বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ধূমপানের ক্ষতি

বিড়ি ও সিগারেটসহ ধূমপানের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কে প্রায় নিয়মিতভাবে প্রচারণা চালানো হয়। দেশের ভেতরে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে শুধু নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক অনেক সংগঠনও ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এসব প্রচারণার ফলে ‘ধূমপানে বিষপান’ ধরনের স্লোগানও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। ধূমপানকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশের সব সরকারই বিড়ি-সিগারেটের ওপর অনেক বেশি হারে কর আরোপ করে এসেছে। এখনো অন্য সব পণ্যের তুলনায় বিড়ি-সিগারেটের জন্য প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে অনেক বেশি কর দিতে হয়। কোম্পানিগুলে অবশ্য এই করের টাকা ধূমপায়ীদের কাছ থেকে উঠিয়ে থাকে। তারা বছরে বছরে বিড়ি-সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, সরকারের নির্দেশে সব কোম্পানিই এখন বিড়ি-সিগারেটের প্যাকেটের ওপর এমন বিভিন্ন ছবি ও স্লোগান ছাপায়, যেগুলো দেখে ও পড়ে মানুষের মনে ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে ভীতির সৃষ্টি হওয়ার কথা। কিছু কোম্পানি যক্ষ্মা, ক্যান্সার ও হাঁপানির মতো রোগের নামও উল্লেখ করে থাকে, যাতে ধূমপায়ীরা ভয় পেয়ে ধূমপান ছেড়ে দেয়। 

এভাবে বিশেষ করে বাংলাদেশে ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রচারণা অনেকাংশে সাফল্যের সঙ্গেই এগিয়ে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এত প্রচারণা এবং বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া নানামুখী উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশ ধূমপানের ক্ষতি থেকে মুক্তি পায়নি বরং পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে ধূমপায়ীদের সংখ্যা বরং বেড়ে চলেছে। উদ্বেগের কারণ হলো, ধূমপায়ীদের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এমন সব রোগ-ব্যাধিও, যেগুলোর জন্য ধূমপান সরাসরি দায়ী। এ সম্পর্কে সর্বশেষ কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান জানা গেছে গত বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে। দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ধূমপানের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ফুসফুসের পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে। বিশ্ব ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ লাংস ডিজিজ বা সিওপিডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওই সেমিনারে হৃদরোগ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফুসফুস ও হৃদরোগ শুধু নয়, ধূমপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকেও আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ধূমপায়ীদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে ক্যান্সারও। অর্থাৎ ধূমপান ক্যান্সারেরও একটি বড় কারণ। গবেষণার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা আরো জানিয়েছেন, অধূমপায়ীরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সারিয়ে তোলা সম্ভব। অনেকের ক্যান্সার ভালও হয়ে থাকে। কিন্তু সে রোগী যদি ধূমপায়ী হয় তাহলে তার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায়। ধূমপায়ী ক্যান্সার রোগীরা সাধারণত ধুকে ধুকে মারা যায়। সুস্থ হতে পারে না।

বুধবারের ওই সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, অন্য সকল দেশেও ধূমপায়ীদের এবং সিওপিডিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগীদের সংখ্যা আনুমানিক ৮০ লাখ হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এসব রোগে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের পাশাপাশি ধূলাবালি এবং কয়লা, কাঠ, জীবাশ্ম-জ্বালানি থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া, কলকারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সিওপিডি তথা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট, কাশি ও হাঁপানির মতো কষ্টদায়ক রোগের সৃষ্টি করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে সিওপিডি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ। আলোচ্য সেমিনারে অবশ্য আশার কথাও শুনিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ধূমপান ত্যাগ করলেই সিওপিডির কবল থেকে মুক্তি পাওয়া সহজে সম্ভব। একই সাথে ধূলাবালি ও কালো ধোঁয়াও এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ সিওপিডি তথা হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও উচ্চ রক্তচাপসহ জটিল বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্তÑএমন খবর নিঃসন্দেহে ভীতিকর ও আশংকাজনক। বুধবারের সেমিনারে বিশেজ্ঞরা বলেছেন এবং একথা সত্যও যে, ধূমপান এসব রোগের একটি প্রধান কারণ। সুতরাং ধূমপান বিরোধী প্রচারণা আরো জোরদার করা দরকার। ধূমপানের ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। যারা ধূমপায়ী তাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশকেও দূষণমুক্ত করা দরকার। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার প্রধান দায়িত্ব সরকারের বলে আমরা মনে করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ