শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাংলাদেশে ফের রোহিঙ্গাদের ঢল নামার আশঙ্কা জাতিসংঘের

 

সংগ্রাম ডেস্ক : মিয়ানমার থেকে নতুন করে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের ঢল নামার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান ও জরুরি ত্রাণ সমন্বয়ক মার্ক লোকক এ আশঙ্কার কথা জানান। একইসঙ্গে তিনি বিদ্যমান পরিস্থিতিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন। ওদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আরও বেশি কূটনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য ভারতের কাছে আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া ভারতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ। 

গতকাল শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলেন মার্ক লোকক। তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন। আবারও তাদের ঢল নামলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত থাকতে চাই।

মিয়ানমার সরকারের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হওয়ার বিষয়ে উদাসীন সু চি সরকার। ফলে এখনও রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। যদিও তারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। বহু বছর ধরে তারা সেখানেই বাস করছে।

তবে এখনও সেখানে বহু রোহিঙ্গা রয়েছে জানিয়ে তাদের রক্ষায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মার্ক লোকেক। অবশিষ্ট রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে মিয়ানমার ত্যাগে বাধ্য না হয়, সেজন্যে উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি মত দেন।

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরুর পর প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমার এখনও জোর দিয়ে বলেছে, ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে বর্মি সেনাবাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে। রোহিঙ্গাদের নিজেদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য উল্টো রোহিঙ্গাদেরই দায়ী করছে সেনাবাহিনী।

রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখেই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, 'তারা রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি চাইছে। কিন্তু তারা কখনোই মিয়ানমারের জাতিগত গোষ্ঠী নয়। আর আমাদের এই সত্য প্রতিষ্ঠায় এক হওয়া উচিত।'

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এখনও রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে নতুন করে দ্বিগুণ শক্তিতে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। জাতিসংঘের আশঙ্কা, বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই থাকা ৯ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে সেখানকার অবশিষ্ট ৩ লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১২ লাখে দাঁড়াবে।

মিয়ানমার সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ঘোষণা দিলেও পালিয়ে আসা শরণার্থীরা বলছেন, পশ্চিম রাখাইনে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ফের তা-ব শুরু করেছে। তাদের তাড়িয়ে দিতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান দ্বিগুণ জোরদার করা হয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সীমান্তে ছুটছে হাজার হাজার মানুষ। বহু গ্রাম এখন একেবারেই জনমানবশূন্য।

বাংলাদেশে পাঁচ সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার পর কয়েকদিন ঢল কিছুটা থেমেছিল। তবে গত কয়েকদিনে তা আবারও বেড়েছে। এখন প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।

এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী এখন আর কাউকে হত্যা করছে না, শুধুমাত্র বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাড়িঘরে আগুনের কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে।

জাতিসংঘের মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। সংস্থাটির আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ওয়াকিনস বলেন, ‘কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারা খুবই নাজুক অবস্থায় আছে। তাদের অনেকেই এখন সেই বিভীষিকা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাদের বসবাসও করতে হচ্ছে অনেক মানবেতর পরিস্থিতিতে। আমাদের লক্ষ্য ১২ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের জন্য প্রস্তুত থাকা। কারণ ইতোমধ্যে ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে বাংলাদেশে। আর আগামী ৬ মাসে আরও ৩ লাখ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।’

অপরদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সমাধানে আরও বেশি কূটনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য ভারতের কাছে আবেদন জানালো বাংলাদেশ। দিল্লিতে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম আয়োজিত ইন্ডিয়া ইকনোমিক সামিটে অংশ নিতে এসে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এ কথা জানান।

গত বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিস্তৃত আলোচনা হয়।

এ ছাড়া, ভারতে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে বিএসএফ। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষ থেকে ৫০টি স্পর্শকাতর স্থান চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিএসএফের মহাপরিদর্শক (দক্ষিণবঙ্গ) পিএসআর আনাজানেয়ুলু বলেন, ‘আগে আমরা এমন ২২টি স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেছিলাম। এখন সেই সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। এসব এলাকায় নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।’

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া জেলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেছে বিএসএফ। কম সুরক্ষিত জায়গাগুলোর মধ্যে পেট্রাপোল, জয়ন্তীপুর, হরিদাসপুর, গোয়ালপাড়া ও তেঁতুলবেড়িয়া অন্যতম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ