বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সুন্দরবনের রাস উৎসবকে সামনে রেখে হরিণ শিকারীরা ফাঁদ ও সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত

খুলনা অফিস : সুন্দরবনের দুবলার চরে তিনদিনব্যাপী রাস উৎসব আগামী ২ নবেম্বর থেকে শুরু হবে আর চলবে ৪ নবেম্বর পর্যন্ত। প্রতি বছরের মতো রাস পূর্ণিমায় গমনকারী পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের প্রস্ততি এবারও বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ট্রলার ভাড়া, বাজার করা ও নিত্য প্রয়োজনীয় কেনা কাটায় ব্যস্ত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা। এরমধ্যে থেমে নেই হরিণ শিকারীদের অপতৎপরতাও। শিকারের জন্য ফাঁদ ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে এসব শিকারীরা। পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটা ও দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এবং একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পাইকগাছা উপজেলার মধুখালী গ্রামের বাসিন্দা ছবেদ (ছদ্ম নাম)। তিনি সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ করেন। দারুল মল্লিকের টিক্কা (ছদ্মনাম) সামাদ (ছদ্ম নাম) সহ অনেকেই কাঁকড়া আহরণের সাথে জড়িত। কাঁকড়া আহরণের সাথে সাথে হরিণ শিকারেও তারা খুব পারদর্শী। রাস মেলা উপলক্ষে সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রতিবছর বেশ কয়েকটি ট্রলার তাদের নেতৃত্বে যায়। চরে যাওয়ার আগেই সুন্দরবনের কোন না কোন খালে ট্রলারগুলো অবস্থান করানো হয়। তারা বিভিন্ন কৌশলে হরিণ শিকার করে ওই সব ট্রলারে এনে দেয়। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হরিণ শিকারি এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এবারও তারা ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা এবং মংলা এলাকার তিনটি ট্রলারের সাথে চুক্তিবন্ধ হয়েছেন। ইতোমধ্যে ওই তিন পার্টির কাছ থেকে হরিণ শিকারের জন্য তারা অগ্রিম টাকাও নিয়েছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান পার্টিরা হরিণ শিকারের জন্য ফাঁদ তৈরি করতে গত দেড় মাস আগে ৪৫ কেজি কটের সুতো কিনে দিয়েছেন। শিকারীরা তাদের এলাকার দক্ষ কারিগর দিয়ে ওই ফাঁদ তৈরি করেছেন বলে জানান। ওই ফাঁদ ১৫ দিন আগেই সুন্দরবনের মধ্যে নিয়ে কোন না কোন গাছের নিচে পুতে রাখা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। শুধু মধুখালী ও দারুল মল্লিক গ্রাম না,  সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে অধিকাংশ গ্রামের অনেকেই হরিণ শিকারের সাথে জড়িত। এসব শিকারীরা কাঁকড়া আহরণের পাশাপাশি সারা বছর কম বেশি হরিণ শিকার করে থাকে। তবে রাস মেলার সময় একটি বড় ব্যবসায়ী মওসুম হিসেবে তারা দীর্ঘ দিন ধরে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের ব্যাপক নজরদারী ও কড়াকড়ির কারণে আগের থেকে হরিণ শিকার অনেক কমেছে দাবি করে ওই শিকারি বলেন, তবে তাদের কর্মকান্ড থেমে নেই। অনেক সময় বন বিভাগের সদস্যসহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে আবারও পুরাতন পেশায় ফিরে যায়। ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী গ্রামের কার্তিক (ছদ্মনাম) প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাস মেলায় হরিণ শিকারের জন্য প্রস্ততি শুরু করেছেন। ফাঁদ নেয়ার জন্য মাটির তৈরি চুলাকে বেছে নিয়েছেন। ওই চুলার তলে করে ফাঁদ নিয়ে নির্দিষ্ট খালে যেয়ে হরিণ শিকার করবেন বলে জানান। এ রকম একাধিক পদ্ধতিতে একটি সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারি দল প্রতি বছর হরিণ শিকার করে আসছে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে হরিণ শিকারে  কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। যে কারণে এ সংঘবদ্ধ চক্র অত্যন্ত সর্তকতার সাথে সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। রাস মেলায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি ট্রলারে একজন দলনেতা থাকেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দল নেতা বলেন, তিনি পাইকগাছার একটি হরিণ শিকারি দলকে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই শিকারীদের ৩০ হাজার টাকায় চুক্তি বদ্ধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, ওই শিকারিরা তাদের ট্রলারের সাথে সাথে আরও চারটি ট্রলারের সাথে চুক্তিবন্ধ হয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। এদিকে হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতারোধে বন বিভাগ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে টহল টিম বৃদ্ধি, প্রত্যেক রুটের  প্রবেশ দ্বারে টহল টিম রাখা হয়েছে, প্রতি টলারের দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের আলাদা আলাদা টিকিট প্রদান ও প্লান শেষে ফিরতি ট্রলার চেক করার জন্য প্রতিটি পয়েন্টে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে।  সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, হরিণ শিকারীরা সব সময় নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে থাকে। তবে ফাঁদ দিয়ে বেশি হরিণ শিকার করা হয়। হরিণ শিকার রোধে বন বিভাগও বেশ ব্যতিক্রম কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, রাস মেলার শুরুর বেশ আগে থেকেই বন বিভাগ হরিণ শিকার বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ