শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আনান কমিশন বাস্তবায়নে মিয়ানমারের কমিটি গঠন

সেপ্টেম্বর ১৩, এপি: অবশেষে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে মিয়ানমার। প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে এ বিষয়ে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। আগস্টে কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন কমিশন রাখাইনের পরিস্থিতি তদন্তের পর কিছু সুপারিশ হাজির করে। 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তদন্তে গত বছর জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি নিজেই কফি আনানকে ওই কমিশনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এর আগেও সু চি তার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলেন।

এপির রিপোর্টে বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে মঙ্গলবার একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি অব রাখাইন এডভাইজরি কমিটি’ নামে ১৫ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ‘রোহিঙ্গা এলাকাগুলোতে এই কমিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রোহিঙ্গা অধ্যূষিত অঞ্চলে সামাজিক সম্পর্কের বিষয়ে কাজ করবে। পাশাপশি তারা জাতিগত সংখ্যালঘু বসবাসকারীদের গ্রাম এবং উচ্ছেদ হওয়া মানুষদের শিবিরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কাজ করবে।’

কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছিল, ‘যদি স্থানীয জনগণের বৈধ অভিযোগগুলো উপেক্ষা করা হয, তবে তারা জঙ্গি সংগঠনগুলোতে যোগ দেওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে।’ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল, ‘যাদের নাগরিকত্ব মঞ্জুর করা হয়নি তাদের মর্যাদা কী হবে তাও সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। অন্য সব দেশের মতো মিয়ানমারেও যারা নাগরিকত্ব না পেয়েও বসবাস করছে, তাদের একটি মর্যাদা থাকা প্রয়োজন। একইসঙ্গে যারা মিয়ানমারে বাস করছে এবং কাজ করছে, তাদের অধিকারও সমুন্নত রাখা দরকার। আর যাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হয়ে গেছে, তাদের জন্য নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

মিয়ানমার আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে পুরনো নাগরিকত্ব আইনকেই উপজীব্য করার কথা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশটির নাগরিকত্ব আইনকে উপজীব্য করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে যেন তাদের নাগরিকতার সুযোগ তৈরি হয়।

১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের , এবং  পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের  আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের  বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনও জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।

২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সে সময় প্রেসিডেন্ট দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই কার্ড মার্চ থেকে আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই কার্ড ছিল। সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেওয়া হয় সাত হাজার ৫৪৮ জনকে। এদের সবাই যদি রোহিঙ্গাও হয়, তাহলে এই সাড়ে সাত হাজার মানুষের বাইরে আর কোনও রোহিঙ্গার বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ