শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

শাহজাদপুর ও চৌহালিতে যমুনায় প্রতিদিন ধরা পড়ছে কোটি টাকার ইলিশ

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর ও চৌহালি উপজেলার যমুনা নদী থেকে প্রতিদিন গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ মণ ডিম ওয়ালা মা ইলিশ মাছ শিকার করা হচ্ছে। যার পাইকারি বাজার মূল্য কমপক্ষে ৮০ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা। অথচ সরকার ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ইলিশ মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ১ হাজার ইঞ্জিন চালিত শ্যালো নৌকা নিয়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মৌসুমী জেলে দিন রাত প্রকাশ্যে এই ইলিশ নিধনে মেতে রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২ হাজার কার্ডধারী জেলে রয়েছে। এরা সরকারি সহায়তাও নিচ্ছে আবার নদী থেকে ইলিশও শিকার করছে। তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে নানা মিথ্যা ও ছলচাতুরিরও আশ্রয় নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানিয়েছে, তারা পুলিশ, মৎস্য অফিস ও প্রশাসনকে ম্যানেজের জন্য নৌকা প্রতি ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ দিয়েছে। কয়েকজন প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ নেতা জোটবদ্ধ হয়ে প্রায় প্রতিটি নৌকা থেকেই এই টাকা তুলেছে। তবে এ টাকা তাদের হাতে পৌঁছেছে কি না তা তারা বলতে পারেনি।
 খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইলিশ শিকার বন্ধে প্রশাসনের অভিযান চলছে অনেকটা দুর্বল ও দায়সারা গোছের। তারা পুলিশ নিয়ে মাঝেমধ্যে অভিযানও চালাচ্ছে। বিশজন জেলেকে জরিমানা ও জাল আটক করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে। তারপরেও ইলিশ শিকার থেমে নেই। অবাধে চলছে ইলিশ নিধন। গত শনিবার দুপুরে যমুনা নদীর বাঙালা ও শৈলজানা মোহনায় ইলিশ শিকারের দৃশ্য ধারণ করতে গেলে শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতুনি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  রেজাউল করিমকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করতে দেখা যায়। তিনি সাংবাদিকদের গালাগাল করে বলেন, তার নিয়ন্ত্রণে ১শ’ থেকে দেড়শ’ ইলিশ ধরার নৌকা রয়েছে। তারা পুলিশ,মৎস্য অফিস ও প্রশাসনকে টাকা দিয়ে মাছ শিকার করছে। তাই তাদের ছবি তোলা যাবে না। তার এ নিষেধ অমান্য করলে তিনি সাংবাদিকদের আটক করে পুলিশে দেবেন বলে হুমকি দেন।
এ সময় দেখা যায়, একবার পানিতে জাল ফেললে জালে ৬০/৭০টি করে মাছ উঠছে। এর একেকটি ইলিশের ওজন কমপক্ষে ৫০০/৭০০ গ্রাম। আরো উপরে ১ কেজি থেকে সোয়া কেজি করে হবে। সবচেয়ে বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, বাঙালা, বানতিয়ার, চাঁনতারা, মার্জান, কাশিপুর, কৈজুরী, পাঁচিল,  ভেড়াকোলা, গুপিয়াখালি, কড়িতলা, শৈলজানা, ভূতের মোড়, ওমরপুর, খাসপুকুরিয়া ও মুরাদপুর এলাকায়।
 এ সব ইলিশ মাছ পাইকারি বেচা-বিক্রি হয় কৈজুরী, পাচিল ঘাট, জামিরতা ঘাট,মার্জান, কাশিপুর, বানতিয়ার, ভূতের মোড়, মিটুয়ানি, মিনানুর, সাকপাল ঘাট,  জোতপাড়া ঘাট, আজিমুদ্দিনের মোড়, টিকির মোড়, জনতা স্কুল ঘাট, খাস পুকুরিয়া ঘাট, খগেন ঘাট, মুরাদপুর, কড়িতলা, ওমরপুর, ঘুষুরিয়া ও দত্তকান্দি। এ ছাড়া বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে নাকালিয়া পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে এ বছর ইলিশ ধরা পড়ছে। কাজিপুর এলাকার যমুনা নদীতেও এ বছর ব্যাপক পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
 এ ব্যাপারে চৌহালি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদেকুর রহমান ও চৌহালি থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে জাল আটক করে  পোড়াচ্ছি। জেলেদের ধরে জরিমানা করছি। শুক্রবার চৌহালির এনায়েতপুর ও বেতিল বাজারে দুই দফা অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ টাকা মূল্যের ৬৩ হাজার মিটার কারেন্ট জাল আটক করে পুড়িয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া এক দোকানদারকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উৎকোচের ব্যাপারে তারা বলেন এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। এটি মিথ্যা এবং বানোয়াট। তবে কোন টাউট বাটপার প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিয়ে থাকলেও থাকতে পারে। এ ধরনের অভিযোগ তাদের কাছে কেউ করেনি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জ্যোতি কণা দাস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিব সরকার ও শাহজাদপুর থানা অফিসার ইনচার্জ খাজা গোলাম কিবরিয়া বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে অভিযান চালানো হয়েছে। জেলেদের ধরে জরিমানা করা হয়েছে। জাল আটক করে পোড়ানো হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে আরো অভিযান চালানো হবে। উৎকোচের ব্যাপারে তারা বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ। এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তারপরেও এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ