কুমারখালীর কৃষিতে পরিবর্তন ॥ অর্থকরী ফসলের প্রতি ঝুঁকছে চাষীরা
মাহমুদ শরীফ, কুমারখালি (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা: জেলার কুমারখালীতে কৃষি ব্যবস্থায় ঘটছে পরিবর্তন। পাশাপাশি হাইব্রীড এবং অর্থকরী স্বল্প সময়ের ফসলের প্রতি দিন দিন চাষীরা ঝুঁকছে। অন্যদিকে কম মুনাফা ও ঝামেলা যুক্ত ফসলের চাষ পাচ্ছে হ্রাস। কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আঁখ, ভূরো স্থানীয় বোনা আউস ও আমন ধান, মিষ্টি আলু, দেশীয় প্রজাতের বিভিন্ন ফসলের চাষ প্রতি বছরেই কমছে। অন্যদিকে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান, গম, পান, ওল, শাক ভূট্টা ও বিভিন্ন সবজীর চাষ পাচ্ছে বৃদ্ধি।
জানা যায়, ২০১৬/১৭ অর্থ বছরে উপজেলায় মশুর ডাল চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৬ শত ৬০ হেক্টর। চলতি বছরে সেটা কমে ১ হাজার ২ শত ৯০ হেক্টর পৌঁছেছে। মটর আবাদ গত বছরে ২ শত ৭৫ হেক্টর হলেও এবার কমে ১শত ২ হেক্টরে নেমেছে। ছোলা গত বছরে ৮০ ও এ বছরে ২৪ হেক্টর আবাদ হয়েছে। খেশারী এক বছরের ব্যবধানে গত বছর ৮ শত ৫০ হেক্টর আবাদ হলেও এ বছর ৪ শত ৭০ হেক্টর চাষ হয়েছে। অন্য দিকে সবরী কলা এই অর্থ বছরে ৬ শত ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও এ বছর ৫ শত ৯০ হেক্টরে নেমে এসেছে। আঁখ চাষ হ্রাস পেয়েছে সব চেয়ে বেশি। গত বছর ২ হাজার ১ শত ৪০ হেক্টরের আবাদ হলেও এবার ১ হাজার ৬ শত ২০ হেক্টরে নেমে এসেছে। এছাড়াও পাট এক বছরের ব্যবধানে ৩ শত হেক্টর কমে গেছে। অন্যদিকে বনজ বৃক্ষের বাগান হ্রাস পেয়ে বাড়ছে ফলজ বৃক্ষের বাগান। তবে অর্থকরী ফসল হিসেবে পানের বরোজ বাড়ছে প্রতি বছর।
এব্যাপারে উপজেলার কেশবপুরের সবজী চাষী আঃ বারী, আতিয়ার রহমান, দেলোয়ার হোসেন জানান, আঁখ বিক্রিতে ঝামেলা, গুড় তৈরীতে বাধা, পাটের দাম কম, ডাল জাতীয় ফসলে মুনাফা কম ইত্যাদি কারণেই ধান, গম, ভূট্টা ও সবজী চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা জানায়, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে বেশি লাভের ফসলের জন্য চাষে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। উপজেলায় রেকর্ড পরিমান ভ্ট্টূা ও হাইব্রীড ওল চাষ বেড়েছে। খাদ্য ঘাটতির ক্ষতিপূরনের জন্যই ধান, গম, পান, শাক, ভূট্টা ও সবজীর আবাদ বাড়ছে বলে কৃষি বিভাগ মনে করে। এদিকে বিষ বৃক্ষ তামাক চাষে চাষীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে কৃষি কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
কুমারখালির কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া সবচে বেশি লেগেছে সার তৈরীতে। রাসায়নিক সারের উচ্চ মূল্য ও অভাবের জন্য চাষীরা ঝুঁকছে নিজেই সার তৈরীতে বর্তমানে গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার, কুইক কম্পোস্ট ও,এ,ওয়াই এম পদ্ধতির সার তৈরীতে আলোড়ন উঠেছে। কুমারখালির সবজী চাষে ইতিমধ্যেই কেশবপুর, এলঙ্গী, হাসদিয়া, আগ্রাকুন্ডা, জোতমোড়া, যদুবয়রা, কুশলীবাসা, মহেন্দ্রপুর এলাকা সুখ্যাতি কুড়িয়েছে। এদিকে চাষীরা বেশী লাভের আশায় দিন-দিন হাইব্রীড বীজের প্রতি ঝুঁকছে। এটাকে কৃষি ক্ষেত্রে বীজ সংকটের আশংকা করছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।