বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর নেতৃত্বে পুলিশ কর্তৃক চোখ উৎপাটনকৃত শাহজালালের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর

খুলনা অফিস : খুলনায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীর নেতৃত্বে পুলিশ কর্তৃক চোখ উৎপাটনকৃত যুবক শাহজালালের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। চোখ উৎপাটনের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করার দুই দিনের মাথায় বুধবার দিবাগত রাতে নগরীর খালিশপুরের নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তার স্ত্রীসহ পরিবারের ৫/৬জন সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

শাহজালালের পিতা জাকির হোসেন অভিযোগ করে বলেন, পরিবারের সদস্যরা রাতে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিলেন। এ সময় আকষ্মিকভাবে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাসলিমা আক্তার লিমার নেতৃত্বে ১০/১২ জন নারী-পুরুষের একটি দল ঘরে প্রবেশ করে। তারা তার ছেলে শাহজালালের নাম ধরে ডাকতে থাকে আর বলে ‘আমাদের ছিনতাইকৃত টাকা এবং স্বর্ণের চেইনসহ অন্যান্য মালামাল কই’। এ সময় তার পুত্রবধূ রাহেলা বেগম বিষয়টি জানতে চাইলে তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। হামলায় পুত্রবধূ রাহেলা বেগম, তার মা রানি বেগম, স্ত্রী রেণু বেগমসহ পরিবারের ৫/৬ জন সদস্য আহত হয়। হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে তারা আঘাত করে। এ সময় তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশীরা মহিলা নেত্রী তাসলিমা আক্তার লিমা ও স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতি ওরফে মরিয়ম নামে দু’জনকে আটক করে রাখে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার নাম বলে রিপনসহ কয়েকজন এসে তাদেরকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

হামলার বিষয়টি শুনেছেন উল্লেখ করে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান বলেন, পুরনো একটি দেনা-পাওনার বিষয় নিয়ে কয়েকজন মহিলা শাহজালালদের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে এসআই রফিককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। 

এদিকে বিষয়টি জানতে মহিলা নেত্রী তাসলিমা আক্তার লিমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি প্রথমে ফোন রিসিভ করেননি। পরে একাধিক চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 

এ বিষয়ে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শারমীন রহমান শিখা সাধারণ সম্পাদক লিমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গত ৫ এপ্রিল লিমার মেয়ে নগরীর কাস্টমস মোড়ে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। পরবর্তীতে ছিনতাই হওয়া মোবাইল শাহজালালের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বুধবার বঙ্গোবাসী স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে বসে লিমা জানতে পারেন শাহজালাল তার বাড়িতে অবস্থান করছে। এ খবর পেয়ে তিনি লোকজন নিয়ে বাকি মালামাল আনতে যায়। তখন শাহজালালের বাড়ির লোকেরাই তাদের ওপর হামলা করে এবং আটকে রাখে। পুলিশের সহায়তা না নিয়ে নিজেরা কেন মালামাল উদ্ধারে যাওয়া হয়-এ প্রশ্ন করলে তিনি লিমাকে একটু বোকা বলে মন্তব্য করেন। এমনকি এ বিষয়ে নিউজ না করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই মো. শাহ জালাল রাত ৮টায় তার শিশু কন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পার্শ্ববর্তী দোকানে গেলে খালিশপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ শাহজালালকে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ডাইভার দিয়ে দু’টি চোখ উপড়ে ফেলে-মর্মে অভিযোগ এনে তার মা রেণু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম খান, এসআই রাসেল, এসআই তাপষ রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম ও এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য (সিপাই) আফসার আলী, আনসার ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল এবং অপর দুইজন খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুৎফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেলকে আসামী করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র তদন্ত করছে।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ