শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

আধিপত্য ও মাদকব্যবসাকে কেন্দ্র করেই কাশীপুরে ডাবল মার্ডার !

স্টাফ রিপোর্টার : কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল ৩৫ জন সন্ত্রাসী। কাশিপুরের হোসাইনী নগরে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। ডাবল মার্ডারের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জোড়া খুনের নেপথ্যে নিহত সন্ত্রাসী বরিশাইল্যা ফিরোজের মাদক সা¤্রাজ্য দখল, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও টাকা লেনদেনের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে ঘটনার দিন রাতেই একব্যক্তিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে একটি অসমর্থিত সূত্র জানায়। হত্যাকান্ডের ঘটনায় গতকাল এ রিপোর্ট  লেখা পর্যন্ত  ফতুল্লা মডেল থানায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় নৃশংসভাবে খুন হয়েছে, সন্ত্রাসী  মিল্টন ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের  ম্যানেজার পারভেজ। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রথমে একদল লোক হোসাইনী নগরের  মিল্টনের ভাড়া বাসায় গিয়ে তাকে খোঁজ করেও (অধ্যাপক ছগির হোসেন হাওলাদারের বাড়ি)। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা মিল্টনকে তার বাসায় গিয়ে না পেয়ে, ঐ বাড়িতে হামলা  ও ভাংচুর করে। এরপর তারা হোসাইনী নগরের কবীর মিয়ার রিক্সার গ্যারেজে গিয়ে মিল্টন ও তার মাল্টিপারপাসের ম্যানেজার পারভেজকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে যখম করে। হত্যাকান্ডের পরপরই ঘাতকরা রিক্সার গ্যারেজটিতে অগ্নি সংযোগ করে। তবে কি কারণে মিল্টন ঐ রিক্সার গ্যারেজে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর অবস্থান করছিল সে বিষয়টি নিয়েও পুলিশ কাজ করছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, বরিশাইল্যা ফিরোজের মৃত্যুর পর কাশিপুর ও এর আশপাশের এলাকায় মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অপর সন্ত্রাসী বাপ্পির সাথে বিরোধ চলছিল মিল্টনের। সন্ত্রাসী বরিশাইল্যা ফিরোজের স্থানটি দখল করেছিল মিল্টন। বেশ কয়েকদিন আগে বাপ্পির সাথে মিল্টনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় বাপ্পি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এতে কয়েকদিন ধরেই মারমুখী অবস্থানে ছিল বাপ্পীর পক্ষ। এমনটিই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ ও তার ভাই হাসান আহম্মেদের ছত্রছায়ায় মিল্টন ও তার সহযোগীরা, কাশিপুর, বাবুরাইল, ভূইয়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকা দাবড়িয়ে বেড়াতো। বেশ কয়েক মাস যাবৎ মজিদ ও হাসানের সাথেও  মিল্টনের দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকান্ডটি সে কারণেও হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে একটি সূত্র। সূত্রের আরো দাবি, হোসাইনী নগর এলাকায় একটি বাড়ির হাটাচলার রাস্তা করে দেয়ার দায়িত্ব  নিয়েছিল মিল্টন। কন্ট্রাক ছিল সড়ক করে দেয়া বাবদ মিল্টনকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে। কিন্তু মিল্টনের প্রতিপক্ষ ঐ টাকার ভাগ চাচ্ছিলেন। এ নিয়ে ঐ রিক্সার গ্যারেজে দেন-দরবারে হয়তো বসেছিলেন মিল্টন ও তার সহযোগীরা। আর  এ  সুযোগটি-ই হয়তো কাজে লাগিয়েছে মিল্টনের প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা। শুধু হত্যাকান্ডেই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা। মিল্টন ও তার সহযোগীকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য রিক্সার গ্যারেজের ভিতর আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হত্যাকান্ডটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে হোসাইনী নগরের পূর্ব দিক থেকে ৩০/৪০ জনের একটি দল গ্যারেজে প্রবেশ করে। ১৫/২০ মিনিটের মধ্যে তারা তান্ডব  চালিয়ে আগুন লাগিয়ে বীরদর্পে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে যায়। তবে কারা হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে, এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে, এমনটি-ই ঘটনার দিন রাতেই জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মঈনুল হক পিপিএম। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হোসাইনী নগরে জোড়াখুনের ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।
এব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল  উদ্দিন বলেন, যতদুর জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করাকে কেন্দ্র করেই মূলত এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। কারা হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে এ ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে। যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ