বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সুইপার সমাজ সমস্যা জর্জরিত

পত্নীতলা (নওগাঁ) : নীপিড়নের প্রতিকারে নিজস্ব বিচার ব্যবস্থস্থাই যাদের প্রধান অবলম্বন

পত্নীতলা (নওগাঁ): বেসরকারি সংগঠনসমূহের প্রচারণা ও কর্মকা-ের মাধ্যমে হরিজন বা দলিত শব্দটি বর্তমানে প্রচলন হলেও দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠির কাছে মূলত: এদের পরিচয় মেথর বা সুইপার হিসেবেই।
বেসরকারি সংগঠনের তথ্য মতে শুধু নওগাঁ জেলা শহরেই সুইপারের জনসংখ্যা ৩২৮। এছাড়াও নওগাঁর অন্যান্য ১০টি উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সুইপার। তারা বাঁশফোড় ও হাড়ী মূলত: এই ২টি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। তারা দেশের নাগরিক। এদের ভোটাধিকার রয়েছে। তারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
নওগাঁ জেলায় বসবাসরত হরিজনরা বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যাগুলো হলো- বাসস্থান, কর্মসংস্থান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় প্রবেশাধিকার না থাকা, সরকারি সুযোগ-সুবিধায় অভিগম্যতা না থাকা, বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহেলা করা, বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুইপার পদে বাঙ্গালীদের নিয়োগ প্রদান, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্য বিবাহ প্রবণতা, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব, নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিকার না পাওয়া ইত্যাদি।
নওগাঁর হরিজনরা বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিশেষ করে হরিজন নারীরা পরিবার ও পরিবারের বাহিরে  নীপিড়নের শিকার হয়ে থাকে। ঐতিহ্যগত ভাবে হরিজন সম্প্রদায়ে নেশা প্রবণতা থাকায় পরিবারে নারীরা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
এই নির্যাতনকে নারীরা স্বাভাবিক বলে ধরে নেয় এবং কোন প্রতিকারের আশা করে না। অন্যদিকে পরিবারের বাইরে হরিজন নারীরা বিভিন্ন কটুক্তি ও হেনস্তার শিকার হয়ে থাকে। যার প্রতিবাদের ভাষা ও উপায় তাদের থাকে না। এছাড়াও সংখ্যালঘু ও নীচু শ্রেণীর জনগোষ্ঠি হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে হরিজন নারী-পুরুষরা নির্যাতন ও নীপিড়নের শিকার হলেও তার  প্রতিকার তাঁরা সঠিক ভাবে কমই পায় ।
সরেজমিন নওগাঁ হরিজন পল্লীতে গিয়ে হরিজন নারী শ্যামলি বাঁশফোড়, বিনা বাঁশফোড় ও সাধনা হাড়ীর  সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, পরিবারে নারীরা ছোট খাট নির্যাতনের শিকার হলে তারা সেটি কিছু মনে করেন না। তবে নির্যাতনের মাত্রা বেশি হলে সামাজিক ভাবে তাঁরা নিজেরাই তা মিটিয়ে নেন।  পরিবারের বাহিরে নারী নির্যাতনের যে সকল ঘটনা ঘটে না প্রকাশ পায় না।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্র কিশোর বাঁশফোড়, দশম শ্রেণীর ছাত্র হৃদয় বাঁশফোড় জানান, নওগাঁয় হরিজনদের সহিত স্থানীয় মূলধারার জনগোষ্ঠির সম্পর্ক ভালো। এ কারণে এখানে হরিজনদের উপর নির্যাতনও কম। তবে হরিজন হিসাবে তাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন বলে মনে করেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তাঁরা দেখে আসছেন নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ বা নির্যাতন, নীপিড়নের ঘটনা ঘটলে সমাজ কাঠামোর মোড়লরাই তা মিটিয়ে থাকেন।
হরিজন ঐক্য পরিষদের নওগাঁ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মিন্টু বাঁশফোড়, হরিজন সমাজ কাঠামোর সদস্য প্রভাশ হাড়ি ও আনন্দ হাড়ির সাথে মতবিনিময় করা হলে তাঁরা সকলেই বলেন, নিজ সম্প্রদায়ের বিচার-সালিশ তাঁরা নিজেরাই সমাধান করে নেন। থানা-পুলিশের কাছে যাওয়ার দরকার হয়না। তবে পরিবার ও নিজ সম্প্রদায়ের বাহিরের মানুষের দ্বারা নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হলে তাঁরা পৌর কাউন্সিলনের শরণাপন্ন হন। সেখানে ন্যায় বিচার না পেলে তাদের করার আর তেমন কিছুই থাকে না বলে মন্তব্য করেন। নওগাঁয় হরিজনদের উপর বড় ধরণের নির্যাতনের ঘটনা না ঘটলেও মাঝে মধ্যে যতটুকু ঘটে সেক্ষেত্রে তাদের প্রতিবাদ করা ছাড়া আর তেমন একটা কিছু করার থাকেনা।
মূলধারার মানুষরা নির্যাতনকারীর পক্ষে অবস্থান নেন বলেও তাঁরা মতদেন।
নওগাঁয় হরিজনদের নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংগঠন  আরকোর চাইল্ড এন্ড এডলোসেন্ট ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজার মলি চক্রবর্তী জানান, আরকো হরিজনদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি বেইস্ড অর্গানাইজেশন (সিবিও) শক্তিশালীকরণ, দিবস উদ্যাপনে সহায়তা ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছেন। তবে হরিজনদের আইনী সহায়তা প্রদানের মতো কোনো কর্মকান্ড তাঁরা বাস্তবায়ন করছেন না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ