মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সমস্যার আবর্তে চামড়া শিল্প

চামড়া শিল্প ইংরেজি Lether Industries. মুক্ত বাজার অর্থনীতির এ যুগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনে চামড়া শিল্প এক সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশে পোষাক শিল্পের পরেই অবস্থান রয়েছে চামড়া শিল্পের। এ শিল্প বাংলাদেশে মোট রপ্তানি আয়ের ১৩% যোগান দেয়। ১৯৭০ এর দশকে বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের চামড়া শিল্পের বিকাশ ঘটে। এরপর থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের একটি বড় অংশ ধরে রেখেছে চামড়া শিল্প। বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত চামড়ার গুণগত মান ভাল হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও এর রয়েছে বেশ কদর। এ জন্য বাংলাদেশেও চামড়া ও চামড়া শিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী বহু প্রতিষ্ঠান তাদের বিজনেস অপারেশন বাড়াচ্ছে। চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো জুতা, ব্যাগ প্রভৃতি চামড়া জাত পণ্য সামগ্রী  তৈরির কারখানা রয়েছে। সুষ্ঠু জাতীয় নীতিমালার অভাব এবং বর্তমান বাংলাদেশের ক্ষমতাশীন বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকারের অবহেলা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প আজ চরম সমস্যা আবর্তে নিমর্জ্জিত। অথচ সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল নির্ভর ও শস্তা শ্রমশক্তি নির্ভর চামড়া শিল্পের মাঝে নিহিত রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। 

প্রতি বছর বাংলাদেশে শতকরা ৪০ ভাগ চামড়া সরবরাহ হয় মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল আযহা ঈদ উৎসবে কোরবানীকৃত পশুর চামড়া থেকে। দৈনন্দিন মাংস সরবরাহের জন্য জবাইকৃত পশুর চামড়া ছাড়াও বিবাহ ও অন্যান্য উৎসবাদী উদ্যাপন থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমান চামড়া সংগৃহীত হয়। 

গত ৩০ আগষ্টের ‘দৈনিক ইনকিলাব’ পত্রিকার ১২ নং পৃষ্ঠায় রেজাউল করিম রাজু কর্তৃক লিখিত একটি প্রতিবেদনে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘ভারত থেকে আসছে গরু যাবে চামড়া।’ উক্ত লিখায় বলা হয়েছে, ‘...... বানের পানির মতো ভারত থেকে গরু ছাগল আসলেও চামড়া ফিরিয়ে নেবার জন্য আট ঘাট বাঁধা আছে। ভারতের গরু চামড়া বেনিয়ারা এসব পাচার কারীদের সাথে যোগাযোগ ভালো রাখছে....।’

বিগত ২৮ আগস্টের ‘দৈনিক প্রথম আলো’ পত্রিকার ১০নং পৃষ্ঠায় মতামত কলামে শিরোনাম করা হয়েছে, ‘কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে জটিলতা-সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নিন।’ সেখানে বলা হয়েছে যে, রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুর চামড়া শিল্প স্থানান্তর করা হলোও নতুন চামড়া শিল্প নগরীর দুরবস্থাসহ ছয়টি চিহ্নিত সমস্যা সমাধান না হলে এবার কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে যে সমস্যা হবে তা দ্রুত সমাধান দরকার। অন্যথায় চামড়া শিল্পের ধস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শিরোনাম এসেছে, ‘চামড়ার বাজারে ধস, পাচার হওয়ার আশঙ্কা।’

এবার সরকারিভাবে কোরবানীর গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ভারতে প্রতি বর্গফুট চামড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। 

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহম্মেদ বলেন, ‘প্রতি বছরই কিছু পরিমাণ চামড়া পাচার হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি বছরে ট্যানারিগুলো সাভারে স্থানান্তর হয়ে যাওয়ায় চামড়া সংগ্রহে আমাদের প্রক্রিয়া খুব ধীর হবে। আর এ কারণে এ বছর প্রায় ২০ শতাংশ চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছি ...।’ চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘লবণের চড়া দাম এবং ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় স্বল্প পুঁজি নিয়ে চামড়া ব্যবসা করা সম্ভব নয়।’

ভারতে গরু জবাইয়ে কড়াকড়ি থাকায় গরুর চামড়ার সংকট দেখা দিয়েছে সেখানকার ট্যানারিগুলোতে। এ জন্য তারা বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা এবং মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। 

ভারত আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র। আজ থেকে ৩০-৪০ এমন কি ২০-২৫ বছর আগে আমাদের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক যে স্তরে ছিল আজ তা আরও উপরের স্তরে গিয়েছে। সম্পর্ক আরও গভীরতর হয়েছে। 

এক সময়- ভারতের সঙ্গে আমাদের আমদানি রপ্তানি ব্যবসা হতো সরকারি পর্যায়ে। সে অবস্থা এখন আর নেই। এখন ব্যবসা বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে হচ্ছে প্রচুর এবং তা হচ্ছে বেসরকারি খাতে। সবাই জানে ভারত থেকে যতমাল সরকারি ভাবে আমদানি হয় তার দ্বিগুণ পরিমান মাল চোরাই পথে আসে। গরু আমদানিই এর অন্যতম উদাহরণ। 

আমাদের বর্তমান সরকারের স্থানীয় এমপি মহোদয়কে কোরবানীর গরুর চামড়া কি করেছেন জিজ্ঞসা করলে তিনি বলেন যে, কওমী মাদ্রাসার গরীব ছাত্রদের গোরাবা ফান্ডে দান করে দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ‘চামড়ার দাম কম আর বিক্রি করলে কোরবানীর পশুর চামড়ার টাকাটা গরীবের হক হয়ে যায়। সুতরাং বিক্রি না করে আমার প্রাপ্য চামড়াটাই গরীব ছাত্রদের দান করে দিলাম। তারা সুবিধা মতো ব্যবস্থা করে নেবে।’ 

দেখা যাচ্ছে একটা সমস্যার সমাধান আরেকটা সমস্যার দিকে আমাদের কে নিয়ে যাচ্ছে। বন্যায় কৃষি মরছে, দুগ্ধশিল্প মরছে, হাঁস-মুরগি-ডিম শিল্প মরছে, চা-শিল্প মরছে, পাট শিল্প মরছে, আবাসন শেষ হচ্ছে, পোষাক শিল্প আগুনে পুড়ছে, চামড়া শিল্পে ধস, তা হলে আর রইল কী? রইলাম,‘আমরা আর মামুরা।’ তাই নাকি কি? 

-আবু মনীর

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ