বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি করে ঢাবিতে ভর্তি সিআইডির হাতে গ্রেফতার ৮

স্টাফ রিপোর্টার : ডিজিটাল জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হওয়ার অভিযোগে সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি দল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডির বিশেষ পুলিশ (এসএস) সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে প্রোক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় তাদের আটক করা হয়েছে।’ গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়োজিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিত দাস, রিফাত হোসাইন, আজিজুল হাকিম। মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগে গত ১৪ নবেম্বর রংপুর থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাভিদ আনজুম তনয় (২৪) কে গ্রেফতার করে সিআইডি। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই চক্রের সদস্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী আকাশকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আদালতে পাঠানোর পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের নাম জানায় তারা। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরাই জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল।’ জালিয়াতির প্রক্রিয়া উল্লেখ করে এসএস নজরুল বলেন, ‘তারা ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষার্থীদের উত্তর দিতো। এর আগে আমরা এমন ডিভাইস উদ্ধার করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এই চক্রটি তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ৪ থেকে ৭ লাখ টাকা নিতো বলে আমরা তথ্য প্রমাণ পেয়েছি।’ গ্রেফতার শিক্ষার্থী ও জালিয়াতি চক্রের রাজনৈতিক আদর্শের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের অপরাধী হিসেবে আমরা আটক করেছি। কেউ রাজনৈতিক দলের কোনও সদস্য কিনা সেটা বিবেচনা করিনি।’ গ্রেফতার শিক্ষার্থীরা কোন বিভাগের তা জেনে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলামের নেতৃত্বে এই চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, ‘এই ডিভাইস দিয়ে যেকোনও পরীক্ষাতেই জালিয়াতি করা সম্ভব। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও জালিয়াতি করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতে পারে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম একটি মামলা হয়েছে। আমরাও লিংক আপ খুঁজছি। তারা তাদের মতো করে তদন্ত করছে। তবে আমরাও কাজ করছি।’ সিআইডি কর্মকর্তারা চক্রটিকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানান, ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের দিন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অমর একুশে হল ও ড. শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রথম গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে জালিয়াতিচক্রের অন্যতম হোতা তনয়ের নাম উঠে আসে। এরপর গত ১লা নবেম্বর আগারগাঁও থেকে একই চক্রের সদস্য নাফিকে আটক করা হয়। এরপর ৩ নবেম্বর আটক করা হয় একই চক্রের সদস্য আনিনকে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো এই চক্রের আরও সদস্যদের ব্যাপারে সিআইডির কাছে তথ্য আসছে। এই চক্রে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দীন খান, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম এবং সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কুমার দাস। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ওই সাত শিক্ষার্থীর সবাই প্রথম বর্ষের। তিনি বলেন, এ চক্রের ‘হোতা’ এনামুল হক আকাশ ও নাবিদ আনজুম তনয়কে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্যেই মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ওই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। “এরা ২০১৬ সালের ভর্তি পরীক্ষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়,” বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, “নাবিদ আনজুম তনয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের ছাত্র। তবে আকাশ পড়াশোনা করেছে নবম শ্রেণি পর্যন্ত। তনয়ের কাজ ছিল এই প্রক্রিয়ায় ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থী যোগাড় করা। “আমরা প্রথমে এই চক্রের তিন মূল ব্যক্তিকে ধরেছিলাম। পরে আরও দুইজনকে ধরা হয়। এই পাঁচজনের দেওয়া তথ্য যাচাই করে গাজীপুর থেকে আকাশ এবং রংপুর থেকে তনয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতিতে সঙ্গে থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “এদের মধ্যে সাতজন জালিয়াতিতে সরাসরি যুক্ত। আজ যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা ওই সুবিধা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল। তাদেরকে সিআইডি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।” ভর্তি পরীক্ষায় গত কয়েক বছরের প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে, এসব চক্র পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মত দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইলের সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কানে থাকে অতি ক্ষুদ্র লিসেনিং কিট। এই ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেওয়া যায়। এ বছরও ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় এ ধরনের ডিভাইসসহ বেশ কয়েকজনকে পুলিশে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ