শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নদী রক্ষার শপথ

 

স্টাফ রিপোর্টার : ‘দখল-দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী, বাঁচবে প্রাণ ও প্রকৃতি’ স্লোগান সামনে রেখে চতুর্থবারের মতো পালিত হলো নদীর জন্য পদযাত্রা। নদী রক্ষার শপথ নিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমীন মুরশিদ।

বিশ্ব নদী রক্ষা দিবসের প্রাক্কালে গতকাল শনিবার সকাল দশটায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে রিভাইন পিপল, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বুড়িগঙ্গা রিভার কিপারসহ সমমান প্রায় ৫০টি সংগঠনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথমে আলোচনা সভা ও পরে সদরঘাট নৌ টার্মিনাল পর্যন্ত যৌথ পদযাত্রা হয়। পদযাত্রাটি উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমীন মুরশিদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি  কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ন কবির, রিভার্স সেভিং নেটওয়ার্ক-যুক্তরাজ্যের সভাপতি রফিকুল হাসান জিন্নাহ, হাওর অঞ্চলবাসীর জাকিয়া শিশির, রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন প্রমুখ। 

আলোচনা সভা শেষে নদী রক্ষার শপথবাক্য পাঠ করান ডা. মো. আব্দুল মতিন। তার সাথে কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে শপথ নেন পানিসম্পদ মন্ত্রী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি  কর্পোরেশনের ২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ সকল অতিথি ও অংশগ্রহণকারী। কর্মসূচীতে আয়োজক সংগঠসমূহের প্রতিনিধিরাসহ নদী ও পরিবেশ রক্ষাকমীর্,  ছাত্র-যুবক ও নদী পাড়ের জনগণ ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহণ করেন। 

নদীকর্মী মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে কানাডায় ১৯৮০ সালে প্রথম দিবসটি পালিত হয়। ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি পালিত হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে এতে অনুসমর্থন করে জাতিসংঘ। বাংলাদেশে ২০১০ সালে দিবসটি প্রথম পালিত হয় রিভারাইন পিপলের উদ্যোগে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বুড়িগঙ্গা রিভারকিপার এবং পরবর্তিতে অন্যান্য সংগঠন এ দিবসটি পালনে যোগ দেয়। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। 

আমরা ক্রমান্বয়ে নদী থেকে দূরে সরে গেছি উল্লেখ করে পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমাদের আবার নদীর কাছে ফিরে যেতে হবে। একা একা নয়, সবাই মিলে ফিরতে হবে নদীর কাছে। পদযাত্রার মধ্য দিয়ে শাণিত হবে নদী রক্ষার শপথ। একমাত্র নদী রক্ষার কাজে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই সতেজ নদী নিশ্চিত হতে পারে।

নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলো নানা ধরনের সংকটের মুখে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এর কারণ হিসেবে তিনি দখল, দূষণ, ভাঙন ও প্রবাহস্বল্পতার কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, নদীদূষণের কারণে একদিকে যেমন পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, তেমনি আমাদের নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। আমাদের আরো বেশি পরিমাণে জনগণের মাঝে নদীদূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

নদী দখল রোধে ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার তাগিদ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, নদী দখলকারীদের সংখ্যা খুবই কম। আমরা জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে কাজ করি, তাহলে তাদের হাত থেকে নদী রক্ষা করা সম্ভব।

ঢাকাবাসীর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হলে সবার আগে ঢাকাবাসীকে সতর্ক হতে হবে। ঢাকাবাসী যদি তাদের গৃহস্থালি বর্জ নদীতে না ফেলে তাহলে বুড়িগঙ্গা দূষণ থেকে রক্ষা পাবে। অন্যথায় একসময় বুড়িগঙ্গাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

শারমীন মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ-নদী-অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ উন্নয়নের স্বার্থে  নদীকে রক্ষা করতে হবে। সরকার নদীরক্ষা কমিশন গঠন করে প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, এটিকে শক্তিশালী করতে হবে।  

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, নদী রক্ষার জন্য নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সকলকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে আমরা নদীকে দখল-দূষণ করবো না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার পক্ষ থেকে এই কাজটি আমি করে যাচ্ছি। 

ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, নদীর জন্য পদযাত্রা নাগরিকদের মধ্যে নদী রক্ষায় ঐক্যের প্রতীক, মানুষের এই ঐক্য ভবিষ্যতে আরো বড় হবে। এত আন্দোলন, নদীরক্ষায় টাস্কফোর্স ও নদী কমিশন গঠন করা সত্ত্বেও   বিগত ৮ বছরে একটি নদীও সম্পূর্ণভাবে দখল-দূষণ-অবকাঠামো মুক্ত হয়নি। এতে দেশের মানুষ আজ ব্যথিত ও হতাশ। অতএব, সারা দেশের সকল বিপর্যস্ত নদী উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ