শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চুয়াডাঙ্গায় শাসন করতে গিয়ে পুত্র হত্যার দায়ে মা জেলখানায়

এফ.এ আলমগীর, চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের ৮ বছরের শিশু রিয়াজ হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। অসাবধানতা বশতঃ মায়ের হাতেই তার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার মাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মা জোছনা খাতুনকে পুলিশের নিকট ছেলের মৃত্যুর কাহিনী স্বীকার করে।
জানা গেছে, তিওরবিলা গ্রামের কুঠিপাড়ার বাসিন্দা শাবান আলীর ৮ বছরের শিশুপুত্র রিয়াজ গত ২২ জুলাই সকালে নিজেদের ঘরের ভেতর মরে পড়েছিল। সে সময় পরিবার ও প্রতিবেশিরা দাবি করে খেলতে গিয়ে সে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
বিষয়টি রহস্যজনক মনে হওয়ায় আলমডাঙ্গা থানার এসআই একরামুল হক সে সময় লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা মর্গে প্রেরণ করেন। মৃত্যুর ৩ মাস পর গত ২২ অক্টোবর শিশুটির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়। রিপোর্টে চিকিৎসকগণ শিশুটিকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে। সম্প্রতি ময়নাতদন্ত রিপোর্টটি আলমডাঙ্গা থানায় পাঠানো হলে মামলার তদন্ত অফিসার এসআই একরামুল ১৯ নবেম্বর সকালে নিহত শিশুর বাপ-মাকে থানায় নিয়ে আসেন। মা জোছনা খাতুনকে (২৭) ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে অকপটে ঘটনার আদ্যপান্ত স্বীকার করে মা জোছনা খাতুন জানায়, তাদের ২ শিশুপুত্রের মধ্যে  রিয়াজ বড়, বয়স ৯ বছর আর  হিরাজ ছোট,তার বয়স মাত্র ৬ বছর। ঘটনার দিন ২২ জুলাই সকাল ৮টার দিকে দুই ভাই বিয়ারিং চাকার গাড়ি নিয়ে গোলযোগ করছিলো। বড় ছেলে রিয়াজ ছোট ছেলে হিরাজকে মারধর করেছিলো। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে জোছনা খাতুন বড় ছেলে রিয়াজকে হাত ধরে ঘরের ভেতর নিয়ে রেগে গিয়ে প্রথমে গালে চড় মারে। তারপর গলা টিপে ধরে। এ ঘটনার পর পরই রিয়াজের গলা দিয়ে ঘর ঘর শব্দ বের হতে থাকে। ভয় পেয়ে জোছনা খাতুন দ্রুত ছেলের গলা ছেড়ে দেয়। সে সময় রিয়াজ ঘরের মেঝেতে পড়ে যায়। পড়ার সাথে সাথে তার মৃত্যু ঘটে। এ সময় ঘরের মধ্যে বিদ্যুতের অনেক তার পড়ে ছিলো। তিনি ছেলে মরার পর চিৎকার করে কান্নাকাটি করলে প্রতিবেশিরা ছুটে আসলেও জোছনা খাতুন কাউকে আসল ঘটনা বলতে না পারায় প্রতিবেশিরা ধারণা করে নিয়েছিলো যে, সম্ভবত বিদ্যুত¯পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছে। নিজের হাতে সন্তানকে হত্যার কথা জোছনা খাতুন এতদিন কাউকে মুখ ফুটে বলেনি,এমনকি নিজের স্বামীকেও না। শুধু নিজে নিজে অসহায়ের মতো কেঁদেছে এবং শুধু ছোট ছেলের জন্যই বেঁচে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। রোববার বিকেলে নিহত শিশু রিয়াজের পিতা সাবান আলী বাদী হয়ে স্ত্রী জোছনা খাতুনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট মামলায় জোছনা খাতুনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত মা জোসনাকে ছেলে হত্যার দায়ে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ