বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

তিন বছরে ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণ করবে কানাডা

অভিবাসি শিশুর সাথে হাত মিলাচ্ছেন কানাডার প্রধান মন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো 

২ নভেম্বর, ইন্টারনেট : কানাডা দেশের ভবিষ্যত সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী তিন বছরে প্রায় ১০ লাখ অভিবাসী গ্রহণ করবে। দেশটির অভিবাসন মন্ত্রী বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছেন।

অভিবাসন মন্ত্রী আহমেদ হুসেন বলেন, আগামী বছর ৩ লাখ ১০ হাজার, ২০১৯ সালে ৩ লাখ ৩০ হাজার ও ২০২০ সালে ৩ লাখ ৪০ হাজার অভিবাসী নেয়া হবে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আহমদ হুসেন নিজেও একজন অভিবাসী। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই পরিকল্পনার ফলে অভিবাসন এক ঐতিহাসিক মাত্রায় পৌঁছাবে এবং এটি কানাডার সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেবে। শরণার্থীর পাশাপাশি ইকোনমিক ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে অভিবাসী আগমন সাম্প্রতিক বছরগুলোর শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ দাঁড়াবে। তিনি উল্লেখ করেন বয়স্কদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শ্রমশক্তির চাহিদা মেটাতে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশী জনশক্তি প্রয়োজন।

এদিকে আগে রোহিঙ্গাদের ওপর ‘জাতিগত নিধন’ বন্ধ ও সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে মায়ানমারের ওপর চাপ দিতে বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। স্থানীয় সময় সোমবার বিশেষ দূত হিসেবে বব রায়ে’কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বব রায়ে কানাডার পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য। এক বিবৃতিতে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক-নিরাপত্তা সংকট এবং গণহত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, মায়ানমারে নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটের আশু সমাধানের লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করবেন বব রায়ে। একই সাথে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমসহ বিভিন্ন বিপন্ন জনগোষ্ঠীর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। এছাড়া সহিংসতায় আক্রান্ত ও বাস্তুচ্যুত লোকজনকে কীভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেবেন বব। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর এক সম্মেলনে এ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

ট্রুডো ঘোষণা দেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করে দুই কোটি মার্কিন ডলার দেবে কানাডা। এ সময় কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং এর দায় মায়ানমারের সেনা নেতৃত্ব ও সরকারকেই বহন করতে হবে।’ এছাড়া কানাডা কিছু শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার কথা ভাবছে বলেও জানান ক্রিস্টিয়া।

গত ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ৭ লাখেরও বেশি। রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার এ ধারা অব্যাহত থাকলে শরনার্থীর সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পালিয়ে আসার হার আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও, ১৫ অক্টোবর থেকে তা আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে কিছু এরিযাল ফুটেজ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষযক সংস্থা। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উখিযার পালংখালির কাছে নাফ নদী পার হযে হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় জাতিসংঘ মনে করছে, মায়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে জাতিগত নিধনে নেমেছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ ভাগই হলো নারী, শিশু ও বৃদ্ধ। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মতে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এর মধ্যে ১১শ’র বেশি রোহিঙ্গা শিশু পরিবার ছাড়া অচেনাদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আর এসব শিশুর চোখের সামনেই তাদের বাবা-মাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা, মা-বোনদের ওপর যৌন নির্যাতন ও ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়াসহ ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে মায়ানমারের সেনারা।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দেয়া সর্বশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ওপর মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট প্রমাণ হাজির করেছে। অ্যামনেস্টি বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দী, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি-ভিডিও এবং সব ধরনের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, ‘রাখাইনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অপরাধ।’

অভিযানের নামে মায়ানমারের সেনাবাহিনী খুন, ধর্ষণ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, কুপিয়ে হত্যাসহ বর্বরতার চূড়ান্ত সীমাও অতিক্রম করেছে বলে অভিযোগ নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওযাচ (এইচআরডব্লিউ)। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংস্থাটি বলেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ২৮৮টি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি আরো জানায়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মায়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ