামিন মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট মনে করে শিশুর অধিকার সুরক্ষার জন্যই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিশু আদালতের বিচারক আইনের এই মূল উদ্দেশ্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী নীলকমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের দিয়ে গড়া মানবসেতুতে হাঁটেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ ধারায় হাইমচর থানায় মামলা করা হয়।
মামলাটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় ওই চেয়ারম্যান গত ২৯ মার্চ চাঁদপুরের শিশু আদালতে গিয়ে জামিন নেন। এই জামিন আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে বেঞ্চ মামলা করেন বাদী আব্দুল কাদের গাজী। গত ১৯ জুলাই উপজেলা চেয়ারম্যানকে দেয়া জামিন আদেশ বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। জামিন বাতিলের এই রায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে গিয়ে আগাম জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু তিনি জামিন পাননি। পরে শিশু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। হাইকোর্ট মনে করে শিশু আদালতের বিচারক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে প্রাপ্তবয়ষ্ক অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে তা মঞ্জুর করেন। জামিন মঞ্জুর করে শিশু আদালতের বিচারক ওই আইনের গুরুতর ভুল প্রয়োগ করেছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ শিশু আইনের অস্পষ্টতা নিরসনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। এরপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ অস্পষ্টতা নিরসনে শিশু আইনের সংশোধনীর খসড়া হাইকোর্টে পাঠায়। ওই খসড়ায় বলা হয়, শিশু আইনে অপরাধী প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে বিচার হবে ট্রাইব্যুনালে। আর শাস্তি হবে প্রচলিত আইনে। সংশোধনীতে শিশু আইনের ১৫ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করে বলা হয়, তদন্তকালে শিশুর জন্য শিশু আইন এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিসহ অন্যান্য প্রযোজ্য আইনের বিধান অনুসরণ করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ