শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রশ্রয়ের আগুন

সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল সারা দেশে। কিন্তু আগুন কে লাগালো- এমন প্রশ্নে লক্ষ্য করা গিয়েছিল ব্লেম গেম। কিন্তু এখন সত্য স্পষ্ট হয়েছে। এমসি কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগকারী হিসেবে ২৯ জনকে চিহ্নিত করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। বাকিরাও সরকারি দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাদের সবার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যায় ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে কলেজের ঐতিহ্যবাহী ছাত্রাবাসে আগুন দেয়া হয়। এতে ৪২টি কক্ষ ভস্মীভূত হয়। ঘটনার পাঁচ বছর পর গত বুধবার (১৫/১১/১৭) সিলেটের মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদনের শুনানি শেষে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা দায়ী ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
পাঁচ বছর আগে ছাত্রাবাসটি পোড়ানোর ঘটনায় দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ছাত্রাবাসটি দেশে-বিদেশে ‘হেরিটেজ’ হিসেবে সমাদৃত হতো। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে ছাত্রলীগ। আর ছাত্রশিবির অভিযোগ করে, ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের তাড়াতে ছাত্রলীগের ছেলেরা সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়। ছাত্রাবাস যখন আগুনে পুড়ছিল তখন পাশ দিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করছিল। এই নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল প্রথম আলোয়। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই প্রথম আলোর প্রথম পাতায় ‘বিক্ষোভকারীরাই আগুন দিয়েছে ছাত্রাবাসে!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এতে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ঐতিহ্যবাহী একটি কলেজের হেরিটেজ খ্যাত ছাত্রাবাসে ছাত্রনেতারা আগুন দেয় কেমন করে? এমন হিংসা, বিদ্বেষ ও নিষ্ঠুরতা যারা অন্তরে পোষণ করে তারা ছাত্রনেতা হয় কেমন করে? অথচ বর্তমান সময়ে এমন বৈশিষ্ট্যের ছাত্ররাই ছাত্রনেতা হয়ে যায় সহজেই। আর সরকারি দলের সাথে যুক্ত থাকায় নানা প্রশ্রয়ে তারা হয়ে ওঠে বেপরোয়া। আলোচ্য ঘটনায় অগ্নিসংযোগকারী সনাক্ত করতে শাহপরান থানার পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দুই দফা তদন্তের পর সর্বশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধিকতর তদন্ত করে। পিবিআই তদন্ত শেষে গত ৩১ মে সন্দেহভাজন অগ্নিসংযোগকারীদের (ছাত্রলীগের নেতা) বিরুদ্ধে প্রমাণ না পেয়ে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের শুনানি শেষে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিচার বিভাগীয় তদন্তের ফলে প্রকৃত সত্য উদঘাটিত হলো এবং জানা গেল যে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী। অথচ পুলিশের প্রতিবেদনে তো ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছিল। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলে তো তারা প্রশ্রয় পেতো, হয়তো আরো বেপরোয়া হয়ে নানা অপরাধ করে বেড়াতো। বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিদিনই ছাত্রলীগ নেতাদের অপরাধের যে সব খবর পত্রিকায় মুদ্রিত হচ্ছে তার বড় কারণ কিন্তু এই প্রশ্রয়। দেশের পুলিশ, প্রশাসন এবং সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখলে ভাল হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ