প্রধান বিচারপতিকে ভয় দেখিয়ে ছুটিতে পাঠানো বিচার বিভাগের উপর নগ্ন হামলা -গয়েশ্বর
স্টাফ রিপোর্টার : শক্তি প্রয়োগ এবং ভয় দেখিয়ে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো বিচার বিভাগের উপর নগ্ন হামলা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বলে যাদের দিয়ে ছুটিতে পাঠাতে বাধ্য করেছেন তারাই একদিন আপনাকে অসুস্থ বলে ছুটিতে পাঠাতে পারেন। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে চলতে দেন। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আসলে কোন দলই লাভবান হবে না। বিতর্কিত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা এরশাদকে অসুস্থ বানিয়েছিলেন আজও তারাই প্রধান বিচারপতিকে অসুস্থ বানিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘সুশাসন ও নাগরিক অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আলহাজ্ব এ.কে.এম মোয়াজ্জেম হোসেনের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অসুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামছুজ্জামান দুদু, স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ নাজিমুদ্দিন মাস্টার, ঢাকা মহানগর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র ছুটির প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গোটা ব্যবস্থাটাই বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হামলা। কারণ ষোড়শ সংশোধনীর রায় ৭ জন একসঙ্গেই ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে প্রধান বিচারপতির যদি ছুটি হয়, বাকি ৬ জন ছুটি নেন না কেন? নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত এ সভায় তিনি বলেন, আজকে আদালতের পাশ দিয়ে আসার সময় লক্ষ করলাম রাস্তার দুই পাশে বড় বড় ফেস্টুন টানানো আর সেখানে লেখা আছে মাদার অব হিউম্যানেটি। মনে হল যারা এই শব্দটা যার বেলায় অবতারণা করেছেন, তারা জনগণের সাথে মসকরা করেছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা দেশী এবং আন্তর্জাতিক প্রতি বছর রির্পোট ছাপে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই। আর সেই দেশ অন্যায় ভাবে জনগণের সমর্থন ছাড়া পেশি শক্তির বলে প্রশাসনকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে কাজে লাগিয়ে যারা ক্ষমতায় আছেন সেই ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিদের যখন মাদার অব হিউম্যানেটি বলে সেটা জনগণের সাথে মসকরা, ঠাট্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গত দুই তারিখে প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেলেন। এর আগেও তিনি এক মাসের ছুটিতে গিয়েছিলেন। তখন তার ছুটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনো ধরনের কথা ওঠেনি। কারণ সেই ছুটি ছিলো যথারীতি এবং তার নিজের ইচ্ছায়। সেই ছুটির দরখাস্ত রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন কি করেন নি সেটা কিন্তু পত্র পত্রিকায় আসেনি। কারণ এটা একটা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নিজের ছুটি তিনি নিজেই নেন এবং বঙ্গভবনের রেজিস্টার কর্তৃক অনুমোধিত হয়। ছুটিকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ দেন এবং অনুমোদন করেন। কিন্তু এবার যখন তিনি ছুটি নিলেন তখন তার ছুটির বিষয়টি আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল জানালেন। এটাতো তাদের কাজ নয়।
তিনি আরও বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার প্রয়োজন। সংবিধানকে যদি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় এবং আইনের শাসন যদি প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে সেখানে সুশাসন থাকে। আইনের শাসন নিশ্চিত করে স্বাধীন বিচার বিভাগ। স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যেখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকে না, সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আইনের শাসনের তোয়াক্কা করে না।
স্বৈরাচার পতনের আগে যেসব ঘটনা ঘটে এখন তার আলামত চলছে বলেও মন্তব্য করেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। শেখ হাসিনা নোবেল পাওয়ার যোগ্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, শান্তি ও অর্থনীতির জন্য নয়, গুমের জন্য তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য। এমনকি ৫ ই জানুয়ারির অদ্ভূত নির্বাচনের জন্য তার নোবেল পাওয়া উচিৎ ছিল। যেহেতু নোবেল কমিটি তাকে দেয় নাই তাই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের উচিৎ নীল খেত থেকে একটি নোবেল কিনে তাকে দেয়া। সেখানে অনেক নোবেল পাওয়া যায়।