আলোক মশাল হয়ে আছে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ
চারঘাট (রাজশাহী): রাজশাহীর চারঘাটের গৌরবময় প্রতিষ্ঠান সারদার মোক্তারপুর গ্রামে অবস্থিত রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ দেশের অন্যতম মিলিটারী স্কুল। প্রাকৃতিক মনোহর দৃশ্যের পটভূমিতে অবস্থিত এই কলেজটির প্রথম নাম ছিল আইয়ুব ক্যাডেট কলেজ (এসিসি)। ১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এটি স্থাপিত হয়। পাকিস্তনের স্বৈরশাসক ও স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান তার নিজের নামে নামকরণ করে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পূর্ব পাকিস্তনের তৎকালীন গর্ভনর মুনায়েম খান (তিনি ১৯৭১সালে গুলীতে নিহত হন) এই কলেজটির উদ্বোধন করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর এই নামটি পরিবর্তন হয়ে এর নাম হয় রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ। মরহুম উইং কমান্ডার (অব.) মোহম্মদ সাঈদ এই কলেজের প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ১লা নবেম্বর যোগদান করেন। ১৯৬৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি প্রথম এডজুটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন পাঞ্জাবের ক্যাপটেন খালেদ আদিব। মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন সিনহা এখানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পাকিস্তন আমলে পূর্ব পাকিস্তনে স্থাপিত ৪টি ক্যাডেট কলেজের মধ্যে এটি শেষতম। এটি রাজশাহীর চারঘাট থানার সারদার মুক্তারপুর গ্রামের পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। বাঙ্গালী প্রথম অধ্যক্ষ হন মি. বাকিয়াতুল্লাহ যিনি ছিলেন কলেজের ৩য় অধ্যক্ষ। তিনি ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি নিয়োগ পান। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বীর বিক্রম এবি সিদ্দিকীসহ এই কলেজের অনেক শিক্ষক ছাত্র কর্মকর্তা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দেন। যুদ্ধে এই কলেজের ৮জন ক্যাডেট ১০জন স্টাফ শহীদ হন ও ৪জন নিখোঁজ হন। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় অবদান রাখার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম স্মরণযোগ্য।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের আয়তন ১১০ একর। এই প্রতিষ্ঠানের মটো হচ্ছে ‘রাববী জিদনি ইলমা।' এর তিনটি হাউজ ইসলামের তিনজন বীরের নামে নামকরণ করা হয়েছে। ‘মোহাম্মদ বিন কাশিম'-এর নামে হাউজের মটো হচ্ছে ‘কাজই শক্তি' এবং লোগো এ্যারাবিয়ান হর্স, রং নেভী ব্লু। ‘তারিক বিন জিয়াদ'-এর নামে হাউজের মটো হচ্ছে ‘সত্যই সুন্দর’ এবং লোগো ব্যঘ্র , রং লাল। ‘খালিদ বিন ওয়ালিদ’-এর নামে হাউজের মটো হচ্ছে ‘জ্ঞানই শক্তি' এবং লোগো ঈগল, রং সবুজ। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ এ্যালামনাই এসোসিয়েশন ‘ওল্ড রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ এ্যসোসিয়েশন-অরকা' নামে পরিচিত। প্রথমে এটি সারদা নামের অংশের কারণে ‘অসকা' নামে পরিচিত ছিল। অরকা কলেজের প্রতিষ্ঠিাবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।
প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। এই কলেজের রয়েছে সুদৃশ্য ভবনাদি। মূল ভবন বেশ আকর্ষণীয়। পটভূমিতে রয়েছে পদ্মা নদী ও তীরবর্তী বৃক্ষসমূহ। যা এক নৈসর্গিক আবহ রচনা করেছে। চারঘাটের পদ্মা ও বড়াল নদীকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক দৃশ্য বেশ আকর্ষণীয়। এখানকার খয়েরশিল্প উল্লেখযোগ্য কুটির শিল্প হিসেবে বিদ্যমান। উন্নতমানের খয়ের এখানে উৎপাদিত হয় এবং তা দেশে-বিদেশে রফতানী হয়। সাম্প্রতিককালে এখানে নারিকেলের শক্ত মালাই থেকে বোতাম তৈরি হচ্ছে এবং তা যথেষ্ট কদরও পাচ্ছে। এসব শিল্পকে কেন্দ্র করেও পর্যটনের একটা আকর্ষণ থেকেই যায়।