শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় জলাতঙ্ক প্রতিরোধে ভ্যাকসিন অপ্রতুল

খুলনা অফিস : খুলনা জেনারেল হাসপাতালে দিনকে দিন জলাতঙ্ক প্রতিরোধের ভ্যাকসিনের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়লেও সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। দাম বেশি থাকায় সবার পক্ষে এ ভ্যাকসিন কিনে এনে দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা। একমাত্র এ হাসপাতালে ভ্যাকসিন বরাদ্দ থাকায় খুলনার ৯ উপজেলায় বিভিন্ন পশু প্রাণীর কামড়ে আক্রান্ত মানুষেরা এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। যার কারণে প্রায়ই এ ভ্যাকসিনের সঙ্কট লেগেই থাকে। গত ১৩ আগস্ট থেকে এ ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র এ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন হাসপাতালে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় শহর পেরিয়ে বিভিন্ন উপজেলার মানুষ এই হাসপাতালে এসে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন। এই ভ্যাকসিন যদি অন্য উপজেলায় সরবরাহ করা হতো তাহলে এখানে এতোটা চাপ পড়তো না। ভ্যাকসিন চাহিদা দিয়ে ঢাকায় লোক পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৯৪৩ মানুষ কুকুর, শেয়াল, বাদুড় প্রভৃতি উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ আগস্ট এ ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় আক্রান্ত মানুষেরা বাইরে থেকে কিনে এনে ভ্যাকসিন দিচ্ছেন। এআরভি ভ্যাকসিন চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই এর মধ্যে ৬শ’ অ্যাম্পুল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ৭ জানুয়ারি ৫০ অ্যাম্পুল, ২৪ জানুয়ারি ১০০ অ্যাম্পুল, ২৫ ফেব্রুয়ারি ৫০ অ্যাম্পুল, ১৮ এপ্রিল ১৬০ অ্যাম্পুল ও ২০ জুলাই ২৪০ অ্যাম্পুল সরবরাহ করা হয়। যা রোগীর চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
গত ১৩ আগস্ট থেকে ভ্যাকসিন শেষ হওয়ার ফলে রোগীরা বাইরে থেকে জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন র‌্যাবিক্স-ভিসি ৪৮০ টাকায় কিনে এনে ৪ জনে একত্রিত হয়ে দিচ্ছেন। নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারের এ ভ্যাকসিন কিনে এনে দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
চিকিৎসকরা জানান, এই রোগের রোগীরা জল দেখে বা জলের কথা মনে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কিত হয় বলে এই রোগের নাম জলাতঙ্ক। ভাইরাসজনিত এই রোগটি সাধারণত কুকুর, শেয়াল, বাদুড় প্রভৃতি উষ্ণ রক্তের প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। এটি এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীতে পরিবাহিত হয় তার লালা বা রক্তের দ্বারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, একজন জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন নিতে গেলে তার মাসে ৪টি ডোজ পরিপূর্ণ করতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নেয়ার পর তিন দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ, তৃতীয় ডোজ ৭ দিনের মাথায় ও শেষ ডোজ ২৮ দিনের মাথায় নেয়ার নিয়ম রয়েছে।
পরবর্তীতে এক বছরে আরও একটি কোর্স পূর্ণ করতে হবে। পরবর্তীতে ৫ বছরের আরও একটা ডোজ নেয়া লাগে। এ ভ্যাকসিন হতদরিদ্রদের জন্য ব্যয়বহুল।
চিকিৎসকদদের মতে ক্ষতস্থান চুলকানো, ক্ষতস্থানে ব্যথা, মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হওয়া, উত্তেজনা, স্বল্পমাত্রায় জ্বর, গিলতে সমস্যা হওয়া, পানি পিপাসা থাকা, পানি দেখে ভয় পাওয়া, মৃদু বায়ু প্রবাহে ভয় পাওয়া, আবোল-তাবোল বকা, প্যারালাইসিস ইত্যাদি।
জলাতঙ্ক বা র‌্যাবিস একটি ১০০ ভাগ মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ রোগ। সুতরাং এ জাতীয় যেকোনো প্রাণির কামড়, আঁচড় বা কোনো ক্ষতস্থানে লালার স্পর্শ হলে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতস্থানটি প্রচুর সাবান পানি দিয়ে অন্তত ১০ মিনিট ধরে খুব ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। ক্ষতস্থানে পভিডন আয়োডিন বা অন্য কোনো অ্যান্টিসেপটিক লাগাতে হবে এবং অনতিবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জলাতঙ্কের আধুনিক ভ্যাকসিন প্রহণ করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ