শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

কবিতা

বন্দী আরাকান
আফজাল চৌধুরী

রোসাঙ্গের রেনেসাঁয় একদা স্নাত হয়ে
ছিলে পূর্ব-এশিয়ার উজ্জ্বল শিখান,
অথচ এখন তুমি হত্যা ও ধর্ষণ আর লুণ্ঠনেই হচ্ছে খান খান
আরাকান, বিজ্ঞ আরাকান।
চমকে ওঠে ত্রাসে আর ভয়ে;
শিবিরে রোদনকারী লাঞ্ছিত আসিয়া খাতুন।
ক্যামেরার কিক শুনে তাকায় সে চোখে নিয়ে খুন;
একি রোল, আহাজারি, কিসের আগুন
আরাকান, ক্ষুব্ধ আরাকান!
তোমার দু’চোখে দেখি ছাই চাপা নেভানো আগুন’
তোমার হাতেও তীক্ষ্ণ শর নেই, পিঠে নেই তূণ;
হিউএন সাঙের মতো বৃথা খুঁজে নৃতত্ত্বের খুন;
আরাকান, রিক্ত আরাকান।
আত্মিক, দৈহিক ব্যাধি এখন যে দ্বিগুণ ত্রিগুণ
কে দেয় লাঞ্ছিত দেশে নেতৃত্ব নিপুণ
কোরেশী মাগন নেই, নেই বীর আশরাফ খান
আরাকান, মৌন আরাকান।
দৌলত কাজীর কণ্ঠে অতএব বারোমাসী শোনো,
পলাতক আলাওল হয়ে ফের দুর্ভাগ্য গোনো।
আকিয়াব রোড ধরে শা’সুজার মতো শোনো শোনো;
মর্সিয়ার একটানা তান।
আরাকান, বন্দী আরাকান।
তোমাকে জানতাম যেন ইবনে বতুতার কাল হতে।
খোলাফায়ে রাশেদার কালেই তো তৌহিদি ব্রতে;
উত্থিষ্ঠিত হয়ে বেশ আরবি-আজমি নানা মতে;
পেয়েছিল দীক্ষা আর জ্ঞান,
হে সুন্দর সুখী আরাকান।
অথচ এখন শুনি কান্নারোল বুসিডং হতে।
সন্ত্রাস, প্রকাশ্য খুন, আসমা খাতুন কোনও মতে
পারে না পবিত্র দেহ বাঁচাতে সে, বেয়েনেটের ক্ষতে
ধর্ষিতা, লাঞ্ছিতা আরাকান।
কুখ্যাত বিপ্লব আজ ‘নাগামিন’ অভিযান রূপে;
বাতিল তন্ত্রের জন্য মিথ্যা বুলি কপচানোর তোপে;
তোমাকে নিহত করে ক্ষমাহীন বাম-কাষ্ঠ-যুপে
মুক্তিদূত রূপে
গায়
সামাজিক বিপ্লবের গান
হে তিক্ত আরাকান।
অতীতে বোঝেনি যারা এইবার দুঃসময়ে
তোমার পতন পূর্ব-এশিয়ার দুর্ভাগ্য হয়ে;
করুক তাদের জ্ঞান দান।
রোসাঙ্গ রেনেসাঁ আজ চরম আত্মত্যাগে হোক মহীয়ান
আরাকান, বন্দী আরাকান।


রোহিঙ্গা কথন
তাসনীম মোহাম্মাদ

নাফ নদীর প্রেতাত্মা’রা জেগে উঠেছে।...
জীবনকে মায়া দেখাই নি;
জাতীয়তাবাদের কাঁটাতারকে রুখে দিয়ে
পঞ্চবারের মত সন্তান সম্ভবা স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে
বললাম,... প্রিয়তমা আমার!
হতে পারে এই আমাদের শেষ সাক্ষাৎ; যদি
হায়েনার নৃশংসতা আমাকে খুবলে খায়।...
তুমি ধরে নিতে পার, জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে
আমরা আমাদের চোখের জলকে
পাহাড়ের শিরা-উপশিরাতে বপন করে দিলাম; যেন
তোমার প্রসবার্ত শিশুকে
রক্তমাখা নদীজলের গন্ধ শুকতে না হয়।

প্রিয়তমা আমার!
তোমার ছলছল চোখ আমাকে দুর্বল করে দিতে পারে--
তুমি কি চাও আমি আমার শক্রদেরকে পৃষ্ঠ পরিদর্শন করি?
বাসর শয্যার প্রথম প্রণয়ে বলেছিলে,-- 
কা-পুরুষের স্ত্রী হয়ে বিচার দিবসে মুখ দেখাতে চাও না!
প্রিয়তমা! তুমি-তো জানো, আয়লান’রা দরিয়ায় ডুব দিয়ে
আমাদেরকে করে তোলে উজ্জীবিত!
তুমি-তো জানো, রক্ত দিয়ে আমরা আমাদের
জমিনকে করে তুলি উর্বর। সে উর্বরা জমিনে উন্নত ফসল ফলাতে
প্রয়োজন উৎকৃষ্ট বীজ; যা শত্রুর বাঙ্কারে ঝাপিয়ে পড়ার অনেক আগেই
তোমার গর্ভে প্রোথিত করেছি। তুমি-তো জানো,
আমাদের শিশু’রা এখনো অসংখ্য আয়লান হয়ে উঠতে পারেনি
আর আমরা হয়ে উঠতে পারিনি অসংখ্য মাজ-মুয়াজ!
সেহেতু শত্রুরা আজ বড় বেশি নৃশংস হয়ে উঠেছে।

প্রিয়তমা আমার! তোমার পঞ্চ সন্তানকে বলো,
শহীদের সন্তান সে! শত-শতাব্দীর জমিন তার
এ জমিনের ফসল যেন সে ঘরে তোলে।
আর যদি দেখতে পাও
আমি ফিরে এসেছি ঝাণ্ডাহাতে বিজয়ের; তবে
ফের হবে আমাদের শপথের দ্বিতীয় বাসর।

অতএব; হে প্রিয়তমা! তোমাকে সালাম; তোমাকে বিদায়!
কেননা-- ভোরের নির্মল রবি ফুটে উঠতে
কিংবা জান্নাতের সু-সংবাদ ভেসে আসতে
আর অল্প কিছু সময় কেবল বাকি।...


বিপন্ন রোহিঙ্গা
জাফর পাঠান

ইয়াজুজ- মাজুজের- বর্বর  প্রেতাত্মা
করেছে ধারণ- মিয়ানমারের জান্তা,
সভ্য যুগের অসভ্য এরা- খুনি ভঙ্গি
সর্বেসর্বা জঙ্গির চেয়েও সেরা জঙ্গি।

ওরা চেনে না রক্তগোলাপ, চেনে হত্যা
মানে না শান্তির- গৌতম বুদ্ধের সত্তা,
 রোহিঙ্গাদের রক্ত পান- এদের ধর্ম
জবর দখল- ধর্ষণ, ওদের কর্ম।

দেবতা ওদের- পিশাচ আর ক্ষমতা
ওরা শুধু ভয় পায়- দেখে মানবতা,
শুভ্রতা-সাম্যতা-শান্তিতে নাই বিশ্বাস
 দেখে কাঁদে বুদ্ধ, ফেলে কষ্টের নিঃশ্বাস।

 তোরাও কাঁদবি শীঘ্র- জেনে নিস খুনি
এটা নয় শেষ- খেলছিস যা এক্ষুনি,
বর্গীর পাল- জানিস না শাস্তির ঝাল
আজকে বেঁচে গেলেও- বাঁচবিনা কাল।


রোহিঙ্গার জন্য
হাসান নাজমুল

চলো ভীতিকে টুকরো টুকরো করে কেটে
রোহিঙ্গার পাশে দাঁড়াই
চলো আজকে মরবার জন্য পথ হেঁটে
বাঁচাবার হাত বাড়াই।

বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসছে, কেউ কাঁদে,
মুক্তিযোদ্ধা হও বাঙালি,
বৌদ্ধ সভ্যতা হাসে রোহিঙ্গার ফরিয়াদে
চলো বন্ধ করি হৈ-তালি।

দ্যাখো, তাজা প্রাণ খতম হচ্ছে অবিরত,
কিভাবে চুপ থাকি বলো?
রাখাইনে আজ জ্বলছে ঘর কতশত
পিশাচ মেরে বাঁচি চলো।


অনিবার্য বিপ্লবের স্বপ্ন
রিয়াজ উদ্দিন

ওগো প্রিয়তমা স্ত্রী,
নাফ কেন এ বঙ্গের সবচেয়ে লবণাক্ত নদী?
জানো তুমি?
কারণ,এর অর্ধেক জল কেবল মজলুমদের অশ্রু।
আমার প্রিয়তমা স্ত্রী, নাফের এপ্রান্তে হিংস্ররা আবার জেগে উঠেছে,
ওরা কেবল রক্ত চায়,ওরা কেবল মাংস চায়!
তাই তোমাকে রেখে গেলাম নাফের ঐপান্তে, যাতে আমার অনাগত সন্তানটি
আগুনের কু-লী আর অভিশাপের লাল রং না দেখে
নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে ভয়হীন কয়েকটি নিঃশ্বাস টানতে পারে।
আমার জন্য চিন্তা করো না, বেঁচে থাকলে দেখা হবে কোনো এক বিপ্লবের মঞ্চে,
যেখানে আমাদের সন্তানেরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করবে
আরাকানের প্রতিটি অলিগলি।
আর যদি মারা যাই, তবে দেখা হবে জান্নাতের সিঁড়িতে।
আমার প্রিয়তমা স্ত্রী,
তুমি চিন্তা করো না। আমাদের খুন করা মানে শেষ করা নয়,
আমাদের খুন করা মানে আমাদের প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে
একেকজন খালেদ, একেকজন বখতিয়ার
আর একেকজন মুহাম্মদ বিন কাসেমের জন্ম দেওয়া।
ওগো প্রিয়তমা স্ত্রী, এই নাফ জানে,এই মংডু জানে
এই আরাকান জানে,এই বাংলা জানে এ মাটি আমাদের,
এখানে মিশে আছে আমাদের হাজারো বছরের নিঃশ্বাস।
প্রিয়তমা স্ত্রী,
একটি অনিবার্য বিপ্লবের জন্য প্রয়োজন কয়েকফোটা লাল রক্ত,
যেই রক্তের উপর বিনির্মাণ হয় একটি বিপ্লবের।
আমি সেই বিপ্লবের গলিতে হারিয়ে গেলেও,
অনিবার্য বিপ্লবের স্লোগানের জন্য রেখে গেলাম প্রিয় সন্তানকে।
ওগো প্রিয়তমা স্ত্রী,
তোমাকে জীবনে কিছু দিতে পারিনি, যদি পারি এবার দিয়ে যাবো
অনিবার্য বিপ্লবের জন্য লাল টুকটুকে রক্তমাখা
একডজন সাদা গোলাপ। ভালো থাকো প্রিয়তমা স্ত্রী......!


আগুনখেলা
মোহাম্মদ ইসমাইল

প্রকাশ্যে  ও দিবালোকে রোসাঙ নগরীর ও’ দ্বারস্থ’ মুখে
সেদিন দেখেছি- একদল বার্মিজ পোশাক পরিহিত সামরিক জান্তাকে
কাঁধের উপর  শান দেওয়া অস্ত্র ভর করে
একদল শিকারী কুকুরের মতো শোর চিৎকারে
দুর্বৃত্তের আদলে হায়! হন্যে ছুটে গিয়ে
ধ্বংস উম্মুখ মতোয়ারায় সব কিছুকে দুঃস্বপ্নের  আগুনে
পুড়িয়ে দিতে!!
ওদের এ আগুনখেলায় শুধু বাস্তুভিটা নয়, যেন মানবতা দলছে!
নিঃসহায় ভুক্তভোগী অবুঝ রোহিঙ্গা নারী শিশু কেমন জানি শুধু পুড়ছে!
জ্বলছে আর জ্বলছে! কিন্তু কেন ? কেন এই জঘন্য কর্মকাণ্ড ??
কেন এক অপেয়া দেবীর  ঈর্ষাকাতরতায়!
পুড়ছে সারা শহর, গ্রামের পর গ্রাম!

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ