শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এস কে সিনহার ছুটির ঘটনা গোটা বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হামলা -গয়েশ্বর চন্দ্র

গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের উদ্যোগে সর্বোচ্চ আদালত ধ্বংসের নীলনকশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির ঘটনা ‘সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,  গোটা ঘটনাটি বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হামলা। অর্থাৎ সরকার যে নির্দেশ দেবে, তারা যা বলবে বিচার বিভাগকে তাই করতে হবে, বিচারপতিদের তাই করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের রূপ বা মুখোশ উন্মেচিত হয়েছে। তারা কী চায়? আমরা বলতে চাই, একটি দেশে যে তিনটি স্তম্ভ তার মধ্যে বিচার বিভাগ অন্যতম সাংবিধানিকভাবে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান সেখানে যদি এহেন কর্মকান্ড চলে তাহলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কোথায়?
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে ‘উচ্চ আদালত ধবংসের নীল নকশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, আবদুল আউয়াল খান, কাদের গনি চৌধুরী, তমিজউদ্দিন মাস্টার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
গয়েশ্বর বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে যে আচরণ করা হয়েছে- এটা কোনো ব্যক্তির সাথে আচরণ করা হয় নাই, প্রতিষ্ঠানের সাথে করা হয়েছে এটার একটা উদ্দেশ্য আছে। বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে দেশে আইনের শাসন থাকে না। আর আইনের শাসন যদি না থাকে সেখানে গণতন্ত্র কখনোই টিকে থাকতে পারে নাই। আজকে বিচার বিভাগের সাথে রাজনীতিবিদসহ সকল জনগন কানেকটেড, এটা শুধু আইনজীবীদের ব্যাপার নয়। তাই এর প্রতিবাদ করা সকলের দায়িত্ব। এখন ঘরে, কখনো বারান্দায়, বারান্দা থেকে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় না নামা পর্যন্ত এর কোনো সমাধান হবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন।
সুপ্রিম কোর্ট এর আপীল বিচারকদের প্রতি ইংগিত করে তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ৭ জন মিলা স্বাক্ষর করেছেন। এসকে সিনহাকে(প্রধান বিচারপতি) যদি ছুটি নিতে হয় তাহলে বাকীরা একসঙ্গে ছুটি নেন না ক্যান। ওই রায়টা তো আমরা জানি যে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। তাহলে কোনো ব্যক্তির সিদ্ধান্ত না, প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত। সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত তো খড়ক যদি এসকে সিনহার ওপর চলে বাকীদের ওপর চলে না, চলে তো। তাহলে  এর প্রতিবাদ স্বরূপ আপনারা সকলে ছুটি চাইলেন না কেনো? আমরা অসুস্থ আমরাও কোর্টে বসতে পারবো না। সেই কারণে বলব, প্রতিষ্ঠানে সাথে যারা সংশ্লিষ্ট আমি আপনাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো যে, এসকে সিনহা সাবজেক্ট না, এটা প্রতিষ্ঠানের সাবজেক্ট, প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব যারা করেন তারা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের এই নগ্ন হামলা, নগ্ন অস্ত্রের বিরুদ্ধে আপনারা আপনাদের কলম ধরবেন-জাতি এটাই প্রত্যাশা করে।
প্রধান বিচারপতির একমাসের ছুটির ঘটনার পর গণমাধ্যমে ‘নিশ্চুপ’ ভুমিকার সমালোচনা করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এটা যদি এই আমলে না হয়ে সেই আমলে হতো, এমন কি এরশাদ (সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ) আমলে হতো তাহলে কত পত্র-পত্রিকার পাতাগুলোতে ভরপুর থাকতো, লেখার ঝড় উঠতো। এতো বড় একটা নির্মম, কঠিন ও নিষ্ঠুর আচরণের পরে পত্রিকাগুলোর চুপ। আমরা যা বলি কাটসাট করে না কোনরকম না দিলে নয়, তাই দেয়া হয়। তার মানে কী ? রাজনীতিবিদের কন্ঠ রোধ মামলা- মোকাদ্দমা, সম্পদ হরণের ভয় পাশাপাশি সাংবাদিকরাও কলম ধরতে কম করেন না। যদিও সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন রয়েছে তারপরও সংবাদপত্র একটা বিষয় যেখানে সাংবাদিকরা লিখবেন, সেই লেখাটা তারা লিখতে পারছেন না। আজকে যারা সাংবাদিকরা আমাদের কাছে আসেন তারা কিন্তু উচ্চ আদালতের এই বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেন না। সতারা প্রশ্ন করেন নির্বাচনের প্রস্তুতি কেমন, আপনারা সংলাপে যাচ্ছে কিনা।  একই সঙ্গে একাদশ নির্বাচন ২০১৪ সালের মতো বর্তমান সরকারের অধীনে নয়, সহায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সকল স্তরে দুর্নীতি ও নগ্ন দলীয়করণের মাধ্যমে ধ্বংস লীলায় মেতে উঠেছে। সর্বশেষ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এর পরিণতি শুভ হবে না। দেশের শিক্ষক সমাজ সহ সর্বস্তরের মানুষ সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এজন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ