বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

যে প্রশ্ন রেখে গেল স্বর্ণা

১৩ বছরের কিশোরী অপূর্বা বর্মন স্বর্ণা। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সে। পড়াশোনায় ছিল প্রথম। আর ইন্টারনেট ব্যবহারেও অন্যদের চেয়ে বেশ পটু। বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল রোডের ৪৪ নম্বর বাসা থেকে স্বর্ণার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, প্রাণঘাতী ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের প্রভাবে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। অর্থাৎ নীল তিমির ফাঁদে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ৭ অক্টোবর নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান, ‘মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস নেয় সে’।
মেধাবী ছাত্রী স্বর্ণার আত্মহত্যার এমন ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। ভাবতে অবাক লাগে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির এই যুগে এ কেমন খেলার প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যার প্রভাবে মেধাবী কিশোরীকে মৃত্যুর ফাঁদে পড়তে হলো। ‘ব্লু হোয়েল’ ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি খেলা। এ খেলায় বেশ কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। চূড়ান্ত পর্যায় অতিক্রম করতে হয় নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে। এই ডেথ গেমসটি পৃথিবীর বহু তরুণ-তরুণীর জীবন কেড়ে নিয়েছে। স্বর্ণার বাবা সুব্রত বর্মন জানান, স্বর্ণা কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার ও এনড্রয়েট মোবাইল ব্যবহার করে আসছিল। ইন্টারনেট থেকে প্যারা, রচনাসহ বিভিন্ন বিষয় ডাউনলোড করে পড়তো। ফেসবুকেও সার্বক্ষণিক এ্যাকটিভ থাকতো। তার মোবাইল ফোনে হাত দিলে সে অভিমান করতো। লাশ উদ্ধারের সময় একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা আছে, ‘আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়’। সন্দেহ করা হচ্ছে ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশমতো সে চিরকুটটি লিখেছে। এমনকি গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্নও আঁকা ছিল।
স্বর্ণার আত্মহত্যার ঘটনা আবারও আমাদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি করলো যে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা কতটা সচেতন? প্রযুক্তিবিদরা তো বলে থাকেন, কোনো অবস্থাতেই প্রযুক্তিকে খারাপভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান সভ্যতায় উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উচিত-অনুচিত জ্ঞান কতটা কার্যকর রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ধর্ম ও নৈতিকতাবোধ তাদের সাহায্য করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বর্তমান সভ্যতার শাসকরা ধর্ম ও নীতি-নৈতিকতা বোধ থেকে বিশ্বব্যবস্থাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। এর প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যেও। অনেকে ইন্টারনেটসহ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ব্যবহারে তরুণ-তরুণীদের প্রতি অভিভাবকদের নজর রাখার কথা বলে থাকেন। আমরা মনে করি, কিশোর-কিশোরীদের নৈতিকভাবে সচেতন করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাথে সমাজ এবং রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব পালনের বিষয় রয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ