শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট ৩ ডিসেম্বরের আগে প্রকাশ হবে -আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। রাষ্ট্রপতির আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ গেজেট প্রকাশ করবো। আশা করছি ৩ ডিসেম্বরের আগে এই গেজেট প্রকাশ করতে পারবো। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের ৩৭তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান করা এবং অনুসন্ধানের জন্য তাকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হবে কি-না সেটা দুদকের বিষয় বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী। এস কে সিনহার বিরুদ্ধে যদি অনুসন্ধান বা তদন্ত চলে সেক্ষেত্রে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা জরুরি কি-না বা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে কি-না সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন কমিশন। দুদক কী করবে সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আমার কিছু বলার নেই। কার কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন কার কাছ থেকে নেবেন না সেটা দুদক দেখবে। আমি জানি যে, দুদকের একটি আলাদা আইনজীবী প্যানেল আছে। তারাই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারবে তাকে ফিরিয়ে আনা ও অনুসন্ধানের বিষয়ে। আমি মনে করি সেই প্যানেলটি দুদককে সঠিকভাবে উপদেশ দিতে পারবে। আনিসুল হক বলেন, অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট নিয়ে আমি এতটুকু বলতে পারি, গত বৃহস্পতিবার আমরা বসেছিলাম এবং এ ব্যাপারে যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে, তাতে আমাদের যে ক্ষুদ্র মতভেদ ছিল সেটা দূর হয়েছে এবং সমাধান হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে যে খসড়ায় একমত হয়েছি সেটার চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং গতকাল সেটা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে মুহূর্তে ফিরে আসবে, আমি আইন মন্ত্রণালয় থেকে সেটা মাহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। ‘বিচার বিভাগে দ্বৈতশাসন চলছে’ সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির এমন কথা নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই দেখবেন যখন এটা (বিধিমালার গেজেট) বের হবে...দ্বৈতশাসন আছে কি-না...এবং দেখেন, উনার এসব কথার প্রত্যেকটার জবাব আমি দিতে পারব না। তার কারণ হচ্ছে, আমি দেব না। আরেকটা কথা হচ্ছে যে, আপনারা দেখেছেন যে, কত দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়েছে, প্রধান বিচারপতি (প্রাক্তন) চলে যাওয়ার পরে। আমার মনে হয় বাকিটুকু আপনারা বুঝে নিতে পারবেন। এর আগে ১৬ নবেম্বর রাতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। ওইদিন বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতির আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা এ গেজেট প্রকাশ করবো। তিনি অনুমতি দিলে ৩ ডিসেম্বরের আগে গেজেট প্রকাশ করতে পারবো। এখন রাষ্ট্রপতির অনুমতির অপেক্ষা। চলতি মাসের ৫ নবেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চে গেজেট প্রকাশে সরকারের করা চার সপ্তাহের সময়ের আবেদনের শুনানিতে এটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন, আইনমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বসতে চান। শুনানি শেষে গেজেট প্রকাশে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। গত ৮ অক্টোবর সরকারের ৪ সপ্তাহের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ নবেম্বর পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময় বাড়ায় আপিল বিভাগ। ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল। ১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এজন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকি, ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নবেম্বর জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেন সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলা বিধিমালা তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে দেন। এই খসড়া নিয়ে সদ্য পদত্যাগ করা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে সরকারের মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। সরকারের করা খসড়া নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিলে এই নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে আইনমন্ত্রীর বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত হওয়ার আগে বিদায় নিয়েছেন বিচারপতি এস কে সিনহা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ