শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও পিএইচপি পরিবারের অবদান

জিয়া হাবীব আহসান : বরেণ্য শিক্ষাবিদ, শিল্প উদ্যোগতা, শিল্পপতি ও সমাজসেবক আলহাজ্ব সূফী মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এর একটি কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএস-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন,  ‘এদেশ শুধু সোনার বাংলা নয়, এদেশ হীরার বাংলাও বটে’ তিনি এদেশের মাটিকে হীরার চেয়েও মূল্যবান মনে করেন। তিনি নিজেই উত্তরবঙ্গের ফসলী জমিতে চাষ করে আলুর বাম্পার ফলনের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে তাঁর এ কথায় সত্যতা প্রমাণ করেছেন। তিনি নিবেদিত প্রাণ একজন দেশ গড়ার কর্মী হিসেবে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইউআইটিএস-এ আমি ও আমার বন্ধু এডভোকেট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন গত ২০১০ সনে এলএল. এম. ডিগ্রি অর্জন করতে গিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর এ বিরাট অবদানকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞচিত্তে অনুধাবণ করেছি। ইউআইটিএস-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পিএইচপি চেয়ারম্যানের স্বাগত ভাষণে বাংলাদেশে জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চার উপর গুরুত্ব এবং দেশে জ্ঞানের আলো ছড়াতে তাঁর হৃদয়ের তীব্র আকাংখা অনুভূত হয়। যেহেতু ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’ সেহেতু তিনি জ্ঞান অর্জনের উপর সবচেয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। দীর্ঘদিন যাবৎ পিএইচপি পরিবারের সাথে বিভিন্ন আইনী কর্মকা- পরিচালনা ও দেখাশুনাকালে শ্রদ্ধেয় মিজান স্যার যিনি স্নেহবশত আমাকে কখনো কাকু, কখনো বাবা বলে সম্বোধন করেন তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞ ও অবদান সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)এর যাবতীয় কর্মকান্ডে তাঁর ও তাঁর সন্তানদের পৃষ্টপোষকতা আন্তরিক সহযোগিতা অত্যন্ত আন্তরিক এবং প্রণিধানযোগ্য। যেকোন জনহিতকর ও মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের অবদান অতুলনীয়। বিশেষ করে তাঁর সহধর্মিণী মিসেস তাহমিনা রহমান আন্টি ও পুত্রগণ যথাক্রমে মহসিন ভাই, আলী হোসেন ভাই, আনোয়ার ভাই প্রমুখের অসাধারণ আন্তরিকতা ও বিনয়ী স্বভাবের প্রতি আকৃষ্ট হই। একজন শিল্পপতি কিভাবে তাঁর প্রতিটি সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করেছেন তা ভাবতেই অবাক লাগে। সফল মাতা পিতা হিসেবে তাদের নাম প্রনিধানযোগ্য। তাঁরা তাদের প্রতিটি সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ ও আদব শিখিয়ে সমাজের জন্য বিরাট এক অবদান রাখেন। তাদের ৭ পুত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতা যথাক্রমে; মোঃ মহসিন বিবিএ, নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; মোঃ ইকবাল হোসাইন, বিবিএ নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনোয়ারুল হক বিএসসি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, নর্থ ইস্টার্র্ন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন, ইউএসএ; মোঃ আলী হোসাইন (সোহাগ), ব্যাচেলার অব ম্যানেজমেন্ট, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অষ্ট্রেলিয়া ; মোঃ আমির হোসাইন, ব্যাচেলার অব বিজনেস কমিউনিকেশান, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া; মোঃ জহিরুল ইসলাম, ব্যাচেলার অব ইনফরমেশান টেকনোলজি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়া; মোঃ আক্তার পারভেজ, ব্যাচেলার অব বিজনেস কমিউনিকেশন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরা অষ্ট্রেলিয়া। পিএইচপি পরিবার এদেশ গড়ার প্রত্যয়ে শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত অল্প খরচে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের (বৃত্তি) সহ অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহের বার্ষিক আয়ের বিরাট একটি অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়-সহ শিক্ষাক্ষেত্রে তিনি দান করে আসছেন। ২০১৪ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ এবং আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডাঃ তুন মাহাথির মাহামুদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের সহায়তাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিএইচপি পরিবারের পক্ষ হতে নিয়মিত ও এককালীন অনুদান প্রদান করা হয়। চট্টগ্রামের হালিশহর জেলা পুলিশ লাইনে ‘শহীদ এসপিএম শামসুল হক বিদ্যা নিকেতন’ নামের বিদ্যালয়টি সর্ম্পূণ নির্মাণ ব্যয় নির্বাহ করা হয় পিএইচপি পরিবারের পক্ষ থেকে যেখানে শত শত শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভের সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে পি.এইচ.পি পরিবারের সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে বাংলাদেশে একটি মানসম্মত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। পিএইচপি চেয়ারম্যানের আন্তরিক ইচ্ছা ও উদ্যোগে বিপুল অর্থব্যয়ের প্রতিষ্ঠিত হয় ইউআইইএস ইউনির্ভাসিটি অব ইনফরমেশান টেকনোলজি এন্ড সাইন্স ২০০৩-২০১৭ পর্যন্ত পিএইচপি ফ্যামিলি উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করে। ঢাকায় বারিধারা জে ব্লকে ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় এবং ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০১০ সালে আমি নিজে এবং চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী এডভোকট মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী এলএলএম ডিগ্রী লাভের সুযোগ পাই। পাবলিক বিশ্ব বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক, বিচারকদের মাধ্যমে আইন অনুষদের পাঠদান কার্যক্রম অত্যন্ত যুগোপযোগী এবং মানসম্মত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিবিএ; এমবিএ ইংরেজির সহিত প্রভৃতি প্রোগ্রাম দক্ষতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দু’টি স্থায়ী ক্যাম্পাসের কার্যক্রম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য বিলম্ব হচ্ছে। সরকার কর্তৃক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ৫% স্কলারশীপ প্রদানের বিধান থাকলেও ইউআইটিএস কর্তৃপক্ষ এখানে ১১% পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ প্রদান করে থাকে যা দেশের জন্য একটি ভালো দৃষ্টান্ত। পিএইচপি ফ্যামিলার সকল সদস্যের জন্য পাঠদানের খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি এবং স্টাফ ও তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য পাঠদান ৫০% ফ্রি। প্রতিবছর এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। এর থেকে বুঝা যায় যে, পিএইচপি পরিবারের বার্ষিক আয়ের একটি বিরাট অংশ এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ব্যয় হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ইউআইটিএস-এর সাবেক প্রো-ভিসি বর্তমান এডভাইজার শ্রদ্ধেয় প্রফেসর সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, নব্বই দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার নীতিমালা ও কৌশলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। আমরা যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, তারা ১৯৯০ সালে দাঁড়িয়ে ভাবতে পারিনি বেসরকারি উদ্যোগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত মূল ধারণাই ছিল সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্ভর। ইউজিসি’র তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি আন্তর্জাতিক ও ৯২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- যার ৮৫টি কার্যক্রম পরিচালিত করছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মানববিদ্যার সকল শাখা নিয়ে বাংলাদেশের উচ্চতর শিক্ষা ব্যবস্থায় ১৩২টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রাকালে এর উদ্যোক্তাগণ ল্যাটিন আমেরিকান ও আমেরিকান ধাঁচের শিক্ষা পদ্ধতি অবলম্বনে এক ধরনের বাণিজ্য কাম উচ্চ শিক্ষার ধারনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিশ শতকের শুরুতে এর আংশিক সফলতার চেহারা দৃশ্যমান হলেও এক পর্যায়ে শিক্ষার চাইতে বাণিজ্যই প্রাধান্য লাভ করতে থাকে। মূলত: সমস্যা ছিল অন্যত্র। আর তা হলো, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রম সমুন্নত রাখার জন্য যে মানের একাডেমিক ও সাধারণ প্রশাসনের প্রয়োজন পড়ে, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তাগণ অপারগ হয়েছেন। সরকার ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ প্রবর্তনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মানের মৌলিক এসব বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ সচেতন হতে থাকেন। সরকারের যৌক্তিক ও আন্তরিক উদ্যোগের ফলে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল উদ্যোক্তাগণই প্রকৃত মান-সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের শিল্প উদ্যোক্তা জগতের সুপরিচিত নাম পিএইচপি ফ্যামিলি ও এর কর্ণধার আলহাজ্ব সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য সহনীয় খরচে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার মানসে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন “ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস” (ইউআইটিএস)। Future will be better than the Past ঐশী এই বাণীকে ধারণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। অপর পক্ষে “নীরবে করো জাতির সেবা” এই স্লোগানে সমৃদ্ধ পিএইচপি ফ্যামিলির প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ অপরদিকে মানদণ্ডে উত্তীর্ণ। এর ফলোশ্রুতিতে এই শিল্প পরিবারটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য মূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। আলোচিত এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইউআইটিএস’। ১৬টি প্রোগ্রামে গত প্রায় ১৫ বছরে ১৬ হাজার গ্র্যাজুয়েট সফলতার সাথে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করে দেশ-বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কর্মজীবনে আত্মনিয়োগ করছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জন ইউআইটিএস গ্র্যাজুয়েট, আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করছেন। দেশে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক সংকট প্রকট। স্বয়ং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ সংকট বিদ্যমান। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক অর্ধেকের কম, খ-কালীনই বেশি। সরকারের বিদ্যমান আইনে পূর্ণকালীন শিক্ষকের সংখ্যা যদিও ৭৫ শতাংশ থাকা আবশ্যিক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অনিহা ও যোগ্য শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই সে মানে উপনীত হতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে ইউআইটিএস একটি ব্যতিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ ভাগ শিক্ষক পূর্ণকালীন এবং দেশ-বিদেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এখানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। গুলশান-বারিধারার মতো একটি জায়গায় ষোলতলা ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর কোথাও কোনো শাখা ক্যাম্পাস নেই। বারিধারার ভাটারায় ১০৪ কাঠা নিজস্ব জমির উপর নির্মিত হচ্ছে দুটি ব্লকে বিশাল নয়তলা ভবন। আশা করা যায়, এ বছরের শেষ নাগাদ বেশ কিছু বিভাগ ও প্রশাসনিক শাখা নতুন ভবনে তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। ইতোমধ্যে ফার্মেসি, সিভিল ও সমাজকর্ম বিভাগের আংশিক কার্যক্রম চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান নিজ জীবন, নিজ পরিবার ও নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেভাবে মানসম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন, ইউআইটিএস-ও এই কোয়ালিটি দর্শনের বাইরে যেতে দেননি। ব্যক্তিগতভাবে তিনি একজন মহাসাধক ও লেখাপড়া জানা প-িত মানুষ। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েটগণ করেছেন। তাঁর সাত ছেলে এক মেয়ে দেশে ও বিদেশের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ইউআইটিএস-এর প্রতিটি নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি যে প্রধান আলোচক হিসেবে আলোচনা রাখেন, তা এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকে, ছাত্র-ছাত্রীরা গভীর মনোনিবেশ ও আগ্রহ নিয়ে এসব আলোচনা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করেন। নিজেকে চেনা, নিজের অন্তর্নিহিত মহাশক্তিকে আবিষ্কার করা এবং কঠোর সাধনার পথ বেছে নিয়ে মানুষকে ভালবাসা এবং অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করা, ধর্মের একনিষ্ঠ ও শান্তিময় চর্চার মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ অক্ষুণœ রাখা তার জীবন দর্শনের মর্মকথা। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উন্নত মানুষের স্বপ্ন ধারণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তনে যথাক্রমে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এপিজে আব্দুল কালাম ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ড. মাহাথির বিন মুহাম্মদকে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এই তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী তৃতীয় সমাবর্তনেও পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ মনীষীকে আমন্ত্রণ জানাবেন। তিনি মনে করেন, বিল গেটস-এর মতো প্রযুক্তি বিজ্ঞানীরা ইউআইটিএস-এ এসে একদিন সন্তানদের সমাবর্তনে বক্তব্য রাখবেন। এইসব মহামানবদের আমাদের সন্তানদের সামনে এনে তাদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন জাগিয়ে দেন শ্রদ্ধেয় মিজান সাহেব। উক্ত বিশ্ববিদালয়ের  তিনটি অনুষদ ও দশটি বিভাগ নিয়ে পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে উন্নত মানের ২৭টি ল্যাবরেটরি। ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকগণ সতর্ক ও সচেতন থাকেন যেন, থিওরিটিক্যাল ক্লাস শেষ হওয়ার পর পরই শিক্ষার্থীরা প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলো উপভোগ করতে পারেন। প্রায় প্রতি সেমিস্টারে বিভাগ ভিত্তিক বাস্তব চাহিদা মোতাবেক বই ক্রয় করা হয়। ২০১১ সালে ইউআইটিএস-এ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে টওঞঝ জবংবধৎপয ঈবহঃৎব নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৯টি জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে এ কেন্দ্র থেকে, যার প্রতিটি প্রবন্ধই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামিদামি শিক্ষক ও গবেষক দ্বারা রিভিউকৃত। এ ছাড়া এ কেন্দ্র থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি সেমিস্টারে প্রকাশিত হয় ইউআইটিএস-এর ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-গবেষকগণের শিক্ষা সহায়ক বিভিন্নমুখী কার্যক্রমের সচিত্র প্রতিবেদন, আবিষ্কার ও বিভিন্ন মাত্রিক অর্জন। এ কেন্দ্র থেকে জ্ঞান-গবেষণার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ ও অনুবাদের প্ররিকল্পনাও রয়েছে কর্তৃপক্ষের। বছর ও সেমিস্টার ভিত্তিক আয়োজন করা হয়ে থাকে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কসপ। প্রত্যেক চূড়ান্ত বর্ষের ছেলে-মেয়েরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ: বিশেষজ্ঞগণের উপস্থিতিতে তাদের টার্ম পেপার ও ইন্টার্নশিপ থিসিস ডিফেন্স করে থাকেন। ইউআইটিএস-এর মেধাবী শিক্ষার্থীরা এ পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিষয়ে ৮টি জাতীয় প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১২ সালে Basis Soft Expo-2012 সালে Android GlobalPlace API implementation using GPS Geolocation এবং ২০১৭ সালে Brackathon ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে Developing real life endroide application অ্যাপস ডিজাইন করে হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২০১০ সালের আইন ও বিধি-বিধান প্রতিপালনে ইউআইটিএস শুরু থেকেই অত্যন্ত আন্তরিক ও সচেষ্ট থেকেছে। এখানে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগে অনুসরণ করা হয় ইউজিসি নির্দেশিত নীতিমালা। ইতোমধ্যেই সকলের জন্য প্রণীত একটি যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও ট্রাভেল পলিসি প্রণয়ন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ সংবিধি প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গত প্রায় পনের বছরে চারজন নিয়মিত উপাচার্য, দুইজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ইউআইটিএস-এর কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল এ্যা- ইলেকট্রোনিক ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. কায়কোবাদ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করছেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. মাযহারুল হক। এ ছাড়া ফার্মেসি বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. শীতেস চন্দ্র বাছার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকগণকে দেশ-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, গৃহীত পরিকল্পনায় আগামী সাত বছরের মধ্যে ইউআইটিএস-এর অধিকাংশ শিক্ষক এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখায় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন। বর্তমানে ইউআইটিএস-এ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক মঞ্জুরীকৃত হেকেপ প্রকল্পের উপর কাজ চলছে। উন্নত ও বিশ্বমানের শিক্ষা নিশ্চিত করার এ প্রকল্পে ইউজিসি ইতোমধ্যেই বায়ান্ন লক্ষ টাকা ছাড় দিয়েছে এবং আরো প্রায় দেড়কোটি টাকা এ প্রকল্পের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইউআইটিএস আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে University online management সফট্ওয়্যার সংযুক্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে এডুসফ্ট কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোলায়মান স্যার আশা করেন, ইউজিসি ও সরকার প্রদত্ত এই উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প ইউআইটিএস সফলতার সাথে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হবে। বোর্ড অব ট্রাস্টি এর চেয়ারম্যান ও পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মনে করেন, আগামী বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ইউআইটিএস হবে একটি অনুসরণীয় নাম। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সকল প্রকার ড্রাগ, ইভটিজিং, সন্ত্রাস ও নকল মুক্ত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ইউআইটিএস পরীক্ষা পদ্ধতির স্বচ্ছতার জন্য মহানগরী সাংস্কৃতিক ফোরাম কর্তৃক শ্রেষ্ঠ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পুরস্কার অর্জন করেছে। আমাদের প্রত্যাশা, উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একদিন বিশ্বমানের উন্নত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবে। গান গজল, হামদ, নাত, কাওয়ালী, ছেমা প্রভৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের শতসহস্র বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে চিরঞ্জীব শ্বাশত ধারায় ফিরিয়ে আনতে পিএইচপি চেয়ারম্যান এর অবদান অতুলনীয় ।

এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পি এইচ পি পরিবারের পদচারণা ও অবদান প্রশংসনীয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের পীর আউলিয়া সূফী সাধকদের নিয়ে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্যক গান কাব্য পুঁথি প্রভৃতি সংগ্রহ পূর্বক তা গ্রন্থনা করে বিরাট অবস্থান রাখছেন শ্রদ্ধেয় পিএইচপি চেয়ারম্যান। বিশেষ করে মাইজভা-ারী গানের রাজা রমেশশীলের হারিয়ে যাওয়া বিপুল গানের সংকলনের পদক্ষেপ নেন। এছাড়াও আঞ্চলিক গানের রাজা চট্টল গৌরব আব্দুল গফুর হালির স্বরলিপিসহ গীতিকাব্য এবং চাটগাঁইয়া নাটক সমগ্র রচনা করে দেন। বর্তমানে গফুর হালির নাটক ‘তাঁকে নিয়া’ আর্ট ফ্লিমের কাজ চলছে। চাটগাঁইয়া ভাষার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় ও পুনরুজ্জীবনে পিএইচপি ফ্যামিলির অবদান অতুলনীয়। পিএইচপি চেয়ারম্যানের দুই পুত্র যথাক্রমে মহসিন চৌধুরী এবং আনোয়ার চৌধুরী এ ব্যাপারে যুগপৎ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা কোরআনের বুলবুলিগুলোকে খুঁজে বের করে তাদেরকে দেশী-বিদেশী প্রতিযোগিতায় উপস্থাপনের সুযোগ করে দেন পিএইচপি কোরআনের আলো নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কোরআনের আলো অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা যাচাইয়ের সুযোগ আছে এবং বিদেশের মাটিতে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন। পি.এইচ.পি চেয়ারম্যান মহোদয়ে পৃষ্টপোষকতায় প্রতিটি সন্তান শিক্ষা ও সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে আসছেন। মুসলিম সংগীত চর্চার সোনালী ইতিহাস রচনা ও ধর্মান্ধতা মুক্ত নির্দোষ সংস্কৃতি চর্চায় তাদের অবদান অতুলনীয়। ইসলামী তাহাজ্জীব তামাদ্দুন ও সংস্কৃতিকে সম্মুন্নত রাখতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। তৎমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আল মোক্কাদাস এ্যালবাম। ইসলামী ঐতিহ্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক পবিত্র স্থাপনা ও দুর্লভ নিদর্শনাবলীর বর্ণনা সম্বলিত আকর্ষণীয় চিত্র সম্ভারের সমাহারের এই এ্যালবাম। সূফীবাদ ও সূফী চর্চা এর প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে মানুষের মানুষে হিংসা বিদ্বেষ দূরীকরণে তাঁর অবদান অতুলনীয়। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতি ও এর শিক্ষা নিয়ে পরিচালিত অনুষ্ঠানে মিজান সাহেবের পৃষ্টপোষকতা তুলনাবিহীন। তিনি নিজেও কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ সাধনা, নিয়মিত নফল রোজা, জিকির আসকারের মাধ্যমে আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন। সবসময় তাঁর মুখে শেখ সাদী (রাঃ), রুমি প্রমুখ মহামনিষীদের অমিয় বাণী শুনতে পাই। অত্যন্ত বিনয়ী নিরহংকারী মানুষটি বন্যা দুর্গতদের এবং দুঃস্থ অসহায় মানুষদের পুনর্বাসনেও তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে মানবপ্রেমী মানুষ আলহাজ্ব মিজানুর রহমান ও তৎ পরিচালিত পিএইচপি ফ্যামিলির অবদান ব্যাপক ও প্রণিধানযোগ্য। মহান পরওয়ারদিগার আল্লাহ্‌ সুবাহানুতায়ালা তাঁকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে হেফাজত করুন, ইহাকাল ও পরকালের সাফল্য এবং কল্যানাদি দান করুন। আধুনিক শিল্পোন্নত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে বিভোর মানুষটির জন্য দেশবাসী সকলের দোয়া ও সমর্থন একান্তভাবে প্রতাশ্যা করি।

লেখক : আইনজীবী, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী ও কলামিস্ট এবং পরিচালক (অর্গানাইজিং), সভাপতি, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-বিএইচআরএফ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ