শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ঝালকাঠিতে ভিত্তি বীজের দাবিতে কৃষকের হাহাকার

ঝালকাঠি: ধানের ভিত্তি বীজ সংগ্রহের জন্য বিএনডিসি অফিসের সামনে ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে -সংগ্রাম

মোঃ আতিকুর রহমান, ঝালকাঠি: ঝালকাঠিতে ব্রি-৪৭ ও বিনা-১০ বীজ ধান বিক্রয়ে বিএডিসি ও কৃষি বিভাগে সমন্বয়হীনতার কারণে কৃষকদের হাহাকার চলছে। দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা বিএডিসি অফিসে বীজ ধান ক্রয় করতে এসে চাহিদা মতো না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। এ বিষয়ে বিএডিসি কর্মকর্তা শারমিন জাহান দায়ি করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের। তিনি জানান, উপসহকারী কর্মকর্তারা বরাদ্দের দিকে খেয়াল না রেখে যে যার ইচ্ছে কৃষকদের স্লিপ বিতরণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষ্ণকাঠি কবিরাজ বাড়ি রোডস্থ খামার বাড়ির পাশেই বিএডিসি অফিস। সেখানে মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকেই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া ধান ক্রয়ের স্লিপ নিয়ে হাজির হয় কয়েক শ’ কৃষক। বিশেষ করে ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাভারামচন্দ্রপুর, বিনয়কাঠি, বাসন্ডা ইউনিয়ন ও নলছিটি উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক ব্রি-৪৭ ও বিনা-১০ জাতের ধান ক্রয়ের প্রয়োজনীয় টাকা ও স্লিপ হাতে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছেন। সকাল ১১ টা বাঝতেই জানানো হয় বীজ’র সংকট আছে। বর্তমানে (ওই সময়ে) ব্রি-৪৭ আছে ৪১০ কেজি এবং বিনা-১০ আছে ৫৯০ কেজি। ঘোষণা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কৃষকরা। বাহিরে ধানের দাবিতে হৈ চৈ করে ওঠেন তারা। ইতিমধ্যে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক চলে আসেন বিএডিসির বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে। তার সাথে সাথে কেন্দ্রের মধ্যে প্রবেশ করেন বাসন্ডা ইউপি সদস্য মোঃ শামীম আজাদ, ইদ্রিস ফরাজী ও শাখাওয়াত হোসেন। বীজ পাবার জন্য তারা উপ-পরিচালককে ফোনে ধরিয়ে দেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বাসন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মোবারেক হোসেন মল্লিককে। তিনি উপ-পরিচালকের কাছে বীজ পাবার জন্য সুপারিশ করেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দেয়া স্লিপ অনুযায়ী বিক্রি করতে হিমশিম করতে হচ্ছে বিক্রয়ে দায়িত্বরতদের। অভিযোগ রয়েছে ২৬ অক্টোবর বরাদ্দ পাওয়া বিএডিসি’র ব্রি-৪৭ ধান ব্ল্যাকে বিক্রি করায় প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হয়েছে। কৃষকরা জানান, আমরা অনেকেই দিনমজুরের কাজ করি। নিজস্ব জমি বা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। বীজ নিতে বেতাল (বিব্রতকর) অবস্থায় পড়েছি। দিতে পারলাম না বদলাও (দিনমজুরী), পাইলাম না ধানও। সবদিকেই লোসখান (লোকসান)। গাভারামচন্দ্রপুর থেকে আসা কৃষক রুস্তম আলী জানান, আমি গাভারামচন্দ্রপুর থেকে সকালে এসে দাড়িয়ে আছি। এখন সাড়ে ১১ টা বাঝে, ধান পাবো কি না তাও জানি না। না পেলে কষ্ট আর খরচ সবই বৃথা যাচ্ছে।
বিএডিসি’র সহকারী পরিচালক শারমিন জাহান জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে আমাদের বরাদ্দ আসছে ৫ টন বিনা-১০ ও ২৭১০ কেজি ব্রি-৪৭ জাতের ধান বীজ। যা সোমবার থেকে দেয়া শুরু হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাঁদের ব্লকের কৃষকদের ইচ্ছে মতো স্লিপ দিয়েছেন। আমাদের এখানে কত বরাদ্দ আছে, কিভাবে বিক্রি করবো তা তাঁরা খেয়াল না করেই ইচ্ছে মতো স্লিপ দেন। যার ফলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক শেখ মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান,  জেলা হিসেবে বরাদ্দ দেয়া হয়। বোরো মৌসূমে রাজাপুর ও কাঠালিয়ার চাষীরা তেমন আগ্রহী না। তাই ঝালকাঠি সদর ও নলছিটির চাষীদের চাহিদা একটু বেশি। উপজেলা, ইউনিয়ন অথবা ব্লক ভিত্তিক নির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকায় সাধ্যমতো সবাইকে বীজ দেয়ার চেষ্টা চলছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ