শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সরকার মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার : থাইল্যান্ড থেকে ‘পচা’ চাল আমদানি করে সরকার জনগণের ক্ষুধা নিয়ে ‘তামাশা’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, আফ্রিকা থেকে পচা গমের পর এবার থাইল্যান্ড থেকে পচা চাল আমদানি করা হয়েছে। এমবি ‘থাই বিন বে’ নামে একটি জাহাজে ১২ হাজার টন চাল ৩১ আগস্ট এবং এমভি ‘ডায়মন্ড’ নামে আরেকটি জাহাজে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল চলতি মাসে আনা হয় থাইল্যান্ড থেকে। গত দুইদিন আগে এই পচা চালের গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে চট্টগ্রামজুড়ে। এসব চাল একেবারেই খাবার অনুপযোগী ও অত্যন্ত নিম্নমানের। আমরা মনে করি, খাদ্যের অনুপযোগী চাল বা গম সরবারহ করা সংবিধান পরিপন্থি। এর মাধ্যমে সরকার শুধুমাত্র সংবিধান বিরোধী কাজই করেনি, মানবতা বিরোধী কাজ করছে, জনগণের ক্ষুধাকে নিয়ে তামাশা করছে।

ব্রিফিংয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, অনিন্দ ইসলাম অমিত প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

খাদ্য বিভাগ ওইসব ‘পচা’ চাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস না করার কথা বললেও জাহাজ দুইটি বন্দরে নোঙ্গর থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন রিজভী। তিনি বলেন, খাদ্য বিভাগ চালগুলো ফিরিয়ে নিতে বলেছে থাই জাহাজ দুইটিকে। কিন্তু জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাল ফেরত না নিয়ে বেসরকারিভাবে বিক্রি করে যাবেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত আমরা শুনতে পাচ্ছি। গত মঙ্গলবার থেকে তারা যোগাযোগ করে চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এখনো ওই জাহাজ দুটি বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকায় একটি বিষয় পরিষ্কার যে, এর পেছনে সরকারের রাঘব বোয়ালরা জড়িত।

রিজভী বলেন, প্রশ্ন হলো সরকারিভাবে আমদানি করা চাল বেসরকারিভাবে বিক্রির চেষ্টা কেনো? এখানেই খটকা। হাওরে বন্যার কারণে খাদ্য সংকট দেখা দেয়ায় সরকার থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে চাল আমদানি শুরু করে। ১৩ জুলাই থেকে এই পর্য়ন্ত সরকারি-বেসরকারি খাতে আমদানি করা চালবাহী ১৬টি জাহাজ বন্দরে এসেছে। পচা চালের খবর ফাঁস হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে পূর্বের আমদানি করা চালের চালানগুলোও নিম্নমানের কিনা?

ওএমএস‘র আতপ চাল সম্পর্কে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা খোলাবাজারে ওএমএসের আতপ চাল নিচ্ছে না । তারা যাতে এ চাল নেয় সেজন্য জোরজবরদস্তি করছে ডিলাররা। এর পেছনে আরো কি কি রহস্য রয়েছে তা দ্রুত তদন্ত করে বের করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ইতোপূর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গম কেলেঙ্কারির কথা নিশ্চয়ই দেশবাসী ভুলে যায়নি। খাদ্য অধিদফতর ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে সে সময় ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকায় ২ লাখ ৫ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন পচা গম আমদানি করা হয়েছিল। সেসময় পচা গম কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিষয়টি তখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে ছিল। উচ্চ আদালত পচা গম কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশনা দিলেও আজও সে তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কিন্তু খাদ্যের অনুপযোগী চাল বা গম সরবরাহ করা সংবিধান পরিপন্থী। এটির মাধ্যমে সরকার শুধু সংবিধান বিরোধী কাজই করেনি, মানবতাবিরোধী কাজ করছে। 

রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন সরকারের ভয়াবহ দু:শাসন ও লুটেরা নীতির কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ এখন শুন্যের কোঠায়। বিনিয়োগ না হওয়ায় এবং উৎপাদন দিন দিন কমতে থাকায় আমদানীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দেশ। ফলে আমদানি খাতে ব্যয় বাড়তে থাকায় বাইরের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। ৭ বছরের সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস শেষে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে চার গুণেরও বেশি। তিনি বলেন, দেশে একদলীয় শাসন বিদ্যমান থাকায় পোশাক রফতানীতে ধস, সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণে বিদেশে কর্মক্ষম শ্রমিক পাঠানো বন্ধ রয়েছে ফলে রেমিটেন্স প্রবাহের ক্রমাবনতি, চামড়া শিল্পে ব্যাপক ধ্বস বিশেষ করে আর্থিক খাতে ভয়াবহ নৈরাজ্য ও লুটপাটের কারণে দেশে বর্তমানে বিনিয়োগবান্ধব কোন পরিবেশ নেই। যে কারণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। সুতরাং বর্তমানে ভয়াবহ খাদ্য সংকটের পাশাপাশি সীমাহীন বেকারত্ব যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে কোনভাবেই দুর্ভিক্ষ ঠেকানো যাবে না।

দেশ বর্তমানে ভয়ঙ্কর দুঃসময়ের মধ্যে পতিত হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ভয়াবহ সংকট ডেকে আনতে পারে। এর উপর রোহিঙ্গা ইস্যু এক নতুন ধরনের বিপর্যয়ের মাত্রা যুক্ত হয়েছে, এটি কতদূর যাবে তা বলা মুশকিল। সরকারের চন্ডনীতির কারণে সর্বোচ্চ আদালতের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জাতীয় সংসদ। ক্ষমতাসীন নেতা ও মন্ত্রীদের সর্বোচ্চ আদালতকে নিয়ে অশোভন আচরণ জনসমাজে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, মানুষের বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়টুকু বিপন্ন হয়ে পড়াতে মানুষ এখন হতাশ। সংসদে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে যে কুৎসিত অশ্রাব্য আলোচনা হয়েছে সেটি স্পীকার এক্সপাঞ্জ করবেন কী না, এ নিয়ে জনগণের মনে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন পীড়ণে সরকারের বেপরোয়া শক্তি প্রয়োগ এখনও অব্যাহত রয়েছে। সরকার গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার উন্মুক্ত পথকে এড়িয়ে এখনও একচোখা দৈত্যের মতো আচরণ করছে। এতো দুর্যোগের মধ্যেও অবৈধ ক্ষমতার সিংহাসনে বসে কেউ কেউ পিশাচের হাসি হাসছেন। রাষ্ট্র সমাজের এখন এক দু:সহ মাৎস্যন্যায় চলছে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতাপ্রীতি ত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথে না এলে তাদের পতনের বিউগল আপনা থেকেই বাজবে।

এসময় তিনি বগুড়া জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামকে (ভিপি সাইফুল) জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসাথে অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান। মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানার পিত্রালয়ে পুলিশ আকস্মিকভাবে হানা দিয়ে শিরীন সুলতানা কোথায় অবস্থান করছে জানতে চেয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং বাড়ির লোকজনের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া মাগুরা জেলাধীন শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান, শ্রীখোল ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি জহিরুল হক ও ইউপি সদস্য আওরঙ্গকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এই সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান রিজভী।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ